আমাদের সময় : রাস্তা তৈরিতে ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় শিক্ষিকার পায়ে দড়ি বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর থানায় তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ও পঞ্চায়েত উপ-প্রধানের নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটে।
ওই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। পরে অভিযুক্ত নেতাকে বরখাস্ত করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার জানায়, দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর থানার নন্দনপুর থেকে হাপুনিয়া পর্যন্ত রাস্তা তৈরির কাজ চলছে। যে শিক্ষিকাকে হেনস্থা করা হয়েছে তিনি জানান, ওই রাস্তাটি যেখান দিয়ে যাচ্ছে তাতে তার জমি পড়েছে। ২৪ ফুট প্রস্থের এ রাস্তার পুরোটাই তার জমি দিয়ে নিতে চাচ্ছে স্থানীয় পঞ্চায়েত। তিনি ১২ ফুট তার জমি দিয়ে এবং বাকি ১২ ফুট অন্যের জমি দিয়ে রাস্তা নিতে বলাতেই বাধে বিপত্তি।
ওই শিক্ষিকা বলেন, ‘আমি ১২ ফুট চওড়া জমি ছাড়তে চেয়েছিলাম। বলেছিলাম, বাকি ১২ ফুট অন্য পাশ থেকে নিতে। কিন্তু পঞ্চায়েত ২৪ ফুট রাস্তাই আমার জমির উপর দিয়ে বানাবে। তাতে আমি বাধা দেওয়ায় পঞ্চায়েত উপ-প্রধান অমল সরকার এবং তার লোকজন আমাকে আর আমার দিদিকে (বোন) রাস্তায় ফেলে মারধর করল। পায়ে দড়ি বেঁধে রাস্তা দিয়ে টানতে টানতে নিয়ে গেল।’
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে দেখা যায়, একটি নির্মাণাধীন রাস্তায় দুই নারী বসে রয়েছেন। অনেকে তাদের ঘিরে রয়েছেন। এরপর একটি ট্রাক্টর নিয়ে এসে প্রথমে তাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু ট্রাক্টর দেখেও তারা না ওঠায়, বেশ কয়েকজন মিলে চড়াও হন এক নারীর ওপর। তারপরই দড়ি দিয়ে তার পা বেঁধে ফেলা হয়। পরে চ্যাংদোলা করার ভঙ্গিতে দুই হাত ধরে রাস্তা দিয় টেনে নিয়ে একটি টিনের ঘরের সামনে বেঁধে রাখা হচ্ছে তাকে।
দ্বিতীয় নারীকেও টেনে-হিঁচড়ে সেখানে এনেই ফেলা হচ্ছে। এই দ্বিতীয় নারীকে বাঁধা হয়নি বলে তিনি ফের রাস্তায় নেমে যাচ্ছেন। তখন তাকে ধাক্কা মেরে রাস্তার ধারে ফেলে দেওয়া হয়। তারপর লাঠি দিয়ে মারা হয়। অশ্রাব্য গালিগালাজও করা হয়।
আক্রান্ত শিক্ষিকার দাবি, পুলিশ প্রথমে তার অভিযোগ নিতে চায়নি। উল্টো শান্তি ভঙ্গের অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধেই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। হাসপাতাল থেকে ফেরার পরে তিনি ফের থানায় অভিযোগ করতে যান। দ্বিতীয়বারে পুলিশ তার অভিযোগ নিয়েছে।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূলের নেত্রী অর্পিতা ঘোষ বলেন, ‘যে অভিযোগ ওই উপ-প্রধানের বিরুদ্ধে উঠেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা তাকে সাসপেন্ড করেছি। প্রশাসনকে বলেছি, তদন্ত করে দেখুন। তদন্তে কী উঠে আসে তা দেখে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’
স্থানীয় বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদারের দাবি, ওই শিক্ষিকা এবং তার পরিবার বিজেপির সমর্থক। সেই কারণেই তাদের জমির দখল নিয়ে রাস্তা তৈরির চেষ্টা চলছে।
সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘নন্দনপুরে যে ঘটনা ঘটেছে, তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানাচ্ছে। নারীদের উপরে প্রকাশ্যে এই রকম নির্যাতন কোনো রাজনৈতিক দল কীভাবে করতে পারে, আমার জানা নেই। নারীদের এই সম্মানহানিই বলে দিচ্ছে এ রাজ্যের শাসকের পতন আসন্ন।’
আপনার মতামত লিখুন :