মাজহারুল ইসলাম : [২] মফস্বলের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক, নার্সসহ সহকারীরা রয়েছেন চরম আতঙ্কে। জ্বর নিয়ে কেউ গেলে তাকে সরাসরি আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। অথচ হটলাইটে বারবার চেষ্টা করেও আইইডিসিআরের ফোনে ঢোকা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় করোনায় আক্রান্ত কি না, মানুষ তা কিভাবে পরীক্ষা করবে সে উপায়ও খুঁজে পাচ্ছে না।
[৩] জানা যায়, আইইডিসিআর এখন পর্যন্ত ৫ শতাধিক মানুষকে পরীক্ষা করে ৩৯ জনের মধ্যে এ ভাইরাস পেয়েছেন। প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও গলা ব্যথা নিয়ে খুলনায় মারা গেছেন ২ জন, সিলেটে ১ জন ও কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ১ জন। তারা করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
[৪] বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এখনই যদি নির্বিচারে হাজার হাজার মানুষের পরীক্ষা করে আক্রান্তদের পৃথক না করা যায় তাহলে আমাদের পরিস্থিতি ইতালির চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে।
কক্সবাজারে বৃদ্ধা আক্রান্ত :কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, কক্সবাজারে ওমরাফেরত এক বৃদ্ধার শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ঢাকায় পাঠানো নমুনার পরীক্ষার রিপোর্টে এ ভাইরাসের উপস্থিতির তথ্য এসেছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (সুপার) ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। আক্রান্ত বৃদ্ধা ভর্তির পর থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের বিশেষ কেবিনে রয়েছেন। আক্রান্ত এই নারী (৭৫) গত ১৩ মার্চ ওমরা হজ শেষে সৌদি আরব থেকে ফিরেছেন। তার পরিবারের প্রায় সবাই হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। হাসপাতালের একাধিক চিকিত্সক-নার্স ও ক্লিনারকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে।
আখাউড়ায় চিকিত্সককে ঢাকায় প্রেরণ :আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সংবাদদাতা জানান, আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় নিয়োজিত থাকা এক চিকিত্সককে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। দুই দিন ধরে জ্বর-সর্দি ও গলা ব্যথায় ভোগার পর গতকাল সকালে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
সৈয়দপুরে করোনা সন্দেহে একজন হাসপাতালে : স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর জানান, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশন বিভাগের করোনা ইউনিটে এক যুবককে আক্রান্ত সন্দেহে ভর্তি করা হয়েছে। তার বাড়ি সৈয়দপুরের বাশবাড়ি গ্রামে।
পিরোজপুরে প্রয়োজনীয় পিপিই নেই :পিরোজপুর অফিস জানায়, করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংক্রমণ থেকে নিজেদের মুক্ত রেখে চিকিত্সা দেওয়ার কাজে নিয়োজিতদের জন্য পিরোজপুরে পর্যাপ্ত পিপিই নেই। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে ২০০ পিপিই প্রয়োজন হলেও রয়েছে ৯৯টি। জেলার সিভিল সার্জন ড. হাসনাত ইউসুফ জাকি জানান, যারা স্পর্শকাতর যেমন- কম্পাউন্ডার, ওয়ার্ডবয়, সুইপারের কাজে নিয়োজিত থাকেন, করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিলে মহামারি ঠেকাতে তাদেরও নিয়োজিত করার প্রয়োজন হতে পারে। সেক্ষেত্রে সবারই পিপিই থাকা জরুরি।
মানিকগঞ্জে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে নার্সরা : মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ডাক্তাররা তাদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় সব উপকরণই ইতিমধ্যে হাতে পেয়েছেন বলে দাবি করলেন মানিকগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল আমিন আকন্দ। তিনি জানান, বর্তমানে পিপিই এসেছে ৩০০টি, গ্লাভস ৯০০ পিস ও ফেস মাস্ক ২০০টি। ইনডোরে কর্মরত নার্সরাও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন। সদর হাসপাতালের কর্মরত শিশু বিভাগের নার্স দিলরুবা সুলতানা বলেন, ‘এখানে আমাদের সরকারিভাবে কোনো নিরাপত্তা উপকরণ দেওয়া হয়নি।’
কুমিল্লায় চিকিত্সকদের মাঝে শঙ্কা :কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, কুমিল্লায় পিপিই সংকটের কারণে চিকিত্সক ও সংশ্লিষ্ট চিকিত্সা সহকারীদের মাঝে তাদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পিপিই চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত সরবরাহ এখনো পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান।
যশোরে নার্স-ব্রাদারদের মনোবল ভেঙে পড়েছে :যশোর অফিস জানায়, করোনা ভাইরাস আতঙ্কে যশোরের চিকিত্সক-নার্স-ব্রাদারসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের মনোবল ভেঙে পড়েছে। আবার প্রয়োজনীয় প্রতিরোধকের অভাবে ইন্টার্ন চিকিত্সকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় জানান, মঙ্গলবার রাতের পালা থেকে তাদের গাউনসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী দেওয়া হবে। এখনো পর্যন্ত জেলা থেকে কোনো স্যাম্পল আইইডিসিআরে পাঠানো হয়নি।
নোয়াখালীতে চাহিদার তুলনায় পিপিই এক ভাগও মেলেনি :নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল ও জেলার ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিত্সক, নার্স ও স্টাফদের সুরক্ষায় পিপিই সরবরাহ অত্যন্ত নগণ্য। জেনারেল হাসপাতাল ও জেলা সিভিল সার্জন দপ্তর থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পিপিই যে চাহিদা পাঠানো হয়েছে তার একভাগও এখনো পাওয়া যায়নি।
সম্পাদনা : খালিদ আহমেদ
আপনার মতামত লিখুন :