শিরোনাম
◈ পাকিস্তান থেকে কী পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ আর কী রপ্তানি করে? ◈ ২১ নভেম্বর রাজধানীর যেসব সড়ক পরিহার করবেন ◈ রমজানের ১১ নিত্যপণ্য আমদানিতে এলসি মার্জিন শিথিল ◈ শুধুমাত্র নির্বাচনের জন্য ২ হাজার মানুষ জীবন দেয়নি: সারজিস ◈ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয় ঝাড়খন্ডের মাদ্রাসাগুলোতে : জেপি নাড্ডা ◈ আবহাওয়া অফিসের নতুন বার্তা শীত ও কুয়াশা নিয়ে  ◈ ঢাবি ছাত্রদলের ৬ নেতা পদ হারালেন চার দিনের মাথায়, নেপথ্যে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ◈ উর্দু নয়, পাকিস্তানে সবচেয়ে বেশি কথা হয় যে ভাষায় ◈ কুয়াশায় বিঘ্ন হলে শাহজালালের ফ্লাইট নামবে চট্টগ্রাম ও সিলেটে ◈ সৌদি আরবে গত এক সপ্তাহে যে কারনে ২১ হাজার অভিবাসী গ্রেফতার

প্রকাশিত : ২৯ এপ্রিল, ২০২০, ১১:১৬ দুপুর
আপডেট : ২৯ এপ্রিল, ২০২০, ১১:১৬ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সালেহ্ বিপ্লব : ২৯ এপ্রিল ১৯৯১, সেই ভয়াল রাতের স্মৃতি

সালেহ্ বিপ্লব : সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে টিপ টিপ বৃষ্টি। ঝড়ো বাতাস আভাস দিচ্ছে, আসছে একটা কিছু। আমরা তখন চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলা সদরে। ১৪/১৫ জন। বাজার গবেষণা করে, এমন একটা প্রতিষ্ঠানের খেপ-এ গেছি। এক রাত থাকতেই হবে, কাজ না ফুরালে দুই রাত।
সকালে রাউজান পৌঁছেই থাকার জায়গা চেয়ে ইউএনও’র শরণাপন্ন হয়েছিলেন দলনেতা নাজমুস সাদেক।

আগে থেকে না জানালে সরকারি ডাকবাংলো পাওয়া যায় না। ইউএনও সাহেব ডাকবাংলোর পাশে দোতলা একটা স্কুলে রাতযাপনের অনুমতি দিলেন। কাঠের দোতলা, টিন শেড। এতগুলো ইয়াং ম্যান ! জরুরী কোন পরিস্থিতি না থাকা সত্ত্বেও স্কুলের বেঞ্চে ঘুমাতে হবে! নাজমুস সাদেক ভাইকে বললাম, বস আমি একবার চেষ্টা করব? তিনি বিরস বদনে সম্মতি দিলেন। আল্লাহর নাম নিয়ে ঢুকে পড়লাম সমাজসেবা অফিসারের চেম্বারে।

সালাম দিয়ে জানালাম, আমার বড় মামা এ এফ এম আমিনুল ইসলাম। সমাজসেবার উপপরিচালক, চট্টগ্রাম। শুনে আদর করে বসালেন, চা এলো।
তারপর জানতে চাইলেন, ভাগ্নের সমস্যা কী? জানালাম। তিনি একছুটে বের হয়ে গেলেন, ঢুকলেন ইউএনও’র রুমে।আবার একছুটে এলেন, কয়েক মিনিটের মধ্যে।

জানালেন, কোন সরকারি কর্মকর্তা সফরে এলে সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দিতে হবে (প্রচলিত নিয়ম), এই শর্তে ডাকবাংলো আগামী দু’দিন তোমাদের।
দুই রুমের ব্রিটিশ কেতার ডাকবাংলো। সামনে মাঠ। মালামাল রেখে ফ্রেশ হলাম। সারাদিন কাটলো গ্রাম থেকে গ্রামে।  ফিরলাম শেষ বিকেলে।

