যুগান্তর : [২] পুরো ইউরোপ করোনাভাইরাসের আতঙ্কে ঘরের ভেতর গুটিয়ে গেছে। অথচ এই অঞ্চলেরই একটি দেশ একেবারেই ব্যতিক্রম। দেশটি হচ্ছে সুইডেন। কোথাও কোনো লকডাউন নেই। জীবনযাত্রা চলছে স্বাভাবিকভাবেই।
এখনও আগের মতোই অফিসে যাচ্ছেন সুইডিশরা। বাজারে যাচ্ছেন মাল-সামান কিনতে। দলবেঁধে মজা করে খাচ্ছেন রেস্তোরাঁয়। দীর্ঘ শীতের পর আবহাওয়া কিছুটা উষ্ণ হতে শুরু করেছে।
ঘরের বাইরে বসে সময় কাটানোর মতো উষ্ণতা এসেছে চারপাশে। করোনার আতঙ্ক ভুলে খোশ মেজাজে মিঠে রোদ গাঁয়ে মাখছে সুইডেনের জনগণ।
[৩] পরিবারের সবাইকে নিয়ে রাজধানী স্টকহোমের মারিয়াটরগেট স্কয়ারে আইসক্রিম খেতে জড়ো হচ্ছেন অনেকে। শহরের অন্যান্য অংশে খোলা রয়েছে নাইটক্লাবগুলো। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এসব চিত্র উঠে এসেছে।
[৪] প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় এ পদক্ষেপ কিছুটা শিথিল। ডেনমার্কে ১০ জনের বেশি মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অন্যদিকে ব্রিটেনে নিজের বাড়ি ছাড়া বাইরে কারো সঙ্গে দেখা করাই নিষিদ্ধ। লকডাউনে না থাকলেও সুইডেনের করোনার আতঙ্ক স্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করেছে। বিবিসির এক প্রতিবেদন অনুসারে, দেশটির রাস্তাগুলো আগের চেয়ে নীরব হয়ে উঠেছে। স্টকহোমের গণপরিবহন প্রতিষ্ঠান এসএল জানিয়েছে, সাবওয়ে ও কমিউটার ট্রেনে যাত্রী সংখ্যা অর্ধেকের মতো কমে গেছে। জরিপ অনুসারে, শহরটির অর্ধেক বাসিন্দা বাড়ি থেকে কাজ করছেন।
[৫] রাষ্ট্রীয় তহবিলে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান স্টকহোম বিজনেস রেজিওন, স্টকহোমের বৈশ্বিক ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে সমর্থন দিয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির অনুমান, রাজধানীর অন্তত ৯০ শতাংশ বড় সংস্থাগুলো এ পরিস্থিতির মধ্যেও উন্নতি করবে। প্রতিষ্ঠানটির সিইও স্টাফান ইনগাভারসন বলেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেরই এমনটা করার সুযোগ রয়েছে। তারা এটা করছে। এটা কার্যকরী।
[৬] ইনগাভারসনের মন্তব্যে সুইডিশ সরকারের করোনা মোকাবেলার কৌশল ফুটে উঠে- নিজ থেকে দায়িত্ব নেয়া। রাজনীতিক ও জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এখনও প্রত্যাশা করছেন, কঠোর পদক্ষেপ আরোপ না করেও তারা ভাইরাসটির সংক্রমণ রুখতে পারবেন। কঠোর বিধিনিষেধের জায়গায় সরকার নির্দেশিকা ঘোষণা করেছে। যেমন, বয়স্ক বা অসুস্থ হলে ঘরে থাকা, নিজের হাত ধোয়া, অপ্রয়োজনীয় কারণে বাইরে না যাওয়া, ঘরে থেকে কাজ করা।
এখন পর্যন্ত সুইডেনে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার। মারা গেছেন ১০৫ জন।
[৭] সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী স্টেফান লভিন গত সপ্তাহে বলেন, আমরা যারা বয়স্ক তাদের বয়স্কদের মতোই কাজ করতে হবে। আতঙ্ক বা গুজব ছড়াবেন না। এই সংকট কারো একার নয়। প্রত্যেক মানুষেরই বড় দায়িত্ব রয়েছে। সুইডেনে জনগণের মধ্যে কর্তৃপক্ষের প্রতি উচ্চ পর্যায়ের আস্থা রয়েছে। অনেকের বিশ্বাস, এজন্য মানুষ সরকারের নির্দেশনা নিজ থেকেই মেনে চলছে।
[৮]সুইডিশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটি দ্য কারোলিনস্কা ইন্সটিটিউটের মহামারী বিশেষজ্ঞ ডা. এমা ফ্রানস আমি মনে করে, মানুষ পরামর্শ শুনতে অভ্যস্ত। কিন্তু এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে এসব পরামর্শ পর্যাপ্ত নয়। এজন্য আরও স্পষ্ট নির্দেশনা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
[৯] দেশটির জনসংখ্যাও একটা বড় প্রাসঙ্গিক নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। দেশটির অর্ধেকের বেশি বাড়িতেই একজন করে মানুষ বাস করেন। এতে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা অনেক কমে এসেছে। অন্যদিকে সুইডিশরা বাইরে ঘুরতে পছন্দ করে।
কর্মকর্তারা বলছেন, নাগরিকদের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে চান তারা। এজন্য জনগণকে ঘরে বন্দি করে রাখার মতো নিয়ম আরোপ করতে চান না। কিন্তু ইউরোপে করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি প্রতিদিন আগের চেয়ে খারাপের দিকে গড়াচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সুইডিশ সরকারের অভিনব প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
আপনার মতামত লিখুন :