ডেস্ক রিপোর্ট : [২] ‘কেউ যখন ভাবছেন কী করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বঁাচা যাবে, কেউ তখন ভাবছেন, কোথায় দুটো ভাত পাওয়া যাবে! কাজেই তার ব্যবস্থা করতে হবে।’ বললেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেন। একই পথে ভাবছেন তঁার উত্তরসূরি ড. অভিজিৎ ব্যানার্জি। তিনিও মনে করছেন, লোকে যদি ভাতের খোঁজে রাস্তায় বেরোতে বাধ্য হয়, তা হলে লক ডাউনের সুফল পাওয়া যাবে না। অভিজিতের সঙ্গে সহমত এস্থার ডুফলো। যে লোকের খাওয়ার ব্যবস্থা করা করোনা সংক্রমণ আটকানোর জন্যেই জরুরি। অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুর জোরাল বক্তব্য, যঁারা বলছেন, আগে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইটা জিতে নিই, জাতীয় অর্থনীতি নিয়ে পরে ভাবা যাবে, তঁারা ঠিক বলছেন না। বললেন দেশের এবং বিশ্বের চার ক্ষুরধার অর্থনৈতিক মস্তিষ্ক। এক সর্বভারতীয় টিভি চ্যানেলের আলোচনায়। আজকাল
[৩] ‘যদি গোটা দেশে লকডাউনের সিদ্ধান্ত সফল করতেই হয়, তা হলে গরিব মানুষের হাতে টাকা তুলে দিতেই হবে। তা নাহলে মানুষ শুধু খাবারের খেঁাজেই রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াবে! শুধু রেশন বা বিনামূল্যে খাবার দিলেই হবে না। তাঁদের আরও কিছু চাহিদা থাকে। সেগুলোও যাতে তাঁরা পূরণ করতে পারেন, তার পরিসর তৈরি করে দিতে হবে। তাঁদের হাতে এমন কিছু তুলে দিতে হবে যাতে তাঁরা এই লকডাউনের সময়ে প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করে।’ চলতি পরিস্থিতিতে পরামর্শ নোবলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ ব্যানার্জির।
[৪] একই বক্তব্য সহ নোবেল বিজয়িনী এবং অভিজিতের গবেষণাসঙ্গী এস্থার ডুফলোর। তিনিও বললেন, ‘তিন সপ্তাহ পরও যদি মানুষের হাতে টাকা না থাকে, খাবার না থাকে, মানুষকে ঘরে আটকে রাখা মুশকিল হয়ে যাবে। তার ফলে যেটা হবে, করোনার মোকাবিলা করতে যে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেটাই ব্যর্থ হবে। আর এই পরিস্থিতিতে মানুষ যদি ঘর থেকে বেরতে শুরু করে, তাহলে সমস্যা আরও বাড়বে। লকডাউন অবশ্যই জরুরি। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত তখনই সফল হবে, যখন তা মানুষের প্রাণরক্ষা করতে পারবে। করোনা পরবর্তী সময়ে যদি দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তুলতে হয়, সেক্ষেত্রে এখন থেকে তার প্রস্তুতি নিতে হবে।’
[৫] করোনা পরিস্থিতিকে যুদ্ধ পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করছে কেন্দ্রের মোদি সরকার। মোদি সরকারের এই মনোভাবের তীব্র নিন্দা করেন অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। তিনি বলেন, ‘ভারতের মতো দেশ যেখানে মানুষের মধ্যে এত বৈচিত্র, এত মতামত, যেখানে বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন রকমের চাহিদা, সেখানে এই পরিস্থিতিকে যুদ্ধ পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করার কোনও মানেই হয় না। কিছু মানুষ শুধুই ভাবছেন, কীভাবে করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে, আর অন্যদিকে কিছু মানুষ শুধু দু’মুঠো ভাতের সন্ধান করছেন। চিন্তা করছেন, পরের দিনও খাবার জুটবে তো? এই লকডাউনের সময়ে মানুষ যদি কর্মসংস্থান হারাতে থাকেন, তাহলে রোজগারের সব রাস্তাই বন্ধ হয়ে যাবে। মানুষের হাতে টাকা থাকবে না। তখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে যেখানে দেখা যাবে, শেষে খাদ্যের অভাবে মানুষকে মরতে হচ্ছে। এটা এমন একটা পরিস্থিতি, যেখানে আমাদের আরও সহযোগী হয়ে উঠতে হবে। আসল যুদ্ধে সহযোগী হয়ে ওঠার কোনও অবকাশ নেই।’
[৬] করোনার মোকাবিলা নাকি দেশে অর্থনীতি? এই প্রশ্নের উত্তরে অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু বলেন, ‘অনেকেই বলছেন, এই মুহূর্তে আমাদের শুধুই করোনার মোকাবিলা করতে হবে। অর্থনীতি নিয়ে পরে ভাবা যাবে। আমি বলব, এটা একেবারেই ভুল ধারণা। করোনার মোকাবিলা করতে গিয়ে সরকার যদি দেশের অর্থনীতির বিষয়টি এড়িয়ে যায়, সেক্ষেত্রে তার মাশুল গুণতে হবে সাধারণ মানুষকেই। যার পরিণাম ভয়ঙ্কর। এটা ঠিকই যে করোনার মোকাবিলায় ভারত সরকার শুরুতেই বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ এবং কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু তাতেও বেশকিছু সমস্যা থেকে গিয়েছে। কিন্তু যেই সিদ্ধান্তই নেওয়া হোক না কেন, অর্থনীতির বিষয়টি সবসময়েই মাথায় রাখতে হবে। ডলারের তুলনায় টাকার দাম যদি ক্রমাগত পড়তে থাকে, তাহলে দেশের অর্থনীতি সত্যিই ধ্বসে পড়বে। আর যদি দেশের অর্থনীতি ধ্বসে যায়, তার সরাসরি প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর। ইতিহাস তার সাক্ষ্য প্রমাণ দেয়। সুতরাং, প্রশ্ন এটা নয়, করোনার মোকাবিলা নাকি দেশের অর্থনীতি? প্রশ্ন হল, কীভাবে করোনার মোকাবিলার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে সঠিক দিশা দেখানো সম্ভব?’
আপনার মতামত লিখুন :