সন্ধা হতে না হতেই টিপ টিপ বৃষ্টি। নেতা বললেন, তাড়াতাড়ি খেয়ে রুমে ঢুকে পরাই মঙ্গল। দেশী মুরগীর ঝাল তরকারি দিয়ে পেট পুরে খেলাম।
ঘুমিয়ে পড়লাম খুব তাড়াতাড়িই।

ঘুম ভাঙ্গল অপার্থিব শব্দে। ঝড় হচ্ছে, বেশ বুঝলাম। কিন্তু এ কেমন ঝড়? দরজার নিচ দিয়ে পানি ঢুকে ফ্লোর একাকার। ভেন্টিলেটর আর বিভিন্ন ফাঁক ফোকর দিয়ে দেখছি লাল আগুনের গোলা যাচ্ছে এদিক থেকে ওদিক। বিচিত্র শব্দের সাথে যোগ হলো, দরজায় আঘাত আর মানুষের ভয়ার্ত আর্তনাদ। রাউজানে কোন কিছুর বিশ্বাস নেই, ঝড়ের মাঝেও সবার গলা কেটে টাকাপয়সা নিয়ে যেতে পারে।

কিন্তু আমরা ভয়কে জয় করে দরজা খুললাম। এক মিনিটেরও কম সময়ে ঘরে ঢুকে পড়ল ১০ জন মানুষ। ওই সময়টা দরজায় দাঁড়িয়ে দেখলাম, আগুনের গোলা ছুটছে আকাশে। ১০ জন ঘুমিয়ে ছিল বারান্দায়, ফসল কাটা শ্রমিক সবাই। ঝড়ে টিনের চাল উড়ে আসছে, দুজনের পায়ে লেগে রক্তারক্তি কাণ্ড। দরজা খুলেছি বলে বার বার কৃতজ্ঞতা জানালো।

সবার ঘুম শেষ। মাটি থেকে ভেজা বিছানা আর তোলার সময় নেই, বিছানায় গাদাগাদি করে বসে থেকে ঝড়ের শব্দ শুনতে লাগলাম। দলামোচড়া হয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নেই। ঘুম ভাঙ্গল শীত শীত উজ্জ্বল ভোরে।

ডাকবাংলোর মাঠে পা ফেলা যাচ্ছে না। আম আর কাঁঠালে ঢেকে গেছে ঘাস। তাকালাম বামে। সেই স্কুলটা মিশে গেছে মাটির সাথে।সবাই দেখলেন। বস জড়িয়ে ধরলেন আমাকে। কারো মুখে কোন শব্দ নেই। মিশন বাতিল করে রওয়ানা করলাম চট্টগ্রাম শহরের দিকে।

ফেরার পথে কতো ঝক্কি। টেম্পু নিয়ে রওয়ানা করলাম। পথে পড়ে আছে গাছ। আমাদের আগে আর কেউ যায়নি এ পথে। স্থানীয় কিছু মানুষ তৈরি ছিলেন কুড়াল হাতে। বকশিসের বিনিময়ে গাছ কাটিয়ে শহরে পৌঁছতে অনেক সময় লাগলো। বৌদ্ধমন্দির সড়কে অস্থায়ী অফিসে পৌঁছে ফাইলপত্র জমা দিলাম। তুমুল টেনশন বাসার কথা ভেবে। একটা রিকশা নিয়ে ছুটলাম আমবাগান রেলওয়ে কলোনির দিকে। বাসায় গিয়ে দেখি, আল্লাহর রহমতে ক্ষয়ক্ষতি কিছু হয়নি। শুধু বাসার পেছনের দরজাটা ভেঙ্গে পড়েছে।

কলোনির যেসব বাসা টিনশেডের, সেগুলোর টিন উড়ে গেছে। তবে কেউ হতাহত হয়নি। তবে ঝড়ে যে কী বিশাল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা টের পেলাম পরদিন সাগরপারের এলাকাগুলোয় গিয়ে। অনেক দিন ধরে আমরা ত্রাণ তৎপরতা চালিয়েছি সেসব এলাকায়। সেসব দিনও জীবনে যুক্ত করেছে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা।

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, আমাদের নতুন সময়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়