মাজহারুল ইসলাম : [২] দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে ফতোয়া জারি করে সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। গতকাল ডয়েচে ভেলে এর বরাতে সময় টিভির অন লাইন ভার্সনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জনা যায়।
[৩] ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মক্কায় ওমরাহ বন্ধ করে দেয়ার মধ্য দিয়ে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি আরব।
[৪] এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় নানা দেশে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কিছু সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। সামাজিক মেলামেশার ক্ষেত্রে আরোপ করা হয়েছে বিধিনিষেধ। অফিস, দোকানপাট, রেস্টুরেন্ট, ক্লাব, শপিংমল থেকে শুরু করে বড় জমায়েত হয় এমন সব কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এমন বিধিনিষেধের আওতায় পড়েছে মসজিদের জামায়াতে নামাজ আদায় বিষয়টি। ইউরোপ-আমেরিকায় তো বটেই আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার দেশগুলোও বাদ পড়ছে না।
[৫] পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ ইন্দোনেশিয়া থেকে শুরু করে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলো নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। কোনও কোনও দেশের সরকার নয়, বরং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এসব বিধিনিষেধের দায়িত্ব নিয়েছে।
[৬] আফগানিস্তানে, নামাজের জন্য মসজিদে না যেতে ফতোয়া জারি করেছেন সেখানকার ধর্মীয় নেতারা। দেশটির অন্যতম টিভি চ্যানেল টোলো নিউজ জানায়, তাদের উলামা হাই কমিশন এ ফতোয়া জারি করে। কারণ হিসেবে বরঅ হয়, করোনা থেকে পুরোপুরি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জমায়েত বন্ধ থাকবে।
[৭] ইন্দোনেশিয়ায়, সরকার সরাসরি কোন নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। কিন্তু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এরইমধ্যে সেই কাজটি করছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম টিভি ওয়ানে সংস্থাটির পরিচালক ড. সাইদ আকিল সিরোজ বলেছেন, করোনার বিস্তার ঠেকাতে জুমা ও তারাবির এবং ঈদ উল ফিতরের নামাজ ঘরে বসে করুন। কোভিড-১৯ থেকে রক্ষা পেতে নাহদলাতুল উলামার ফতোয়া কাউন্সিললের ধর্মীয় নির্দেশনা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
[৮] ভারত, গত মার্চে রাজ্য সরকারগুলো করোনা মোকাবেলায় সামাজিক জমায়েতের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করতে থাকে। দিল্লিতে বিধিনিষেধ আরোপের আগে নিজামুদ্দিন এলাকায় তাবলিগ জামাতে অংশ নেন প্রায় ২ হাজার তাবলিগ অনুসারী। এদের অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়। দিল্লি সরকার ১৬ মার্চ প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে ৫০ জনের বেশি মানুষ জড়ো হওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলো। যা পরবর্তীতে কমিয়ে ৫ জনে নামিয়ে আনা হয়।
পাকিস্তানের, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মসজিদে জড়ো হওয়ার সংখ্যা সীমিত করার কথা বলেছেন। দেশটির ইসলামিক আদর্শ কাউন্সিল সবাইকে বাসায় থাকার পরামর্শ দিয়ে ঘরেই নামাজ আদায়ের কথা বলেছে। দক্ষিণাঞ্চলের সিন্ধ প্রদেশে শুক্রবার জুমার নামাজে মানুষের আসা ঠেকাতে দুপুর ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করা হয়।
[৯] বাংলাদেশেও, সংক্রমণ রুখতে মুসল্লিদের ঘরে নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। সোমবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদেরও ঘরে উপাসনার নির্দেশ দেয়া হয়। শুধু মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন আর খাদেমরা মসজিদে নামাজ আদায় করবেন। বাইরের মুসল্লিরা কেউ মসজিদে জামাতে অংশ নিতে পারবেন না। বলা হয়, জুম্মার নামাজে সর্বোচ্চ ১০ জন এবং দৈনিক পাঁচওয়াক্ত নামাজে সর্বোচ্চ ৫ জন উপস্থিত হতে পারবেন।
[১০] ইরানে, কোভিড-১৯ ভাইরাসটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার পর সতর্ক হয়ে গেছে মধ্যপ্রাচ্য। তারা নানাভাবে বড় সমাবেশ বা জমায়েত বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে শুরু করে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তটি নেয় সৌদি আরব, মক্কায় ওমরাহ বন্ধ করে দেয়ার মধ্য দিয়ে।
কুয়েতে, আযানের মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন এনে ঘরে বসে নামাজ আদায়ের কথা বলা হয়। এমন ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক উদাহরণকে অনুসরণ করা হয়েছে বলে বলা হয়।
[১১] ইরাকের, গ্র্যান্ড আয়াতোল্লাহ আলি আল-সিস্তানি এ বিষয়ে বলেন, পেশাদার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ধর্মীয় দায়িত্ব। তুরস্কের ধর্ম বিভাগের প্রেসিডেন্ট আলি এরবাস মহামারী থেকে বাঁচতে মহানবীর শিক্ষাকে অনুসরণ করার কথা বলেন।
[১২] মিশর, রমজান মাসে যে কোন ধর্মীয় সমাবেশ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। এমনকি ইফতার পার্টি বা জমায়েত করা যাবে না বলে জানিয়েছে তাদের ধর্ম মন্ত্রণালয়। সম্পাদনা : সালেহ্ বিপ্লব
আপনার মতামত লিখুন :