নয়া দিগন্ত : [২] সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে এক মাস পার করলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। করোনা মহামারীর কারণে এই এক মাস বেগম জিয়া একান্তেই সময় কাটিয়েছেন। নেতা-কর্মীদের সাক্ষাৎ দেননি। আকাক্সক্ষা থাকলেও সিনিয়র বহু নেতাও এখনো তার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে পারেননি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বেগম জিয়া নেতা-কর্মীদের সামনে আসবেন না বলেই দলীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, রোজার পরে তিনি স্বল্প পরিসরে হলেও দলীয় কর্মকাণ্ডে মনোযোগ দেবেন। তখন নেতা-কর্মীদের সাথে দেখাও দিতে পারেন তিনি।
[৩] গত ২৫ মার্চ নির্বাহী আদেশে ৬ মাস সাজা স্থগিত রেখে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয় সরকার। মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় উঠেন অসুস্থ খালেদা জিয়া। বাসার দোতলায় চিকিৎসকদের পরামর্শক্রমে তিনি ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। ওই ১৪দিন শেষ হওয়ার পর থেকে এখনো তিনি কোয়ারেন্টিনেই আছেন। লন্ডন থেকে বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা: জোবাইদা রহমান তার চিকিৎসার সব কিছু তত্ত্বাবধায়ন করছেন।
[৪] ৭৫ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে ভোগছেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সামাজিক দূরত্ব মেনে তিনি বাসায় থাকবেন। তবে তিনি দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, বিশেষ করে করোনাভাইরাস মহামারীতে বেশ উদ্বিগ্ন।
[৫] জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, অন্য কোনো কারণ নয়, সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির চেয়ারপারসন কারো সঙ্গেই দেখা করবেন না। শুধু ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাচ্ছেন। আমি ও আমার ভাইয়ের বউ (শামীম ইস্কান্দারের স্ত্রী) নিয়মিত তাকে দেখতে যাচ্ছি। আর কেউ আসছে না। দলের নেতাকর্মী এমনকি অন্য আত্মীয়স্বজনও যাচ্ছেন না। ঈদের আগে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তার সাক্ষাতের সম্ভাবনা নেই।
[৬] সেলিমা ইসলাম বলেন, কোয়ারেন্টিনে থাকা ৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়ার পরিচর্যার জন্য সার্বক্ষণিক একজন নার্স ও গৃহকর্মী ফাতেমা সঙ্গেই থাকেন।
জানা গেছে, স্বজনদের মধ্যে শুধু সেলিমা ইসলাম সন্ধ্যায় ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা সকালের দিকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সময় কাটান। এ ছাড়া নিয়মিত বিকেলে আসেন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্যানেলের সদস্য ডা: মামুন।
[৭] কোয়ারেন্টিনে থেকেই রোজা পালন করবেন খালেদা জিয়া : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল জানিয়েছেন, ম্যাডাম এখন কোয়ারেন্টিনেই আছেন। যেহেতু গোটা জাতি শাটডাউনে আছে, চলাচল এবং সব কিছুই বন্ধ। উনি (ম্যাডাম) উনার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করে চিকিৎসাধীন আছেন এবং এভাবে কোয়ারেন্টিনে থেকে তিনি রমজানের রোজা পালন করবেন। রমজান উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের মুসলিম উম্মাহকে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব।
[৮] খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, খালেদা জিয়া প্রায় নিয়মিতই পুত্রবধূদ্বয়, নাতনীদের সাথে টেলিফোনে কথা বলেন। কুরআন তিলাওয়াত, তাজবিহ পাঠসহ বই পড়ে সময় কাটাচ্ছেন।
[৯] বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিমের সদস্য অধ্যাপক এ জে এম জাহিদ হোসেন বলেন, ম্যাডামের শারীরিক অসুস্থতাটা আগের মতোই আছে। হাত-পায়ের ব্যথা আগের মতোই আছে। আজকে হয়ত একটু ভালো থাকে আবার কালকে প্রচণ্ড ব্যথা থাকে। ব্যথা উপশমের জন্য থ্যারাপি দেয়া হচ্ছে। উনার ডায়াবেটিস বেশ অনিয়ন্ত্রিত। তিনি জানান, ম্যাডাম বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি ও পরবর্তী অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন। গুলশানের ‘ফিরোজা’র গেটে পাহারারত নিরাপত্তা কর্মীরা জানান, ম্যাডামের বাসায় প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত। শুধু চিকিৎসকের টিমের সদস্য ও কয়েকজন নিকটআত্মীয়স্বজনের বাসায় প্রবেশাধিকার রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :