এস এম আলমগীর কবির, স্টাফ রিপোর্টার : [২] প্রায় ৩০ বছর আগে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে চাঞ্চল্যকর সাগিরা মোর্শেদ হত্যায় তার ভাসুরসহ চারজনের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) যে চার্জশিট দাখিল করেছে, তাতে তুলে ধরা অভিযোগকে মিথ্যা, মনগড়া ও বানোয়াট বলে দাবি করেছে বিবাদীর পরিবার। এমনকি পিবিআইয়ের চার্জশিটে উল্লিখিত কিছু বক্তব্য খুনও করেছে তারা।
[৩] শুক্রবার (১৩ মার্চ) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআইয়ের তদন্ত কার্যক্রম ও চার্জশিটের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরেন আসমী পক্ষের দুই ছেলে চৌধুরী দিরাবিজ মাহমুদ ও চৌধুরী মাহির।
[৪] গত ১৬ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে সাগিরার ভাসুর ডা. হাসান ও তার স্ত্রী শাহিনসহ চারজনকে আসামি করে ১ হাজার ৩০৯ পৃষ্ঠার একটি অভিযোগত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পুলিশের পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম। অন্য আসামিরা হলেন-হাসান আলীর শ্যালক আনাস মাহমুদ ওরফে রেজওয়ান এবং ভাড়াটে খুনি মারুফ রেজা।
[৫] ৯ মার্চ ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ পিবিআইয়ের দেয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করেণ। মামলার অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য ১৫ মার্চ দিন ধার্য করা হয়েছে।
[৬] চার্জশিটে পিবিআইয়ের উল্লেখ করা অভিযোগের জবাব দিয়ে চৌধুরী দিরাবিজ মাহমুদ ও চৌধুরী মাহির সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ৩০ বছর আগে ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই আমার ছোট চাচি সগিরা মোর্শেদ আমাদের চাচাতো বোন সারাহাত সালমা চৌধুরীকে স্কুল থেকে আনার পথে ছিনতাইকারীদের গুলিতে মারা যান। কিন্তু সে ঘটনায় দায়ের করা মামলা ১৯৯১ সালে হাইকোর্টে স্থগিত হয়ে যায়, যা গত বছরের জুনে পুনরুজ্জীবিত করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ নভেম্বর বাবা-মা এবং বড় মামা মারুফ রেজাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয় এবং গত ১৬ জানুয়ারি আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পিবিআই।
[৭] সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, পিবিআই মামলার দায়িত্ব নিয়েছে গত বছরের ১৭ জুলাই এবং বাদী মাত্র ৮ দিনে ২৫ জুলাই ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। বাদী মিথ্যা ও বানায়াট ঘটনার তথ্য ৮ দিনের মধ্যে পিবিআইতে দাখিল করেন, যার মাধ্যমে পিবিআই’র সম্মানকে ও ক্ষুন্ন করার চেষ্টা করেছেন।
[৮] উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালের ওই হত্যাকাণ্ডে রমনা থানায় মামলা করেন সগিরার স্বামী আব্দুস সালাম চৌধুরী। পরে মিন্টু ওরফে মন্টু ওরফে মরণের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ।
[৯] ১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি আসামি মন্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবু বকর সিদ্দীক। সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয় সাতজনের। সাক্ষীতে মারুফ রেজা নামে এক ব্যক্তির নাম আসায় অধিকতর তদন্তের আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
[১০] ১৯৯১ সালের ২ জুলাই ওই তদন্তের আদেশ ও বিচারকাজ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তদন্তের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। ১৯৯২ সালের ২৭ আগস্ট ওই রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার বিচারকাজ স্থগিত থাকবে মর্মে আরেকটি আদেশ দেয়া হয়।
[১১] ২০১৯ সালের ২৬ জুন এ মামলার ওপর ২৮ বছর ধরে থাকা স্থগিতাদেশ তুলে নেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে মামলা ৬০ দিনের মধ্যে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) অধিকতর তদন্ত শেষ করতে নির্দেশ দেন। পরে তাদের আরও ৬০ দিনের সময় দেন আদালত। এরপর পিবিআই অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করে। সম্পাদনা: তিমির চক্রবর্ত্তী
আপনার মতামত লিখুন :