ডেস্ক রিপোর্ট : [২] করোনা ভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাবে কমে যাচ্ছে রেমিট্যান্স। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা গেছে, গেল মাসে মাত্র ১২৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। ২ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণার পর ১৪০ কোটি ডলারের কম রেমিট্যান্স আসেনি কোনো মাসেই। গত ফেব্রয়ারি মাসে দেশে ১৪৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। অর্থাৎ এক মাসে প্রায় ১৭ কোটি ডলার কম রেমিট্যান্স এসেছে।
[৩] বিশ্লেষকদের মতে, রেমিট্যান্স কমে গেলে অর্থনীতিতে আরো চাপ তৈরি হবে। কেন না, গত কয়েক মাস ধরে রপ্তানি কমে গেছে। আমদানির পরিমাণও বেশ কিছুদিন ধরে কমছে। এমন পরিস্থিতিতে আশা জাগাচ্ছিল প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্স। বিশেষ করে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণার ফলে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি ছিল ২০ শতাংশের বেশি। তবে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় সে সূচকেও পতন শুরু হয়েছে।
[৪] বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের মার্চ মাসে ১৪৫ কোটি ৮৫ লাখ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠান প্রবাসীরা। এবার ১২ মার্চ পর্যন্ত প্রথম দুই সপ্তাহে প্রবাসীরা পাঠান ৮০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। তবে মার্চ শেষে এর পরিমাণ ১২৮ কোটি ডলারের ঘরেই থেমে যায়।
[৫] সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় অনেক দেশে লকডাউন চলছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষে থাকা সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, কুয়েত, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, ওমান, কাতার, ইতালি, বাহরাইনসহ অধিকাংশ দেশে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। বেশির ভাগ দেশে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় হাতে টাকা থাকলেও অনেকে পাঠাতে পারছেন না। আবার অনেকে ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবিলার জন্য সঞ্চয় করছেন।
[৬] বিদেশে যারা অ্যাপভিত্তিক ভাড়া গাড়ি বা ট্যাক্সি চালিয়ে জীবন নির্বাহ করেন, অস্থায়ীভাবে দৈনিক মজুরিভিত্তিতে হোটেল, রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন কাজ করেন, তারা নিজেরা অনিশ্চয়তায় জীবন পার করছেন। এর বাইরে করোনা আতঙ্কে অনেক প্রবাসী এরই মধ্যে দেশে ফিরেছেন। অনেকেই পরিস্থিতির উন্নতি হলে দেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পরও অনেকে যে কর্মহীন হয়ে পড়বেন, সে আভাস মিলছে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনে। ফলে আগামীতে রেমিট্যান্স আরো কমার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
[৭] গত বছরের জুলাই থেকে রেমিট্যান্সের ওপর ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। প্রণোদনার অর্থ পরিশোধের জন্য চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ফলে আগে অন্য উপায়ে অর্থ পাঠাতেন এ রকম অনেকেই ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছিলেন। ফলে বৈদেশিক আয়ের অন্যতম আরেক খাত রপ্তানি কমলেও রেমিট্যান্স বাড়ছিল।
[৮] চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ২ হাজার ৬২৪ কোটি ডলারের রপ্তানি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ কম। এর মধ্যে মার্চে প্রায় ৪০০ কোটি ডলারের রপ্তানি আদেশ বাতিল হওয়ার খবর মিলেছে। অন্যদিকে গত জানুয়ারি পর্যন্ত আমদানি কমেছে ৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে আমদানি আরো কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।ইত্তেফাক
আপনার মতামত লিখুন :