সালেহ্ বিপ্লব : [৩] বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-এর ডেভেলপমেন্ট কমিটির বৈঠক বসে বছরে দুবার। এবারের বসন্তকালীন বৈঠকে খুব স্বাভাবিকভাবেই গুরুত্ব পেয়েছে করোনা মহামারী। করোনার কারণে এবারকার বৈঠকটি বসেছে অনলাইনেই। সিএনএন, বিজনেস ইনসাইডার, মার্কেট স্ক্রিনারডটকম
[৪] বৈঠকে অংশ নেয়া নরওয়ের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন মন্ত্রী দেঙ ইঙ উইলস্টেন বলেন, মহামারীর কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, তা মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বিশ্বব্যাংক।
[৫] প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি প্যাকেজ বরাদ্দ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এই বরাদ্দ দুভাবে কাজে লাগানো হবে। প্রথমত স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কর্মসূচী বাস্তবায়ন। দ্বিতীয়ত, একই সঙ্গে ঝুঁকির মুখে পড়া দেশগুলোর অর্থনীতি পুনর্গঠন। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নে ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক ঋণ ও অনুদান মিলিয়ে প্রায় ১৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যোগান দেবে।
[৬] বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলো বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে খুবই নাজুক অবস্থায় পড়েছে। এ অবস্থার তাদের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে সহায়তা করতে চায় উন্নত দেশগুলো। তারই অংশ হিসেবে ৭০টি দরিদ্র দেশের ঋণ পরিশোধ আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে।
[৭] সিএনএনকে দেয়া সাক্ষাতকারে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে একই সঙ্গে দুটি সংকটের মোকাবেলা করতে হচ্ছে। মহামারী এবং অর্থনৈতিক সংকট।
[৮] মহামারীর আগে আইএমএফ বলেছিলো, বিশ্বের ১৬০টি দেশে মাথাপিছু আয় বাড়বে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে সংস্থাটি বলছে, ১৭০টি দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এরই মধ্যে শতাধিক দেশ অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলায় আইএমএফ-এর সাহায্য চেয়েছে।
[৯] এই প্রসঙ্গে ক্রিস্টালিনা বলেন, আইএমএফ সিদ্ধান্ত নিয়েছে জরুরি সহায়তার পরিমাণ দ্বিগুণ করা হবে। করোনা ভাইরাস মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় কঠিন আঘাত করছে, তেমনি আঘাত করছে অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্রে। এ অবস্থায় দেশগুলোকে আগের ঋণ পরিশোধ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়াকে আমরা জরুরি বলে মনে করেছি। সে সিদ্ধান্তও হয়েছে।
[১০] তিনি বলেন, সবচেয়ে বড়ো ব্যাপার, আইএমএফ গভর্নিং বডির সভায় ৮৯ দেশের প্রতিনিধিরা বিপদাপন্ন দেশগুলোর পক্ষে দারুণ একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমরা সভায় জানিয়েছি, পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের ১৭ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত এই টাকার ৭০ ভাগ পাওয়ার নিশ্চয়তা পেয়েছি ওই বৈঠকেই। এটি প্রমাণ করেছে, একদম নতুন একটি সংকটের মুখে সবাই উপলব্ধি করেছেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে সবাইকে কতোটা আন্তরিক ও সক্রিয় হতে হবে।
[১১] আফ্রিকাসহ দরিদ্র দেশগুলোর পক্ষে অবস্থান নেয়ার ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানান আইএমএফ-এর প্রধান নির্বাহী ক্রিস্টালিনা। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফ মিলে আমরা প্রতিটি দেশের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছি। মন্দা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে কার কতোটা সহযোগিতা দরকার, সে হিসেব করছি।
[১২] গত ৫০ বছরে এই প্রথমবারের মতো কঠিন অবস্থায় পড়েছে চীনের অর্থনীতি। চলতি প্রান্তিকে দেশটির জিডিপি ৬.৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। চীনের অর্থনীতি তথা বিশ্ব অর্থনীতি চাঙ্গা কররা ব্যাপারে কী ভাবছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল? ক্রিস্টালিনাকে প্রশ্ন করেন সিএনএন ব্রডকাস্টার ক্রিস্টিয়ানা আমানপুর।
[১৩] জবাবে তিনি বলেন, আমরা প্রথমে ভাইরাস মোকাবেলার কথা ভাবছি। এরপর অর্থনীতি পুনরুদ্ধার। আমরা মনে করছি, এ বছর বিশ্ব অর্থনীতির মাইনাস গ্রোথ হবে, যার হার হবে ৩ শতাংশ। কিন্ত পরের বছর এ ক্ষতি কাটিয় উঠে বিশ্ব অর্থনীতির বৃদ্ধির হার হবে ৫.৮ শতাংশ।
[১৪] তিনি বলেন, করোনা মহামারী যদি দীর্ঘায়িত হয় কিংবা দ্বিতীয়বার আঘাত হানে, তাহলে আমরা আরো সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হবো। সেক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী হবে? প্রথমত মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য চিকিৎসা খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। মানুষ যাতে খাবারের জন্যে মরিয়া হয়ে না ওঠে, খামারগুলো যাতে একের পর এক বন্ধ হয়ে না যায়। এজন্য আমাদের আরো বেশি বাজেট বরাদ্দ করতে হবে, যতোটা পারা যায়। এবং তৃতীয় কাজ হবে, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্যে প্রস্তুত হওয়া। এজন্য প্রথমেই জানতে হবে, সামনের দিনে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে। সম্ভবত বেকারত্বের হার বাড়বে।
[১৫] করোনা পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলায় সব দেশের ঐক্য ও সংহতির ওপর জোর দেন আইএমএফ-এর প্রধান নির্বাহী ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। এই মহামারী বিশ্ববাসীকে সক্ষমতা অর্জনের নতুন একটি সুযোগ করে দিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :