ইসমাঈল হুসাইন ইমু : [২] গত বুধবার বেলা ২টা। নরসিংদীর পলাশ উপজেলার পলাশ বাজার সংলগ্ন ব্রিজের পাশে সাদা কাফনে মোড়ানো একটি লাশ পড়ে আছে। স্থানীয়রা লাশটি দেখে ৯৯৯-এ কল করেন। বিষয়টি পলাশ থানায় জানানো হয়।
[৩] পরে পলাশ থানার ওসি শেখ মো. নাছির উদ্দিন তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখতে দায়িত্ব দেন এসআই আজাদ হোসেনকে। তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি দেখেন সাদা কাফনে মোড়ানো লাশ পড়ে আছে। কাফনের ভাঁজ খুলে দেখেন, লাশের ঠোঁট নড়ছে। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার জন্য গাড়ি খুঁজতে থাকেন তিনি। ওই সময় সেখানে কোনো গাড়িই তিনি পেলেন না। রাস্তার পাশে একটি ভ্যানগাড়ি পেলেও তার চালক ছিল না। পরে নিজেই ভ্যান চালাতে শুরু করেন। লোকটির শরীর থেকে প্রচন্ড দুর্গন্ধ বের হতে লাগলো। তিনি পলাশ বাজারে এসে লুঙ্গি কিনে তাকে পরিয়ে দেন এবং কাফনের কাপড় খুলে ফেলেন। লোকটিকে নিয়ে পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। তাকে কোলে করে হাসপাতালের দোতলায় ওঠান।
[৪] হাসপাতালে নেয়ার পর কোনো ডাক্তার লোকটির গায়ের দুর্গন্ধে তার কাছে আসতে চাচ্ছিলেন না। পরে তিনি গামছা দিয়ে লোকটির সারা শরীর মুছে দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করান। চিকিৎসা দেওয়ার পর সন্ধ্যার দিকে তার জ্ঞান ফিরে আসে। তবে লোকটি কোনো কিছুই বলতে পারেন না। লোকমুখে শুনা যায় তার বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ায়।
[৫] এ বিষয়ে এসআই আজাদ হোসেন জানান, লোকটিকে যে অবস্থায় পাওয়া গেছে, যে কেউ দেখলে মনে করবে তিনি মৃত। এমনকি গায়ের দুর্গন্ধে কেউ তার কাছে পর্যন্ত যেতে চায়নি। পুলিশ হিসেবে নয় নিজের মনের মানবিক বোধ থেকে তাকে আমি সুস্থ করার জন্য কাজ করেছি। আমি তার গায়ের ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত কাপড় পাল্টে দিয়েছি এবং তার প্রস্রাব-পায়খানা নিজের হাতে পরিষ্কার করে দিয়েছি। লোকটি এখন পুরোপুরি সুস্থ আছেন। তার নাম আব্দুল হক পাগলা (৮০)। তার আত্মীয় স্বজনের খোঁজে তিনি গাজীপুরের কাপাসিয়াতে গিয়েছিলেন কিন্তু কাউকে খুঁজে না পেয়ে ফেরত আসেন। লোকটির আপনজনকে খুঁজে পেলে তাকে তাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হবে।
[৬] পলাশ থানার ওসি বলেন, যারা একজন জ্যান্ত মানুষকে লাশ বানিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে যায়, তাদের কাছে জিতে গেছে পুলিশ কর্মকর্তা আজাদের মানবতা। তার সেবায় বেঁচে গেল লাশ হওয়া লোকটি।