এস এম নূর মোহাম্মদ : [২] ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন। এরপর কেটে গেছে চার দশক। আর এ দীর্ঘ সময় পর ফাঁসিতে ঝুলতে যাচ্ছে ঘটনার সময় জড়িত থাকা আত্মস্বীকৃত খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্তকৃত) আব্দুল মাজেদ। কারাগারে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেছেন পরিবারের সদস্যরা। আজও পরিবারের সদস্যদের ডাক পরেছে কারাগারে। এদিকে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে জল্লাদ শাহজাহানের নেতৃত্বে ১০ জনের একটি দল প্রস্তুত করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে ফাঁসির মহড়াও সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে কারা সূত্র।
[৩] ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদ গত মঙ্গলবার ভোরে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের হাতে গ্রেফতার হন। পুলিশ তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে হাজির করলে আদালত কারাগারে আটক রাখার নির্দেশ দেন। বুধবার তাকে হাজির করা হলে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ মো. হেলাল চৌধুরী বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখান। এসময় মাজেদ ঘটনার সঙ্গে নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। এরপর আদালত মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন। ওই দিনই পরোয়ানা কারাগারে পৌঁছালে রাতে প্রাণভিক্ষার আবেদন করার খবর আসে। তবে সে আবেদন নাকচ করে দেন রাষ্ট্রপতি।
[৪] সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন শেষ ধাপ। তিনি আবেদন নাকচ করলে কারা কর্তৃপক্ষ মৃদ্যুদন্ড কার্যকরের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
[৫] বঙ্গবন্ধু খুন হওয়ার পর তার ব্যক্তিগত সহকারী এ এফ এম মুহিতুল ইসলাম তৎকালীন লালবাগ থানায় এজাহার দায়ের করার উদ্দ্যোগ নিলে পুলিশ অস্বীকৃতি জানায়। ২১ বছর পর ১৯৯৬ মুহিতুল ইসলাম ধানমন্ডি থানায় এহাজার দায়ের করেন। ১৯৯৭ সালের ১৭ এপ্রিল ১৯ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। ৬১ জন সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করে ১৯৯৮ সালের ১৯ নভেম্বর ঢাকার দায়রা আদালত ১৫ জনকে মৃত্যুদন্ড ও ৪ জনকে খালাস দেন।
[৬] রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন ৪ আসামি। বিচারপতি মোহাম্মদ রুহুল আমিন ও এ বি এম খাইরুল হকের বেঞ্চ শুনানি শেষে বিভক্ত রায় দেন। এরপর তৃতীয় বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম ২০০১ সালে ১২ আসামির দন্ড বহাল রেখে ৩ জনকে খালাস দেন। এরপর ৫ জন আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল ও আপিল করলে তা খারিজ হয়। সব শেষে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি রিভিউ আবেদনও খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত। এরপর একই দিন ফারুক রহমান প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করলে রাষ্ট্রপতি তা খারিজ করে দেন। সকল আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি দিবাগত রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৫ জনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। পলাতক ৭ জনের মধ্যে আজীজ পাশা জিম্বাবুয়েতে মৃত্যুবরণ করেন।
আপনার মতামত লিখুন :