স্পোর্টস ডেস্ক : [২] বিশ্ব ক্রিকেটে আজকের বাংলাদেশ এক বিরাট নাম। বড় বড় দলগুলো যার সামনে যখন তখন পা হড়কাতে পারে সেটা হলো বাংলাদেশ। একে একে অনেকগুলো বিশ্ব মানের ক্রিকেটার উপহার দিয়েছে এই লাল-সবুজের পতাকা। কিন্তু এই শক্তিটা অর্জন একদিনে সম্ভব হয়নি। শুধু তাই নয়, নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেয়াটাও ছিলো এক বড় বিস্ময়।
[৩] ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি ছিল ’৯৯ বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ার টুর্নামেন্ট। সেরা তিনে থাকতে পারলে জায়গা মিলবে বিশ্বকাপে। তবে বাংলাদেশ চাইছিল যেন তার চেয়েও বেশিকিছু। তাইতো ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফি জিতেই জায়গা করে নিলো বিশ্বকাপের মঞ্চে। ওই ম্যাচেই যেনো বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবকিছু লিখে রেখেছিলো ক্রিকেট বিধাতা।
[৪] বাংলাদেশ তখন বিশ্ব ক্রিকেটে আসছি আসছি করছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক ক্রিকেটার গর্ডন গ্রিনিজের প্রশিক্ষণে নিজেদের হাত বেশ পাকিয়েছিলো টাইগাররা। আর সেবারই প্রথমবারের মতো বিশ্ব ক্রিকেটে টাইগাররা চিনিয়েছে নিজেদের জাত। ফাইনালে শক্তিশালী কেনিয়াকে হারিয়ে পৃথিবীকে বাঘের গর্জনে জানিয়েছে, আসছে বাংলাদেশ।
[৫] মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের কিলাত কেলাব ক্লাব মাঠে ১২ এপ্রিল শুরু হয় বাংলাদেশের স্বপ্নের ফাইনাল। তবে ম্যাচটির ফলাফল আসে আজকের এই দিন, ১৩ এপ্রিলে। আজ পূর্ণ হলো বাংলাদেশের প্রথম শিরোপা জয়ের ২৩ বছর। বৃষ্টির কারণে প্রথম ইনিংসে কেনিয়া ব্যাটিং করার পর ১২ তারিখে খেলা আর মাঠে গড়ায়নি। ১৩ তারিখ ডাকওয়ার্থ-লুইস মেথডে নতুন লক্ষ্যে খেলতে নামে বাংলাদেশ।
[৬] ফাইনালে টস হেরে আগে ব্যাটিং করে টিকোলোর ১৪৭ রানের বিশাল ইনিংসে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২৪১/৭ সংগ্রহ দাঁড় করায় কেনিয়। বাংলাদেশের পক্ষে মোহাম্মদ রফিক ৪০ রানে ৩ উইকেট নেন। এছাড়াও খালেদ মাহমুদ ও সাইফুল ইসলাম পান ২টি করে উইকেট।
[৭] বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের আগে বৃষ্টি হানা দেয়ায় টাইগারদের নতুন লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৫ ওভারে ১৬৬ রান। জয়ের লক্ষ্য তাড়ায় বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ বদলে দেন কোচ গ্রিনিজ। প্রায় বর্তমান যুগের টি-টোয়েন্টি সুলভ ব্যাটিং করতে হবে বলে নিয়মিত ওপেনার আতহার আলী খানকে না নামিয়ে তুরুপের তাস রফিককে ওপেনিং করান। তার সঙ্গে নামেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয়। যদিও প্রথম বলে ফেরেন দুর্জয়।
[৮] তবে তাতে ভড়কে না গিয়ে উলটো কেনিয়ান বোলারদের উপর চড়াও হন রফিক ও নান্নু। রফিক ১৫ বলে ২টি করে চার ও ছয়ে করেন ২৬ রান। চারে নামা আমিনুল ইসলামও ১০০ স্ট্রাইক রেটে রান তুলতে থাকেন। নান্নুর ২৬, আমিনুলের ৩৭ ও অধিনায়ক আকরাম ২২ রান করলেও ১২৩ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।
[৯] জয়-পরাজয়ের দোলাচলে থাকা দুই দলের মধ্যে টাইগারদের পক্ষে তখন নায়ক হয়ে দাঁড়ায় খালেদ মাসুদ পাইলট ও সাইফুল ইসলাম। এই দুইজনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের জয় হাতের মুঠোয় চলে আসে। সাইফুল ১৪ রানে আউট হলেও ৭ বলে ১৫ রান করে ইনিংসের শেষ বলে জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন পাইলট।
[১০] জয় নিশ্চিত করে শান্ত ও পাইলটের দৌঁড় এখনো বাংলাদেশের ক্রিকেটানুরাগীদের মনে বড় জায়গা নিয়ে আছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের পাথেয় হিসেবে কাজ করা এই জয় দিয়েই তো টাইগারদের গর্জনের শুরু। যা চলছে এখনো, আরও বড় অধরা স্বপ্ন ছোঁয়ার লক্ষ্যে। ইতিমধ্যে যুবারা বিশ্ব জয় করেছে। নারী এশিয়া জয় করেছে। এবার সিনিয়রদের বিশ্ব জয়ের পালা। খুব দ্রুতই হয়তো ফুরোবো সে অপেক্ষা।
আপনার মতামত লিখুন :