মহসীন কবির: শাহাদাত হোসেন বেসরকারি চ্যানেল যমুনা টেলিভিশনের একজন সিনিয়র রিপোর্টার। গত মাসের একদম শেষের দিকে একটু জ্বর উঠেছিল। খুব সামান্যই তাপমাত্রা ছিল। এরপর একটি প্যারাসিটামল খাওয়ার পর এক রাতেই জ্বর সেরে গিয়েছিল। এরপর তিনি পেশাগত দায়িত্বও পালন করেছেন। বিবিসি বাংলা
কিন্তু বাড়িতে তার শ্বশুর কয়েকদিনের মধ্যে ব্যাপক জ্বর ও মাথাব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়ার পর ভাবলেন নিজেও একটু পরীক্ষা করিয়ে নেবেন।
দেখা গেল তার কোন উপসর্গ না থাকলেও তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এরপর তার শ্বশুর সহ পুরো পরিবারের সবাই আক্রান্ত হয়েছেন। শাহাদাত হোসেন বলছেন, হাসপাতালে ভর্তির পর তার মনে হয়েছে জীবনে এতটা অসহায় কোনদিন বোধ করেননি।
তিনি বলছেন, করোনাভাইরাস 'পজিটিভ' এটি জানার পর শুরুতে তিনি খুব আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিলেন। কী করবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না।
সহকর্মীদের সহায়তায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তার ভাষায়, "হাসপাতালে চরম প্রতিকূলতার মধ্যে নয়দিন পার করেছি আমরা। ওখানে মনে হয়েছি রোগীরা একেবারে অভিভাবকহীন। আমি খুবই অসহায় বোধ করেছি।"
"দেখতাম চোখের সামনে রোগীরা মারা যাচ্ছে। লাশ ওয়ার্ডেই পড়ে থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা", তিনি বলেন।
''যেহেতু নির্দিষ্ট ব্যক্তি লাশ দাফন করেন হয়তো তাদের সংখ্যা কম কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, সেকারণে হয়তোবা। কিন্তু এতে একজন অসুস্থ রোগী যে এমনিতেই ভয়ে আছে তার মনের অবস্থা কী হয়?" তিনি বলেন।
শাহাদাত হোসেন বলছেন, হাসপাতালে তিনি খুবই অসহায় বোধ করেছেন, তিনি হাসপাতালে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলছিলেন ২৪ ঘণ্টায় একজন চিকিৎসক আসতেন। অনেক দূর থেকে কথা বলে চলে যেতেন।
নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে একটি মানুষকেও পাওয়া যায় না। এরকমও হয়েছে যে নার্স আসেনি বলে একবার সকালের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়া হয়নি। চিকিৎসক দিনে একবারও আসেনি সেটিও হয়েছে।
তিনি বলছেন, "কিন্তু একজন চিকিৎসকের কথায় আমার ভরসা পাওয়ার কথা। তার কথায় আমার মনোবল বেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এখানে মানসিক সাপোর্ট দেয়ার কেউ ছিল না।" অন্যান্য সুবিধাদির বর্ণনা দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, তিনি যে ওয়ার্ডে ছিলেন সেখানে একশো মতো রোগী ছিল। এতজন রোগীর জন্য মাত্র তিনটি টয়লেট, তিনটি গোসলখানা। শাহাদাত হোসেন এক পর্যায়ে রোগী বাড়তে শুরু করার পর চিকিৎসকদের অনুরোধ করে তার শ্বশুরসহ বাড়ি চলে আসেন।
দেশে সবচেয়ে প্রথম যে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সাংবাদিক শনাক্ত হয়েছিলেন সেটি ছিল ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের। সেখানে ভিডিওগ্রাফার হিসেবে কর্মরত আশিকুর রহমান রাজু আক্রান্তদের একজন।
তিনি বলছেন, শনাক্ত হওয়ার পর যখন কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে যান শুরুতেই ঘাবড়ে গিয়েছিলেন কারণ সবাই পিপিই পরে অনেক দূরে দাড়িয়ে আছেন।
আপনার মতামত লিখুন :