স্বপন দেব, মৌলভীবাজার: [২] করোনা ভাইরাস এর সংক্রমন প্রতিরোধে দেশের পর্যটন কে›ন্দ্রসমূহে সাময়িকভাবে পর্যটকের প্রবেশ বন্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর ফলে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পর্যটকদের প্রবেশ সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. শফিউল আলম চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন।
[৩] এদিকে করোনা ভাইরাস এর সংক্রমন প্রতিরোধের নিমিত্তে সরকার প্রজ্ঞাপন দ্বারা জনসমাগম নিষিদ্ধ করায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পর্যটন কেন্দ্রসমূহে পর্যটক আগমন পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরুৎসাহীত করেছে উপজেলা প্রশাসন। গত বুধবার রাতে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
[৪] উল্লেখ্য, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে পূর্ব ঘোষণা দিয়ে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ গত ১৭ মার্চ (মঙ্গলবার) লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রবেশে সবার জন্য উন্মুক্ত করেছিল। এ সুযোগে ওইদিন বিনামূল্যে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে নারী, পুরুষ, শিশু ও কিশোর মিলিয়ে হাজারও পর্যটকের সমাগম ঘটে। পর্যটকরা ঘুরে বেড়ান লাউয়াছড়া উদ্যানের বিভিন্ন পাহাড়ি ট্রেইল (সরু পথে) ও লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির আবাসিক এলাকায়। তাদের ব্যবহৃত যানবাহনেরও কোনো পার্কিং ফি দিতে হয়নি। ফলে এ সুযোগে ওইদিন সকাল থেকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ছিল উপচেপড়া ভিড়। এর একদিন পর বুধবার (১৮ মার্চ) রাতে কমলগঞ্জের পর্যটন কেন্দ্র লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর চা-বাগান লেক, ধলই বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ, হামহাম জলপ্রপাত, আদিবাসী খাসিয়া পুঞ্জি, মণিপুরি এলাকা ও চা-বাগান এলাকায় ভ্রমণে পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
লাউয়াছ১৯০ড়া খাসিয়া পুঞ্জির মান্ত্রী (পুঞ্জি প্রধান) ফিলা পতমী জানান, এখন যেহেতু করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময়, তাই পর্যটকদের ভ্রমণ কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখা উচিত। করোনাভাইরাস নিয়ে এমনিতেই খাসিয়া পরিবারগুলোর সদস্যরা আতঙ্কিত। তাই উপজেলা প্রশাসন থেকে পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করে প্রজ্ঞাপন জারি করায় তারা খুশী।
লাউয়াছড়া বনবিট কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিদিন শত শত পর্যটক ভ্রমণে আসতেন। এদের মধ্যে বিদেশি পর্যটকও আছেন। তাদের কারা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত তা বোঝার উপায় নেই।
উপজেলা প্রশাসন থেকে পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করার প্রজ্ঞাপনের সত্যতা নিশ্চিত করে লাউয়াছড়া বনবিটের এই কর্মকর্তা আরও জানান, এদিকে তাদের সতর্ক নজরদারি রয়েছে। এই প্রজ্ঞাপনের পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান প্রায় পর্যটকশূন্য রয়েছে বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা।
কমলগঞ্জের ধলই চা-বাগান সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃৃতিসৌধে পর্যটকদের আগমন ঘটেনি। মাধবপুর চা-বাগান সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মাধবপুর লেকেও পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল না। একই অবস্থা ছিল চাম্পারায় চা-বাগান সংলগ্ন হামহাম জলপ্রপাত, বিভিন্ন চা-বাগান, মণিপুরি ও খাসিয়া অধ্যুষিত এলাকাগুলোয়।
কমলগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সতর্কতামূলক এ ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। দেশের বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় ইতোমধ্যেই এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবরোধে কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন জনসমাগমকে নিরুৎসাহিত করছে।
আপনার মতামত লিখুন :