ড. মোহাম্মদ আতীকুর রহমান (২৪ জানুয়ারি ২০২০) : খিলাফত শব্দের আভিধানিক অর্থ প্রতিনিধিত্ব করা বা অন্য কারও স্থানে স্থলাভিষিক্ত হওয়া। আর খলিফা শব্দের অর্থ প্রতিনিধি, স্থলাভিষিক্ত। এই খলিফা শব্দের বহুবচন হচ্ছে খুলাফা এবং খালাইফ। ইসলামে ‘খিলাফত’ এমন এক শাসনব্যবস্থার নাম, যা মহান আল্লাহর বিধান ও মহানবী (সা:)এর সুন্নাহ দ্বারা পরিচালিত। সূত্র : নয়াদিগন্ত
এই শাসনব্যবস্থায় সার্বভৌমত্বের অধিকারী একমাত্র মহান আল্লাহ। তিনিই বিশ্বজগতের স্রষ্টা এবং সর্বোচ্চ শাসক। মানুষের মর্যাদা হলো, সে সর্বোচ্চ শাসকের প্রতিনিধি বা খলিফা এবং তার রাজনৈতিক ব্যবস্থা হবে সর্বোচ্চ শাসকের বিধানের অধীন। খলিফার কাজ হলো, সর্বোচ্চ শাসক আল্লাহর আইনকে তাঁর প্রকৃত লক্ষ্য অনুযায়ী কার্যকর করা এবং তাঁর নির্দেশিত পথে রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করা।
এ সম্পর্কে সাহাবিদের অভিমত, খিলাফত একটি নির্বাচনভিত্তিক পদমর্যাদা। মুসলমানদের পারস্পরিক পরামর্শ এবং তাঁদের স্বাধীন মতামত প্রকাশের মাধ্যমেই তা কায়েম করতে হবে। বংশানুক্রমিকভাবে বা বল প্রয়োগের দ্বারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া কিংবা নেতৃত্ব দেয়া খিলাফত নয়, বরং তা রাজতন্ত্র। খিলাফত ও রাজতন্ত্রের যে স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ধারণা সাহাবিরা পোষণ করতেন, হজরত আবু মূসা আল-আশআরি (রা:) তা ব্যক্ত করেছেন এভাবে, খিলাফত হচ্ছে তাই, যা প্রতিষ্ঠা করতে পরামর্শ নেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে হয়েছে, তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার ও সৎকর্মশীল আল্লাহ তাঁদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, তিনি অবশ্যই তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব দান করবেন (সূরা আন নূর : ৫৫)।
ইসলামে নবুওয়াতের পদমর্যাদার পর এই খিলাফত ব্যবস্থাই সর্বাধিক মর্যাদাসম্পন্ন। এই পদটি পবিত্র দায়িত্বপূর্ণ পদ। ইসলামে খিলাফতের দায়িত্ব ও কর্তব্য অত্যন্ত ব্যাপক ও সর্বাত্মক। যাবতীয় বৈষয়িক, ধর্মীয় ও তমদ্দুনিক উদ্দেশ্যের পূর্ণতা বিধান এরই ভিত্তিতে হয়ে থাকে। রাসূল (সা:) এর কার্যাবলি চালু ও প্রতিষ্ঠিত রাখা এবং যেকোনও প্রকার মিশ্রণ বা ভেজাল থেকে সংরক্ষণ ও উৎকর্ষ সাধন করা খিলাফতের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত।
কুরআন ও হাদিস হতে খলিফার যোগ্যতা ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে যা কিছু জানা যায়, সে আলোকে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, খুলাফায়ে রাশেদিনই ছিলেন মুসলিম জাহানের খলিফা হওয়ার সর্বাধিক উপযুক্ত। কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত গুণ ও বৈশিষ্ট্য তাঁদের মধ্যে পূর্ণ মাত্রায় বিদ্যমান ছিলো। অনুলিখন : মাজহারুল ইসলাম