শিরোনাম
◈ ‘ইজতেমার নিয়ন্ত্রণ’ নাকি ‘সাদ কান্দালভি’- তাবলীগ সংকটের কারণ আসলে কী ◈  আমরা কিংস পার্টি নই, আমরা কিংস মেকার:  হাসনাত আব্দুল্লাহ (ভিডিও) ◈ ভোলা-২ আসনের সাবেক এমপি মুকুল গ্রেপ্তার ◈ অনলাইনে আয়কর পরিশোধে ফি বেঁধে দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক ◈ প্রায় অর্ধেক মানুষই জানে না তার ডায়াবেটিস ◈ তেজগাঁও থেকে বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ করলো কাস্টমস ◈ আশা করি নতুন উপদেষ্টাদের কাজ দেখে বিচার করবেন বাংলাদেশের জনগণ : মাহফুজ আলম ◈ উদ্বোধনের অপেক্ষায় ৫২ জেলায় পানির গুণগতমান পরীক্ষাগার, মিলবে বিশুদ্ধ পানি ◈ যে কারণে পুরুষের চার বিয়ে করার কথা বললেন এই অভিনেত্রী হীরা সুমরো ◈ এখনো রাস্তায় আহতরা, উপদেষ্টাদের হাজির হওয়ার আলটিমেটাম

প্রকাশিত : ০৭ মার্চ, ২০২০, ০৭:০৫ সকাল
আপডেট : ০৭ মার্চ, ২০২০, ০৭:০৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

৭ মার্চের ভাষণ, একটি নতুন দেশের অভ্যুদয় বার্তা

 

ফরিদুন্নাহার লাইলী: স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস এবং বাঙালির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় উজ্জ্বল এক দিন ৭ মার্চ। একটি অমর কবিতার জন্মদিন। পাশাপাশি বাঙালির জন্য জাতীয়তাবোধ ও স্বাধিকারবোধে উদ্দীপ্ত হওয়ার দিন। বাংলাদেশের ইতিহাসে অনেক দিনের মধ্যে এ দিনটি অন্যতম এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন।
১৯৭১ সালের সেইদিন বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ শোনার জন্যে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) লাখ লাখ মুক্তিকামী জনতা জড়ো হয়েছিলো। পাকিস্তানি রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে সেই ভাষণে বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা দেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। বলা যায় স্বাধীনতার ঘোষণার প্রথম পর্ব ছিলো এই ভাষণ। পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে এভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বানের ফল ভালো হবে না তা বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছেন, তাই তিনি সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই তার জনগণের উদ্দেশ্যে বলেছেন ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে... আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি...’।

তিনি শত্রুর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান এবং ইয়াহিয়া খানের সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। একদিকে রাষ্ট্রপতি জেনারেল ইয়াহিয়ার নির্দেশ যেতো, অপরদিকে ধানম-ি ৩২ নম্বর সড়ক থেকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ যেতো, কিন্তু বাংলার মানুষ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মেনে চলতেন। অফিস, আদালত, ব্যাংক, বীমা, স্কুল-কলেজ, গাড়ি, শিল্প কারখানা সবই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে চলেছে। ইয়াহিয়ার সব নির্দেশ অমান্য করে অসহযোগ আন্দোলনে বাংলার মানুষের সেই অভূতপূর্ব সাড়া ইতিহাসে বিরল ঘটনা।

এই দেশের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করতে করতেই বঙ্গবন্ধুর বেড়ে উঠা। জনগণের অধিকার প্রশ্নে স্কুল জীবন থেকে প্রতিবাদী ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ন্যায়ের পক্ষে সবসময় ছিলেন উচ্চকণ্ঠ। তাই তো তাকে বারবার যেতে হয়েছে জেলে। যিনি নিরন্তর দেশের মানুষের কল্যাণের কথা ভাবতেন তার জন্য এই বিষয় বোঝা কঠিন ছিলো না যে, এই দেশের মানুষকে পাকিস্তানিরা বেশিদিন তাদের শৃঙ্খলে রাখতে পারবে না। তাই তো বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানিদের উদ্দেশ্য করে ৭ মার্চের ভাষণে দৃঢ়কণ্ঠে বলেছেন, ‘৭ কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমরা যখন মরতে শিখেছি তখন কেউ আমাদের দাবাতে পারবে না’।

এই ভাষণের মধ্য দিয়ে তিনি জনগণকে স্বাধীনতা সংগ্রামের দিকনির্দেশনাও দিয়েছিলেন। দেশকে স্বাধীন ও মুক্ত করার সুদৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি উত্তাল জনসমুদ্রে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেন, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেবো, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। পরক্ষণেই তিনি দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করেনÑ এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। একাত্তরে অগ্নিঝরা মার্চে যে ভাষণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক এসেছিলো, স্বাধীনতার পঞ্চম দশকে এসে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন শেখ হাসিনা এখনো প্রেরণা নেন বাবার সেই ভাষণ থেকে। ৭ মার্চে আওয়ামী লীগের এক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে এই ভাষণটি যখন বাজানো হয়, আমরা যখন শুনি, তখন মনে হয় যেন নতুন করে শুনছি’। মূলত ৭ মার্চের ভাষণই একটি জাতির জন্ম দিয়েছে। এ কালজয়ী ভাষণের মধ্য দিয়েই বঙ্গবন্ধু শুধু একজন স্বাধীনতার মহানায়কই নন, কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছেন।

যখন বাঙালি জাতি পরাধীনতার দীর্ঘ প্রহর শেষে কাক্সিক্ষত স্বাধীনতার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলো তখনই বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির জন্য দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন তার ঐতিহাসিক ভাষণে। এ ভাষণের স্তরে স্তরে ছিলো এ দেশে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শাসনের পরিসমাপ্তির ঘোষণা ও বিবরণ। সেইসঙ্গে ছিলো পৃথিবীর মানচিত্রে একটি নতুন দেশের অভ্যুদয় বার্তা। দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি নির্মলেন্দু গুণ তার কবিতায় যথার্থই বলেছেনÑ ‘গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তার অমর-কবিতাখানি : ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম/এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের’। লেখক : কৃষি ও সমবায় সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং সাবেক সংসদ সদস্য

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়