শিরোনাম
◈ আওয়ামী লীগের দোসররা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে: মধ্যরাতে সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (ভিডিও) ◈ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে মধ্যরাতে ঢাবিতে বিক্ষোভ (ভিডিও) ◈ মধ্যরাতে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আসছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ◈ 'আ. লীগের বিচার না করলে জনগণ আবার আন্দোলনে নামবে' (ভিডিও) ◈ বনশ্রীতে ব্যবসায়ীকে গুলি, ২০০ ভরি স্বর্ণ লুট (ভিডিও) ◈ দেশের সব মেডিকেল কলেজে সোমবার ‘একাডেমিক শাটডাউন’ ◈ এবার জামায়াতের আমীরের বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে শিবির ◈ জুনে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করবে নেপাল ◈ চলন্ত বাসে ডাকাতি-শ্লীলতাহানি; ভুক্তভোগী নারীর লোমহর্ষক বর্ণনা! ভিডিও ◈ মধুর ক্যান্টিনে শিবিরের উপস্থিতি মুক্তিযুদ্ধকে কলঙ্কিত করে: ছাত্রদল

প্রকাশিত : ০৫ মে, ২০২০, ০২:১৩ রাত
আপডেট : ০৫ মে, ২০২০, ০২:১৩ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ৮৮তম আত্মাহুতি দিবস আজ   

প্রিয়াঙ্কা : যে পিতা সন্তানের লাশ সনাক্ত করতে ভয় পায় আমি তাকে ঘৃণা করি, নবারুণ ভট্টাচার্যের এই পংক্তিকে মিথ্যা প্রমাণ করেছিলেন বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের পিতা।
দেশ মাতৃকার স্বাধীনতার জন্য প্রীতিলতা স্বেচ্ছায় আত্মাহুতি দানের পর দেহ সনাক্ত হলে তার পরিবারের ওপর নিদারুণ নির্যাতন চালায় ব্রিটিশরা। পিতা শোকে পাগল প্রায় হয়ে যান।
তখন তার মা ধাত্রীর কাজ করে সংসারের হাল ধরেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মেয়ের জন্য তিনি গর্ব করেছেন। আর পিতা প্রীতিলতার সহপাঠী কল্পনা দত্তকে দেখলেই ফেলতেন দীর্ঘশ্বাস।
নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার কেন নাহি দিবে অধিকার হে বিধাতা। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই আকুতির বাস্তবায়ন করেছিলেন। দেশের জন্য নিজ হাতে ভাগ্যকে গড়েছেন। যুদ্ধ করেছেন। আত্মহুতির মাধ্যমে জীবনের পরিসমাপ্তি টেনেছেন।
আজ বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ৮৮তম জীবন উৎসর্গ দিবস। এই দিনে তিনি পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের মাধ্যমে ব্রিটিশ রাজকে একটা প্রবল ঝাকুনি দিয়েছিলেন।
সেসময় গণ্যমান্য ইংরেজরা ইউরোপিয়ান ক্লাবে যেত। এটা ছিল তাদের আভিজাত্যের প্রতীক। তারা সাদা চামড়ার দেখে এই উপমহাদেশের বাদামী চামড়ার মানুষদের হেয় করতো। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বাইরে তাই লেখা থাকতো- 'ডগস এন্ড ইন্ডিয়ানস আর নট এলাউড'।
বিপ্লবী নেতা মাস্টার দা সূর্য্য সেনের সিদ্ধান্তে প্রথমে এই ক্লাব আক্রমণের কথা কল্পনা দত্তের থাকলেও পরে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার সফল হন ব্রিটিশদের ধরাশায়ী করতে।
চট্টগ্রামের পটিয়ার এ সন্তান ডা. খাস্তগীর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করে ভর্তি হন ঢাকার ইডেন কলেজে (তখন ইডেনে উচ্চ মাধ্যমিক অধ্যয়ন হতো)। এখানে পড়ার সময়ই তার সঙ্গে পরিচয় হয় ঢাকার বিপ্লবী লীলা নাগের (বিয়ের পর লীলা রায়, যিনি ঢাকায় প্রথম মেয়েদের স্কুল নারী শিক্ষা মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে নাম পরিবর্তন করে এটি শেরে বাংলা স্কুল করা হয়েছে)।
লীলা নাগ তখন নারী শিক্ষা প্রসারে দীপালী সঙ্ঘ পরিচালনা করতেন। গোপনে তারা বিপ্লবী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন। প্রীতিলতা এই সংগঠনে যোগ দিয়ে লীলা নাগের নেতৃত্বে লাঠিখেলা, ছোরাখেলাসহ অনেক ট্রেনিং নেন।
