আন্তর্জাতিক ডেস্ক: [২] এমন নিরুত্তাপ হোলি কি কখনও দেখেছে দিল্লি? অন্তত গত ২৫ বছরে তো নয়। করোনা-আতঙ্কে ম্লান দিল্লির হোলি। হোলির দিন রাস্তায় নামল না দিল্লির মানুষ। গান-বাজনাসহ রঙের উৎসবে মাতল না রাজধানী শহর। ‘হোলি হ্যায়’ চিৎকারে সরব হল না মহল্লাগুলো। অধিকাংশ এলাকায় অল্প কিছু শিশু বাড়ির বাইরে বেরিয়ে রঙের উৎসবে কিছুক্ষণের জন্য সামিল হয়েছে মাত্র। কিন্তু অধিকাংশ দিল্লিবাসী ঘরের নিরাপদ ঘেরাটোপে নিজেদের বন্দি রেখে একটা ছুটির দিন কাটাতেই পছন্দ করেছেন। কারণ, করোনাভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্ক। তার ওপর পুলিশ আবার বেশ কিছু জায়গায় ঘোষণা করেছে, জল বা বেলুন ছুঁড়লে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
[৩] একসময় দিল্লিতে রাজনীতিকরা হোলির দিন রঙের উৎসবে মাততেন। অটল বিহারী বাজপেয়ী যখন প্রধানমন্ত্রী, তখন লালকৃষ্ণ আদবাণীর বাড়ির হোলি উৎসব বিখ্যাত ছিলো। যশবন্ত সিনহা ঢোল বাজাচ্ছেন, গান হচ্ছে, আবির উড়ছে, এসব দৃশ্য ছিলো স্বাভাবিক।এমনকী রঙ গোলা জলও থাকত। গত বছর পর্যন্ত রাজনাথ সিংসহ অনেক মন্ত্রীর বাড়িতে রীতিমতো হইহই করে হোলি খেলা হয়েছে। কিন্তু এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করে দিয়েছেন, করোনাভাইরাসের জন্য হোলি মিলনে অংশ নেবেন না। তারপর বিজেপির কোনও মন্ত্রী বা নেতা প্রকাশ্যে হোলি খেলেননি। কংগ্রেস ও বিজেপির প্রধান নেতারা তো মঙ্গলবার হোলি না খেলে মধ্য প্রদেশে সরকার ফেলা ও বাঁচানোর জন্য সকাল থেকে বৈঠক করে গিয়েছেন।
[৪] কিছুদিন আগেই হিংসায় বিধ্বস্ত হয়েছে উত্তর পূর্ব দিল্লি। সেখানেও হোলি খেলা খুব বেশি হয়নি। তবে করোনা আতঙ্ক নয়, উত্তর পূর্বের এলাকাগুলোয় হিংসার আতঙ্ক এখনও ছড়িয়ে রয়েছে। অবস্থা আগের থেকে কিছুটা ভালো হলেও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। সন্ধ্যা ছয়টার পর দোকান খোলা থাকছে না। পোড়া বাড়িগুলো এখনও সেই হিংসার ক্ষত নিয়ে পড়ে আছে। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, মাথার ওপর ছাদ হারিয়েছেন, নিজেদের সম্বল হারিয়েছেন, তাঁরা কী করে হোলির আনন্দ করবেন? তাঁদের জীবন বদলে দিয়েছে হিংসা। দিল্লির অন্য অংশে স্পর্শকাতর এলাকায় প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল।
[৫] আর বাকি দিল্লিতে ছেয়ে রয়েছে করোনার আতঙ্ক। সরকারের তরফে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য যত প্রচারই করা হোক না কেন, লোকের মনে ভয় ঢুকে গিয়েছে। আর সরকারও বারবার করে জনসমাগম না হওয়ার আবেদন জানিয়েছে। লোকে তাই আপাতত ঘরের মধ্যে থাকাই পছন্দ করছেন। হোলি খেলতে হলে, নিজেদের বাড়ির ভিতরই খেলেছেন। সংক্ষিপ্ত, হইচই, নিয়মরক্ষার খেলা। চিত্তরঞ্জন পার্ক, কালকাজি, দ্বারকা, নয়ডা, যমুনাপারের দিল্লি, পশ্চিম দিল্লি, সর্বত্রই ছবিটা একই।
সূত্র: ডিডাব্লিউ
আপনার মতামত লিখুন :