আশরাফ আহমেদ, হোসেনপুর প্রতিনিধি : [২] ব্রিটিশ শাসন আমলের নীল চাষের নির্মম ইতিহাস বিজড়িত ঐতিহাসিক নীলকুঠি বাড়ির ধবংসাবশেষ আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।তবে ওই নীলকুঠি কার্যালয়টি এখন সংস্কারের অভাবে বিলুপ্তির পথে।
[৩] ওই নীলকুঠিটি সংস্কারের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোরালো দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
[৪] সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলা সিদলা ইউনিয়নের চৌদার (সাহেবের গাঁও) এলাকায় নীলকরদের বাড়ি এবং টান সিদলা গ্রামে নীলকুঠির কার্যালয় ও পুরাতন পুকুরটি নীলকর সাহেবদের নানা স্মৃতি বহন করে চলেছে। বাংলার তদানীন্তন সুলতান আলা উদ্দিন হোসেন শাহের নামানুসারে হোসেনপুর পরগনার ব্রহ্মপুত্র নদের পুর্ব তীরে গড়ে উঠেছিল নীলকুঠি। আনুমানিক ১৭৩০ থেকে ১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নীলকুঠি প্রতিষ্ঠা করে জোরপূর্বক কৃষকের দ্বারা নীলের চাষ শুরু করে। ওই সময়ে এই অঞ্চল থেকে ইংল্যান্ডে প্রচুর নীল রপ্তানি করা হতো। এই অঞ্চলের কৃষকদের উপর অত্যাচার, নিপীড়ন, জোরপূর্বক নীলচাষে বাধ্য করে। ইংরেজরা নীলের ব্যবসায় লাভ করলেও পরে ব্যবসায় ধস নেমে আসে। নীলকর ওয়াইজস্টিফেন্স ছিলেন এর মালিক ও ব্যবসায়ী। পুরনো ঢাকার আরমানিটোলার আর্মানিয়ান ইংরেজ খ্রিষ্টান আর্মোনিয়ান আরাতুন দুই কন্যা ও তার আত্বীয়-স্বজনদের নিয়েই হোসেনপুরে নীলকুঠির ব্যবসা চালু করেন।
[৫] জানা যায়, ইংরেজ আমলে ফ্রান্সের অধিবাসী মাইকেল প্যাটেল হোসেনপুর উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের চৌদার (সাহেবের গাঁও) এলাকায় কারুকার্যময় একটি বাড়ি তৈরি করেন। এই বাড়িতে অবস্থান করেই এলেনবেথ হেনসন জমিদার আমলে এ অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ করতেন। জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পর এ বাড়িটি কিশোরগঞ্জ জেলার সাবেক সমবায় অফিসার মরহুম উম্মেদ আলী খরিদ সূত্রে মালিকানা লাভ করেন। বাড়িটি দেখতে খুবই সুন্দর। বর্তমান বাড়িটি আমেনা মঞ্জিল হিসেবে পরিচিত। টান সিদলা বাবুর বাজার এলাকায় নীলকর কার্যালয়ের ধংসাবশেষ ও কার্যালয়ের পূর্ব দিকে সে আমলের একটি পুকুর রয়েছে।
[৬] উপজেলার আড়াইবাড়িয়া ইউনিয়নের দ্বীপেশ্বর গ্রামের প্রবীণ টুনু মুন্সি (৯০), নামা সিদলাগ্রামের স্কুল শিক্ষক বিল্লাল মিয়া, সাহেবের চর গ্রামের কেরামত আলীসহ প্রবীণ বৃদ্ধ অনেকেই জানান, ওই ব্রিটিশ আমলে নীলকর শাসকদের ভয়ে আমরা ফসলি জমিতে নীল চাষ করতে বাধ্য হয়েছি। তবে যেসব চাষীরা নীল চাষ করেনি ওই শাসকদের দ্বারা নির্যাতিত ও অত্যাচারিত হয়েছে বলেও জানান তারা।
[৭] উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন জানান, ইংরেজদের বর্বরোচিত জুলুম-নির্যাতনের ইতিহাসকে ভবিষ্যতের প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য ওই নীলকুঠি সংস্কারণ অতী প্রয়োজন।
[৮] এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহিউদ্দিন জানান, উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। তবেওই নীল কুঠি পরিদর্শন করে সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি । সম্পাদনা: জেরিন আহমেদ
আপনার মতামত লিখুন :