এরমধ্যে নারীদের মধ্যে প্রথম হয়ে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ২০ টাকা বৃত্তি পান। ফলে আরও ভালো করার আশায় ভর্তি হন কলকাতার বেথুন কলেজে।
কলকাতায় এসে তিনি প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পরেন স্বাধীনতা সংগ্রামের বিপ্লবে। বিপ্লবী রামকৃষ্ণ বিশ্বাস তখন আলীপুর জেলে। তথ্য আনার জন্য পাঠানো হয় প্রীতিলতাকে।
প্রীতিলতা ছদ্ম পরিচয় দিয়ে জেলে রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর রামকৃষ্ণ বিশ্বাসকে ১৯৩১ সালের ৪ আগস্ট ফাঁসী দিয়ে হত্যার আগ পর্যন্ত তাদের মধ্যে ৭/৮ মাসে দেখা হয় ৪০ বার।
ধারণা করা হয়, রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সঙ্গে এই যোগাযোগ প্রীতিলতার জীবনকে বিপ্লবের দিকে আরও এগিয়ে দেয়। বেথুন কলেজ থেকে ডিস্টিংশনে বি এ পাশ করার পর তিনি চট্টগ্রামের অপর্ণাচরণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দেন।
আর স্থির করেন মাস্টার দা সূর্য্য সেনের সঙ্গে দেখা করে বিপ্লবে সরাসরি অংশ নিবেন। তার দীর্ঘদিনের আশা বান্ধবী কল্পনা দত্তের মাধ্যমে পূরণের দিকে অগ্রসর হয়। ১৯৩২ এর মে মাসের শুরুর এক রাতে কল্পনা তাকে বিপ্লবী নির্মল সেনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
নির্মল সেন প্রথম পরিচয়ে প্রীতিলতার আত্মবিশ্বাস দেখে সন্তুষ্ট হলে মাস্টার দার সঙ্গে দেখা করানোর ব্যবস্থা করেন। এরপর সেপ্টেম্বরে মাস্টার দাই ঠিক করেন এবার সম্মুখ আক্রমণে নারীরা যাবে। কল্পনা দত্ত গ্রেপ্তার হয়ে জেলে থাকায় প্রীতিলতা মিশনে যান।
তখন ইউরোপীয় ক্লাবের পাশে ছিল পাঞ্জাবীদের কোয়ার্টার তাই
প্রীতিলতা পাঞ্জাবী ছেলেদের ছদ্মবেশ নেন।
মাথায় সাদা পাগড়ি, পাঞ্জাবি, মালকোচা দিয়ে ধুতি,পায়ে রবার সোলের জুতা পরে আক্রমণে  অংশ নেয়া প্রীতিলতার সাথী ছিলেন কালীকিংকর দে, বীরেশ্বর রায়, প্রফুল্ল দাস, শান্তি চক্রবর্তী পোষাক ছিল ধুতি আর শার্ট। লুঙ্গি আর শার্ট পরনে ছিলেন মহেন্দ্র চৌধুরী, সুশীল দে আর পান্না সেন।
সেদিন শনিবার থাকায় ক্লাবে ছিলেন চল্লিশজনের মতো। রাত ১১টার একটু আগে ভেতরে লাইট হঠাৎ বন্ধ করে প্রীতিলতা হুইসেল বাজিয়ে আক্রমণের নির্দেশ দিলে ৩ ভাগে বিভক্ত হয়ে বিপ্লবীরা ক্লাব আক্রমণ শুরু করে।
মুহূর্তে গুলি আর বোমার আঘাতে পুরো ক্লাব কেঁপে উঠে। কিছু ইংরেজ অফিসারের কাছে রিভলবার থাকায় তারা পাল্টা  আক্রমণ করলে প্রীতিলতার বামপাশে গুলি লাগে।
আক্রমণ শেষ হলে তিনি সবাইকে দ্রুত স্থান ত্যাগের নির্দেশ দেন। এরপর নিজে সঙ্গে থাকা পটাশিয়াম সায়নাইড খেয়ে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেন।
পরদিন ক্লাব থেকে অল্পদূরে পুলিশ তার মৃতদেহ উদ্ধার করে তল্লাশীর পর বিপ্লবী লিফলেট, অপারেশনের পরিকল্পনা, বিভলবারের গুলি, রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ছবি এবং একটা হুইসেল পাওয়া যায়।
ময়নাতদন্তের পর জানা যায়, উদ্ধার হওয়া দেহ নারীর। গুলির আঘাত তেমন গুরুতর ছিল না এবং পটাশিয়াম সায়ানাইড ছিল তাঁর মৃত্যুর কারণ।
পুলিশের দেয়া প্রতিবেদনে, আক্রমণে মিসেস সুলিভান নামে একজন নিহত এবং চারজন পুরুষ এবং সাত জন নারী আহত হয়।
এটা বলা হয় যে, মাস্টার দা আগে থেকেই প্রীতিলতাকে আত্মাহুতি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন প্রীতিলতা প্রথম শহীদ নারী বিপ্লবীর সম্মান গ্রহন করুন।
২১ বছরের চট্টলার এই বীর নারী তাই করে বিশ্বের বুকে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়