ইসমাঈল আযহার : [২] মানুষ পাপ করতে করতে যখন পাপের সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখনই আল্লাহর শাস্তি নাজিল হয়। পাপিষ্ঠ ফেরাউনকে আল্লাহ তাআলা তখনই ধরেছেন, যখন সে নিজেকে আল্লাহ বলে দাবি করেছে। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুসা! তুমি ফেরাউনের কাছে যাও, সে অত্যন্ত উদ্ধৃত হয়ে গেছে।’(সুরা ত্বাহা ২৪)
[৩] অপর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, স্থলে বা সাগরে যে সব ফাসাদ বা অনিয়ম ও বিশৃংখলা প্রকাশ পায় তা মানুষের হাতের কামাই।
[৪] হজরত আবু হুরায়রা (রা.)বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন সরকারি মালকে নিজের মাল মনে করা হয়, আমানতের মালকে নিজের মালের মতো ব্যবহার করা হয়, জাকাতকে জরিমানা মনে করা হয়, ইসলামী আকিদাবর্জিত বিদ্যা শিক্ষা করা হয়, পুরুষ স্ত্রীর অনুগত হয়, মায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়, বন্ধুদের আপন মনে করা হয়, বাবাকে পর ভাবা হয়, মসজিদে শোরগোল করা হয়, পাপী লোক গোত্রের নেতা হয়, অসৎ ও নিকৃষ্ট লোক জাতির চালক হয়, ক্ষতির ভয়ে কোনো লোককে সম্মান করা হয়, গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের প্রচলন অধিক হয়, মদ্য পানের আধিক্য ঘটে, পরবর্তী সময় লোকেরা পূর্ববর্তী লোকদের বদনাম করে—তখন যেন তারা অপেক্ষা করে লু হাওয়া (গরম বাতাস), ভূমিকম্প, ভূমিধস, মানব আকৃতি বিকৃতি, শিলাবৃষ্টি, রক্তবৃষ্টি ইত্যাদি কঠিন আজাবের, যা একটার পর আরেকটা আসতে থাকবে, যেমন হারের সুতা ছিঁড়ে গেলে মুক্তার দানাগুলো একটার পর একটা পড়তে থাকে। (তিরমিজি শরীফ)
[৫] রাসূল সা. আরেক হাদিসে বলেন, যদি তোমরা পাঁচটি মন্দ কাজ করো তাহলে খুবই খারাপ পরিণতির সম্মুখীন হবে। আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি যেন এ পাঁচটি মন্দ কাজ তোমাদের মধ্যে জন্ম না নেয়।’ ১. ব্যভিচার যদি কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে তাদের মধ্যে এমন এমন রোগ দেখা দেবে, যা আগে ছিল না। ২. ‘মাপে কম দেওয়া।’ এ মন্দ কাজ যদি কোনো জাতির মধ্যে জন্ম নেয়, তবে তাদের মধ্যে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় এবং তারা অত্যাচারী শাসকের শিকারে পরিণত হয়। ৩. ‘জাকাত’ না দেওয়া। এ মন্দ কাজ যাদের মধ্যে দেখা দেয়, তাদের ওপর আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ হয়ে যায়। যদি সে অঞ্চলে পশু বা পাখি না থাকত, তবে আদৌ বৃষ্টি হতো না। ৪. আল্লাহ ও রাসুলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা। এ মন্দ কাজ যখন সমাজে দেখা দেয়, তখন আল্লাহ তাআলা তাদের ওপর অমুসলিমদের আধিপত্য চাপিয়ে দেন। আধিপত্যবাদীরা তখন মুসলমানদের সহায়-সম্পদ কেড়ে নেয়। ৫. ‘কিতাব অনুযায়ী শাসনকার্য না চালানো।’ যদি মুসলমান শাসকরা আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী শাসনকার্য না চালায়, তবে আল্লাহ তাআলা মুসলিম সমাজে ভাঙন সৃষ্টি করে দেন। তারা নিজেদের মধ্যে পরস্পর লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে এবং সমাজে সন্ত্রাস ও খুন-খারাবি শুরু হয়ে যায়।’ (বায়হাকি, ইবনে মাজাহ)
[৬] যখন কোনো জাতির মধ্যে মাপ-জোখে কারচুপি করার রোগ সৃষ্টি হয়, তখন তাদের মধ্যে দুর্ভিক্ষ, মূল্যবৃদ্ধি, কষ্ট-পরিশ্রম এবং কর্তৃপক্ষের অত্যাচার উৎপীড়ন চাপিয়ে দেয়া হয়। যখন কোন জাতি আল্লাহ ও রাসূল (সা.) এর সাথে কৃত প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের উপর অজ্ঞাত শত্রু চাপিয়ে দেন। সে তাদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ছিনিয়ে নেয়।
[৭] হালাল রিজিক, অন্যের ধন-সম্পত্তির দিকে বদ নজর, ন্যায়বিচার, অন্যায়কে প্রশ্রয়, জুলুম-অত্যাচার, চুরি-ডাকাতি, মিথ্যাচার, জেনা-ব্যভিচার, মোনাফেকি, দম্ভ প্রদর্শন, ছলচাতুরী, অন্যের ধন-সম্পত্তি, অধিকার হরণ ইত্যাদি কুকর্ম বিরত না থাকলে আল্লাহ বান্দাকে শাস্তি প্রদান করেন।
[৮] দুর্ভিক্ষ, মহানাদ, শীলাবৃষ্টি, মহামারী, পানিতে নিমজ্জন, অগ্নিকান্ড, বন্যা, এডিস মশা, ডেঙ্গু এসব আল্লাহর গজবের অন্তর্ভুক্ত।
[৯] আল্লাহর আযাব গজব থেকে মুক্তি পেতে চাইলে সবাইকে ফিরে আসতে হবে ইসলামের দিকে, কুরআনের দিকে, সুন্নার দিকে; আসতে হবে সত্যের দিকে। সমস্ত অপকর্ম ছেড়ে আমাদের ভাল হতে হবে। আল কোরআনে ঘোষণা হচ্ছে, ‘নিশ্চয় আজ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ততায় নিপতিত। তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে, সৎ কাজ করেছে, পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দিয়েছে এবং পরস্পরকে ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে। অতএব, তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমি তোমাদের স্মরণ করব। আর আমার শোকর আদায় কর, আমার সাথে কুফরী করো না।’
আপনার মতামত লিখুন :