আমাদের সময় : দুই মাসের মধ্যে পদ্মা সেতুর সব পিলার স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হবে। ইতোমধ্যে স্থাপিত পিলারে স্প্যান বসিয়ে মূল সেতুর ৩৬০০ মিটার দৃশ্যমান হয়েছে। ২০২১ সালের জুনের মধ্যে সেতুটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। পদ্মা সেতুর পিলার ৪২টি। ২৯৮টি পাইলের ওপর উঠছে এসব পিলার। এ পিলারগুলোর ওপর বসানো হবে ৪১টি স্প্যান। দ্বিতল এ সেতুর নিচের অংশে থাকবে রেললাইন। ওপরের অংশ দিয়ে চলবে গাড়ি। ট্রেন চলাচলের জন্য স্প্যানে বসবে দুই হাজার ৯৫৯টি সø্যাব।
ইতোমধ্যে সেতুর ৪২টি পিলারের ৩৮টির কাজ শেষ। বাকি রয়েছে ১০, ১১, ২৬ ও ২৭ নম্বর পিলার। পিয়ার-১০ ও ১১ স্থাপনের কাজ শেষ পর্যায়ে, যা এই মাসেই শেষ হবে। সব পিলারের কাজ শেষ হবে আগামী দুই মাসের মধ্যে।
পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের নভেম্বরে। পরে দুই দফা মেয়াদ বাড়িয়ে তা ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। তবে নকশা জটিলতায় এ মেয়াদ আরও দেড় বছর বাড়ানো হয়েছে। এ হিসাবে ২০২১ সালের জুনে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের কথা বলা হচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, আগামী দেড় বছরে সেতুটির পুরো কাজ শেষ না-ও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ২০২২ সালের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে। অবশ্য জাতীয় সংসদে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, ২০২১ সালের জুনে পদ্মা সেতুতে গাড়ি চলাচল করবে।
তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্পের মেয়াদের পাশাপাশি ব্যয়বৃদ্ধির সম্ভাবনাও রয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, সেতুর ২২টি পিলারে পাইলের সংখ্যা বৃদ্ধি, পরামর্শক খাতে ব্যয়বৃদ্ধি, সেতুর নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেড খাতে ব্যয়বৃদ্ধির পাশাপাশি আরও কিছু খাতে ব্যয় বেড়েছে। নির্মাণশেষে প্রকল্পটির চ‚ড়ান্ত ব্যয় নির্ধারণ করা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
গত ডিসেম্বর পর্যন্ত পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামোর নির্মাণকাজের অগ্রগতি দেখানো হয়েছে ৮৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। এই সময়ে নদীশাসনের কাজ হয়েছে ৬৬ শতাংশ। তবে পদ্মা সেতুর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ভিন্ন তথ্য। সেতু বিভাগে জমা দেওয়া তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মূল সেতুর অবকাঠামোর নির্মাণ অগ্রগতি ছিল ৭৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আর নদীশাসন কাজের অগ্রগতি ৬৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। অর্থাৎ মূল সেতুর অগ্রগতি প্রায় ১০ শতাংশ বেশি দেখিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ। আর নদীশাসনের অগ্রগতি প্রায় আড়াই শতাংশ কম দেখানো হয়েছে।
পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামোর নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হয় ২০১৪ সালের নভেম্বরে। প্রথমে চার বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। সবশেষ ২০২১ সালের জুনে নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যদিও বাস্তবে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাজেট প্রাক্কলন করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ। ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের ৬৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে। প্রকল্পের বাকি অর্থ তিন বছরে (২০১৯-২০ থেকে ২০২১-২২ পর্যন্ত) ব্যয় হবে। এ ক্ষেত্রে চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরে পদ্মা সেতুর জন্য বরাদ্দকৃত পুরো অর্থ ব্যয় হচ্ছে না। আর বাকি অর্থ ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যয় করা হবে। এ জন্য সম্ভাব্য প্রাক্কলনও চ‚ড়ান্ত করা হয়েছে।
তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ১৯ হাজার ৪২৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছর প্রকল্পটির জন্য বাজেট বরাদ্দ ছিল পাঁচ হাজার ৩৭০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। কিন্তু বাস্তব অগ্রগতি কম হওয়ায় চার হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় হচ্ছে না। তাই চলতি অর্থবছরের জন্য সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাব করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :