অনলাইন ডেস্ক : [২] করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পর পর দুই দিনে দুই মুসল্লির মৃত্যুর পর রাজধানীর মিরপুরের টোলারবাগের দুটি মসজিদে জামাতে নামাজ আদায় বন্ধ রেখেছে এলাকাবাসী।
[৩] উত্তর টোলারবাগের পাশাপাশি ভবনের ওই দুই বৃদ্ধের মৃত্যুতে পুরো এলাকাজুড়ে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক সতর্কতা। বিচ্ছিন্ন রয়েছে উত্তর টোলারবাগের সঙ্গে টোলারবাগের যোগাযোগ।
[৪] ওই দুই প্রবীণ যে মসজিদে নামাজ পড়তেন উত্তর টোলারবাগের সেই দারুল ইহসান জামে মসজিদসহ টোলারবাগের দুটি মসজিদেই জামাতে নামাজ পড়া বন্ধ রয়েছে।
টোলারবাগ ভবন মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুস সাত্তার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘মসজিদ থেকে আজান দেওয়া হচ্ছে শুধু।’
স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুটি এলাকাতেই ব্যাপক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এলাকায় প্রবেশ ও বের হওয়ার ক্ষেত্রে নেওয়া হয়েছে কঠোর অবস্থান।
বিশ্বজুড়ে মহামারী আকার নেওয়া নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাংলাদেশে প্রথম ধরা পড়ে গত ৮ মার্চ। এরপর প্রায় প্রতিদিনই দুই-তিনজন করে নতুন রোগী শনাক্ত হয়। তারা সবাই ছিলেন বিদেশফেরত এবং তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিরা। এরমধ্যে গত শনিবার মিরপুরের ডেল্টা হাসপাতালে ৬৫ বছরের উত্তর টোলারবাগের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয় এই রোগে।
পরদিন মারা যান তার প্রতিবেশী ৭৬ বছরের আরেক প্রবীণ। তিনি উত্তর টোলারবাগের দারুল ইহসান জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি ছিলেন। এই দুই প্রবীণ ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং তারা দুজনই ওই মসজিদে একসঙ্গে নামাজ পড়তেন বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।
তাদের মৃত্যুর পরই এলাকাবাসীর মধ্যে করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বলে উত্তর টোলারবাগ ভবন মালিক সমিতির সভাপতি শুভাশিষ বিশ্বাস জানিয়েছেন। তিনি আজ বুধবার বলেন, ‘দ্বিতীয় যে ব্যক্তি মারা গেছেন তার জামাতা, স্ত্রী এবং বাসার কাজের লোক আক্রান্ত হয়েছে। আইইডিসিসআর নিয়মিত খোঁজ- খবর নিচ্ছে।’
মারা যাওয়া দুই প্রবীনের সঙ্গে একই কাতারে নামাজ পড়তেন এমন ২২ জনের তালিকা আইইডিসিআরকে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
‘আমাদের এলাকায় মোট ৬৭২টি ফ্ল্যাট রয়েছে। ভবনগুলোকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারাই ওই সব ভবনের খোঁজ নিচ্ছেন। এলাকার সবাই মোটামুটি হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছে’, বলেন ভবন মালিক সমিতির সভাপতি শুভাশিষ।
এলাকার প্রবীণদেরও নিয়মিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
উত্তর টোলারবাগের সঙ্গে তাদের এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বলে টোলারবাগ ভবন মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুস সাত্তার জানিয়েছেন। তাদের এলাকার সবাইও বাসায় থাকছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাসিন্দাদের কোনো কিছু লাগলে সোসাইটিকে জানাতে বলা হয়েছে। বাজার, ওষুধ ইত্যাদি ক্ষেত্রে সোসাইটি সাহায্য করছে। এলাকায় ঢোকার মুখে সাবান রাখা হয়েছে। খুব একটা প্রয়োজন না হলে বাইরের লোক ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বের হওয়ার ক্ষেত্রেও আমরা প্রয়োজন বিবেচনা করছি।’
টোলারবাগ ও উত্তর টোলারবাগ দুই এলাকাতেই দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মী এবং আবর্জনা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্তদের জন্য জুতা, পোশাক সরবরাহ করা হয়েছে। এ ছাড়া এলাকায় জীবাণুনাশক ছিটিয়ে দেওয়ার জন্য সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে ভবন মালিক সমিতির সভাপতিরা জানিয়েছেন।
আজ আইইডিসিআর জানিয়েছে, দেশে এ পর্যন্ত মোট ৩৯ জনের মধ্যে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাদের মধ্যে আরও দুইজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। ফলে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাতজনে। আর মৃতের সংখ্যা ৫। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কারও মধ্যে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েনি।
আপনার মতামত লিখুন :