আবুল বাশার নূরু : [২] লকডাউনের একদম গোড়ার দিকেই জেলার বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য করোনার হেল্পলাইন চালু করেছিল ভারতের পশ্চমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসন। উদ্দেশ্য ছিল করোনা নিয়ে জেলার বাসিন্দারা কোনও সমস্যায় পড়লে, তাঁদের পাশে দাঁড়ানো। সেই উদ্দেশ্য তাঁদের সফল হয়েছে ঠিকই, তবে সব ক্ষেত্রেই যে কেবল দরকারি ফোন আসছে তা না, অনেক সময়ই নানা অদ্ভূতুড়ে ফোনের দাপটে আতান্তরে পড়তে হচ্ছে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের। হেল্পলাইনে ফোন করে বাচ্চা কান্নার শব্দ শোনানো থেকে শুরু করে প্রেম নিবেদন, ভেঙে যাওয়া প্রেমের সম্পর্ক জুড়ে দেওয়ার আবেদন থেকে শুরু করে বাড়ি ভাড়া খুঁজে দেওয়ার মতো কথাও বলছেন অনেকে। আবার কেউ কেউ বাড়িতে রাত পাহারার ব্যবস্থা করার আবদার জানাচ্ছেন তো কারও স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে, তা মিটিয়ে দিতে হবে।
[৩]দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাজুড়ে সরকারি ভাবে করোনা নিয়ে যে সমস্ত হেল্পলাইন খোলা হয়েছে সেগুলিতে এমন উড়ো ফোন আসতে থাকায় কর্তৃপক্ষের মাথায় হাত পড়েছে। এই সমস্ত আবদার বা পরিষেবা পাওয়ার দাবি জানানো উড়ো ফোন ধরতে ধরতে বিরক্ত হয়ে পড়ছেন অনেক সময়। কিন্তু ঠান্ডা মাথায় সেসব সামলাচ্ছেন তারা। হেল্পলাইনের মতো এমন গুরত্বপূর্ণ নম্বরে প্রতিনিয়ত এই ধরনের কল এলেও বিরক্তি তো দূর, ঠান্ডা মাথায় সেসব সামলাতে হচ্ছে। তবে কেবল যে এসব উড়ো ফোন আসছে তা নয়। অধিকাংশ ফোনই আসছে প্রয়োজনের। ইতিমধ্যে জেলার প্রায় কয়েক হাজার বাসিন্দা বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে জেলা প্রশাসনের সাহায্য পেয়েছেন। অনেকে ভিনরাজ্যে আটকে থেকে খাবার না পেয়ে জেলা প্রশাসনের হেল্পলাইনে ফোন করেছেন। জেলা প্রশাসনের তরফে সেসব এলাকার প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই উদ্যোগ নিয়ে জেলা প্রশাসনকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ভিনরাজ্যে আটকে থাকা ব্যক্তিরা।
[৪], করোনা মোকাবিলায় সরকারের তরফে দেওয়া হেল্পলাইন নম্বরে মানুষের প্রকৃত প্রয়োজনের যেমন ফোন আসছে, তেমনি লকডাউনে ঘরে বসে রসিকতা করতেও অনেকে অনাবশ্যক ফোন করছন। ফোন করে তাঁরা নানা ধরনের আবদার করছেন। এই সমস্যাসঙ্কুল সময় এক শ্রেণীর মানুষ কিভাবে একেবারেই দ্বায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো এরকম উড়ো ফোন করে প্রশাসনের কাজের সময় নষ্ট করছেন, তা বুঝে উঠতে পারছেন না সরকারি কর্মীরা। মূলত করোনার মোকাবিলায় অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করার জন্যই এই হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে প্রশাসনের তরফে। তাতে অনেক অসহায় মানুষের ফোন এসেছে। সেই ফোন কলের সূত্র ধরে সরকারি কর্মী-আধিকারিকরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার বন্দোবস্ত করছেন। তথ্য যাচাই করে সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রশাসনিক টিম পাঠিয়ে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর সাথে মাঝে মাঝেই উড়ো ফোন বিরক্তি বাড়িয়েছে। ফোন করে কেউ আবদার করছেন, আমি যে বাড়িতে থাকছি, সেই বাড়ির মালিকের ব্যবহার ভালো না। আমাকে নতুন বাড়ি ভাড়া খুঁজে দিন। আবার কারও আবদার, ঠিকমতো বাজার করতে পারছি না। এমন কিছু রেসিপি বলুন যাতে মুখে রুচি আসে। কেউ আবার বলছেন, ঘরে খাবার পাঠিয়ে দিন। বাজার করতে বেরোতে পারছি না। এমন কি ফোন করে জানতে চাইছেন, কবে মদের দোকান খুলবে। প্রশাসনের তরফে এই মুহূর্তে সেই ফোন কলগুলিকে গুরত্ব না দিয়ে প্রকৃত সমস্যার ফোনগুলিকে লিপিবদ্ধ করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সূত্র: দৈনিক বর্তমান, কোলকাতা