মাজহারুল ইসলাম : [২] তারা এমন ধরণের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন যাতে বয়সের সঙ্গে সৃষ্টি হওয়া ক্ষীণদৃষ্টি আবার পূর্ণ দৃষ্টি হিসেবে ফিরে পাওয়া সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের সেন্টার ফর রেটিনা ইনোভেশনের গবেষকেরা ম্যাকুলার ডিজেনারেশন নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে যুগান্তকারী এ আবিষ্কার করেছেন। ওয়ার্ল্ড অ্যাট লার্জ নিউজের এক বিশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকের চোখের দৃষ্টি কমতে শুরু করে। অনেক মানুষ একটা পর্যায়ে পুরোপুরি দৃষ্টিহীন হয়ে পড়েন। এ ক্ষীণদৃষ্টি ও দৃষ্টিহীনদের জন্য ওই উদ্ভাবন বয়ে আনবে আসল প্রাপ্তি। পৃথিবী দেখবেন তারা নতুন করে। গবেষকেরা ইতিমধ্যে ইঁদুরের ওপর তাদের উদ্ভাবিত পদ্ধতি প্রয়োগ করে সফল হয়েছেন। মার্কিন বিজ্ঞানীরা এ ক্ষেত্রে স্টেম সেল বা ভ্রূণ কোষের বিকল্প হিসেবে ত্বকের বিশেষ কোষ ব্যবহার করেছেন। তাই এতে নৈতিকতার কোনো প্রশ্নও উঠবে না। এ ছাড়া চোখ প্রতিস্থাপনের পদ্ধতিটি হবে সাশ্রয়ী। যমুনাটিভি
[৩] আগামী ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে তাদের উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে লাখো মানুষ দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) কাছ থেকে পদ্ধতিটি মানুষের ক্ষেত্রে পরীক্ষার অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। বয়সের সঙ্গে সম্পর্কিত ম্যাকুলার অবক্ষয় (ম্যাকুলার ডিজেনারেশন বা এমডি) সমস্যায় ভোগেন লাখো মানুষ। চোখের ম্যাকুলার ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাওয়াকে ম্যাকুলার ডিজেনারেশন বলা হয়। ম্যাকুলা হলো চোখের পেছনে রেটিনার একটা ছোট্ট জায়গা যা দিয়ে আমরা সূক্ষ্ম জিনিসও পরিষ্কার দেখতে পাই। তাঁদের দাবি, তারা যে পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করেছেন তা ক্ষীণ দৃষ্টি সমস্যা দূর করে চক্ষুবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে।
[৪] গবেষণা সংক্রান্ত নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ‘নেচার’ সাময়িকীতে। তাতে গবেষকরা বলেছেন, তাঁরা স্টেম সেল বা ভ্রূণ কোষের বিকল্প হিসেবে ত্বকের ফাইব্রোব্লাস্ট কোষ থেকে ফার্মাকোলজিক্যাল-রূপান্তর প্রক্রিয়ায় প্রতিস্থাপনযোগ্য ফটোরিসেপ্টর তৈরি করেছেন। এটি এমন এশটি প্রক্রিয়া যাতে নৈতিক ও আইনি বিধিনিষেধ নেই। এ ছাড়া প্রক্রিয়াটি দ্রুত এবং সাশ্রয়ী। তাদের ম্যাকুলার ডিজেনারেশন গবেষণাটি সামগ্রিকভাবে বয়স বাড়ানোর বিষয়টি বোঝার ক্ষেত্রে দারুণ ফলপ্রদ হয়েছে। গবেষণা নিবন্ধের লেখক সাই চাভালা বলেছেন, জীবনযাপনের প্রক্রিয়ায় সময়ের সঙ্গে ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। যেমন কোনো সিডিতে যদি দাগ পড়ে তবে তা লেজারের জন্য তথ্য পড়া কঠিন করে দেয়, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত ডিএনএর ক্ষেত্রে আরএনএ একই সমস্যায় পড়ে। ফটোরিসেপ্টর হলো চোখের নিউরন যা আলোর প্রতিক্রিয়াতে ভিজ্যুয়াল সার্কিটকে ঘুরিয়ে দেয় যা আমাদের দৃষ্টি রাখতে সক্ষম করে। এ ফটোরিসেপ্টর নষ্ট হলে ম্যাকুলার ডিজেনারেশন বা চোখের অন্য রোগ হয় যাতে অপরিবর্তনীয় অন্ধত্ব সৃষ্টি করে।
[৫] নতুন গবেষণায় ফাইব্রোব্লাস্টস কোষকে রাসায়নিকভাবে কাজে লাগিয়ে ফোটোরিসেপ্টারের মতো কোষ তৈরি করা গেছে। এ কোষ ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা করে দৃষ্টি ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। গবেষক চাভালা বলেন, স্টেম সেল বা ভ্রূণ কোষভিত্তিক কৌশলগুলো অত্যন্ত জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। তাঁরা যেটা উদ্ভাবন করেছেন সেটি যুগান্তকারী, কারণ এতে খুব কম সময় লাগে। তাদের রূপান্তরিত ফটোরিসেপ্টর ১৪টি অন্ধ ইঁদুরের শরীরে প্রতিস্থাপন করে দৃষ্টি ফেরানোর পরীক্ষা করা হয়। ওই অন্ধ ইঁদুরগুলোর চোখে জ্যোতি আসে! তবে এই উদ্ভাবন মানুষের জন্য কতটা কাজে লাগবে তা দেখতে অন্তত দুই বছর অপেক্ষা করতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :