শাহীন খন্দকার : [২] তৎকালীন বৃটিশ শাসনামলে ব্যবসায়িদের উৎপাদিত টাঙ্গাইলের তাঁতিদের শাড়ীসহ কৃষকের আবাদি ফসল বেচা-কেনার লক্ষ্যে করোটিয়ার জমিদারদের ঐতিহ্যবাহি হাট এখনো জনসাধারণকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে কালের স্বাক্ষী হয়ে ! সম্প্রতি সেই হাটটি করোনা সংক্রমণের কারণে সারাদেশের ন্যয় লকডাউন হয়ে পড়ায় হাটটি এখন জনশূন্য হয়েছে টাংগাইল জেলা শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দক্ষিণে আর ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলের প্রবেশ মুখে করোটিয়ার হাট।
[৩] এই হাটের সুনাম রয়েছে দেশসহ বিশ্ববাসীর নিকট। হাটটি মুলত টাংগাইলের তাঁতের শাড়ীর জন্যই বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছে। এছাড়াও এখানে পাবনা, কালিহাতির বল্লা ও রামপুরা তাঁতিদেরসহ সমগ্র বাংলাদেশ থেকে উৎপাদিত তাঁতিদের কাপড়সহ কৃষকদের ফসল, গরু ছাগল, হাঁস-মুরগি বেচা-কেনা হয়। ব্যবসায়ী তারাকানাথ ঠাকুর জানান, এই হাটে এখন সব ধরনের শাড়ি, লুঙ্গিসহ পোশাক পাওয়া যায়। শাড়ির সাথে যোগ হয়েছে শাল ও থ্রি পিস ঔড়নার বিশাল বাজার করোটিয়া হাট। আরো পাবেন বেড কভার, কম্বল, শিশুসহ আদিবাসীদের দকশাড়ি এবং বিশেষ ওড়না টপস নানা রকম পোশাক।
[৪] এই হাট শতবর্ষ পার করেছে। হাট টির ফিরে দেখা ইতিহাস, করোটিয়ার জমিদার ওয়াজেদ আলী পন্নী এই হাট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তখন কলকাতায় হাঁট বসতো এবং আজকের বাংলাদেশের নাগরিকেরা নদী পথে সেই হাটে নিজেদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে যেতো। ওয়াজেদ আলী খান পন্নী ভাবলেন যদি এখানে হাট প্রতিষ্ঠা করা যায় তাহলে মানুষদের কষ্ট করে এত দূরে যেতে হবে না। জমিদারের ভাবনা থেকেই আজকের এই করোটিয়ার হাট বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
[৫] সপ্তাহের মঙ্গলবার বিকাল থেকে হাট শুরু হয়। বুধবার ও বৃহস্পতিবার চলে বেচাকেনা। এই তিন দিন হাটের রুপ তিন রকম। পাল্টে যায় দোকনদার ও পণ্য। চেনা জায়গা লাগবে অচেনা। ঘুরেঘুরে ক্লান্ত হয়ে যাবেন যদি না থাকে জানা। মঙ্গলবার ও বুধবার পোষাকের হাট মূলত। আর বৃহস্পতিবার হলো গরু ছাগলসহ কাঁচা বাজার,মাছ,মাংস ও অন্যান্য খাদ্য বেশি বিক্রি হয়। পোষাক একটু কম পাবেন এই দিন। নানা রকম হস্তশিল্প ও কামাড়দের তৈরি জিনিসপত্র পাবেন বৃহস্পতিবার। হাটের দুই পাশে কয়েকটি খাবারের দোকান আছে। দোকানগুলো দেখতে অতটা ভালো নয় কিন্তু রান্না করা খাবার মজার হয়। খাবারের দাম বেশি নয়। হাটের বেলের শরবত , জিলাপি, ও দই চিড়া কম দামে ভালো খাবার।
[৬] এখানে আরো পাবেন ঘি ও মিষ্টি। তবে এগুলো কেনার সময় দেখে কিনতে হবে। সস্তায় তাঁতের কাপড় কেনাকাটায় করোটিয়া হাটে মানুষের ঢল দেখে ভয় পাবার কিছু নেই। এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই ভালো। চুরি বা ছিনতাই হয় না। লক্ষ টাকা নিয়ে মানুষ ঘোরাফেরা করে স্বাচ্ছন্দে। দেশের অর্থনীতিতে এই হাটের রয়েছে বিশেষ অবদান। বিশিষ্ট কাপড় ব্যাবসায়ি আলহাজ্ব সেলিমুজ্জামান জানান এই হাট থেকে সরকার কে কোটি টাকা রাজস্ব দিয়ে থাকে হাটের ব্যবসায়ীরা সরকারী তহবিলে। তাই তিনি সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন এই হাটকে আরো নিরাপদ ও দূরদূরান্ত থেকে আগত ব্যাবসায়ীসহ ক্রেতাদের থাকা খাওয়ার সুব্যবস্থা করার লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্যন করেন। জমিদারদের গড়া ঐতিহ্যবাহি করোটিয়ার হাটটি শুরুতে শুধু বৃহস্পতিবার বসতো। যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে চাহিদা বাড়ছে তাই এখন তিন দিন তিন ভাগে হাট বসছে বলে ব্যাসায়িরা জানালেন। তবে করোনা কভিড-১৯ লকডাউন এর কারনে কোটি কোটি টাকার লোক শানের মুখে ব্যবসায়িরা বলে জানালেন ছোট বড় সকল ব্যাবসায়ি। ব্যাবসিয়রা জানালেন, করোনা ভাইরাসের কারণে ঐতিহ্যবাহী করোটিয়ার হাট লক ডাউন এ থাকায় অনেক ব্যাবসায়ি লোন করে ব্যাবসা করে আসছিল। এক দিকে বেচা-কেনা বন্ধ, কিন্ত বিভিন্ন এনজিও এবং ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে লোন পরিশোধ করার দেনা দিন দিন চক্রহারে বেড়েই চলেছে। তেমনি মহাজনের কাপড় পড়ে আছে বাজারে। প্রতিটি রাত প্রতিমুর্হুত আতঙ্কের মধ্যে ডাকাতির।
আপনার মতামত লিখুন :