শিরোনাম
◈ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন ভারত ◈ যে কারণে লাল গালিচা ব্যবহার করে খাল খননের উদ্বোধন করেন ৩ উপদেষ্টা ◈ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমেই সংস্কার করতে হবে: তারেক রহমান ◈ আমলা ও মিডিয়া আওয়ামী অপরাধের বৈধতা উৎপাদনে কাজ করছে : হাসনাত ◈ নির্বাচনে আ. লীগের অংশগ্রহণ কমিশনের বিষয় নয়: ইসি সানাউল্লাহ (ভিডিও) ◈ শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান, কঠোর আন্দোলনের হুঁ.শিয়ারি শিক্ষার্থীদের (ভিডিও) ◈ রাজশাহীর বিদেশি ক্রিকেটাররা টাকা না পাওয়ায় হোটেল ছাড়ছেন না ◈ ভারত থেকে চালবাহী দুটি জাহাজ এল মোংলা বন্দরে ◈ প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের বিদেশগামীদের জন্য সতর্কবার্তা ◈ তিতুমীর কলেজকে বিশেষ কোনও সুবিধা দেওয়ার সুযোগ নেই: শিক্ষা উপদেষ্টা

প্রকাশিত : ১৪ জানুয়ারী, ২০২০, ০৯:০৫ সকাল
আপডেট : ১৪ জানুয়ারী, ২০২০, ০৯:০৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শেয়ারবাজার শয্যাশায়ী, ৫৬ মাসের মধ্যে ডিএসই সূচক সর্বনিম্ন অবস্থানে

সময়ের আলো: আস্থাহীনতার চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে দেশের শেয়ারবাজার। ধস নামতে নামতে একেবারে খাদের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি এই পুঁজিবাজার। ২০১৮ সাল থেকে টানা দুটি বছর কোনোরকম ধুঁকে ধুঁকে চলছে বাজারটি, অথচ দেখার কেউ নেই। এই অবস্থার মধ্যে সোমবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৮৮ পয়েন্ট। সূচকটি নেমে এসেছে ৪১২৩ পয়েন্টে, যা গত ৫৬ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থান। এর আগে ২০১৫ সালের ৭ মে সূচকটি ৪ হাজার ১২২ পয়েন্ট হয়েছিল। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক কমেছে ২৩৮ পয়েন্ট। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের হতাশা আরও বাড়ল।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, কিছু খারাপ উদ্যোক্তার কারণে শেয়ারবাজারের এই করুণ দশা। সরকার তাদের শাস্তির কোনো ব্যবস্থা না করায় তারা বাজার নিয়ে নোংরা খেলা খেলেই যাচ্ছে। এ বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ সময়ের আলোকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা দেখে আমি হতভম্ব। বাজার তো এত নিচে নেমে যাওয়ার কথা ছিল না। পুঁজিবাজার নিয়ে আমি এত লেখাপড়া করেও বাজারের বর্তমান অবস্থা দেখে আমি নিজেই কেমন যেন অবুঝের মতো হয়ে যাচ্ছি। শেয়ারের দাম পড়তে পড়তে এমন পর্যায়ে চলে গেছে সেটি অবিশ্বাস্য।’

তিনি বলেন, বাজার নিয়ে আস্থাহীনতার রচম পর্যায়ে পৌঁছেছেন বিনিয়োগকারীরা। এ কারণে লাখ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়ে বাজার ছেড়ে চলে গেছে। এভাবে তো আর চলতে পারে না। এতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত তো হচ্ছেই, সবচেয়ে বড় কথা দেশের অর্থনীতির ক্ষতি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। সরকার কেন যে শেয়ারবাজারের দিকে সুনজর দিচ্ছে না, অর্থমন্ত্রীই বা কেন বাজারটা নিয়ে উদাসীন, আমার মাথায় ঢোকে না। আশা করব দেশের অর্থনীতির স্বার্থে সরকার বাজারের দিকে দ্রুত সুনজর দেবে।

সোমবার শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ধস নেমেছে। সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দরপতনে এদিন মূল্য সূচকের বড় পতনে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ৫৬ মাস আগের অবস্থানে চলে গেছে। শেয়ারবাজারে এমন বড় দরপতন গত সপ্তাহ জুড়েই ছিল। ফলে গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচকের ২৬১ পয়েন্ট পতন হয়। তবে চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার সূচকের কিছুটা উত্থান হয়। কিন্তু পরের কার্যদিবসে সোমবার আবারও বড় পতন হলো।

এমন ধারাবাহিক বড় পতনের কবলে ডিএসইর বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচক বেশ আগেই শুরুর অবস্থান থেকেও নিচে নেমে গেছে। সোমবার ইসলামী শরিয়াহিভিত্তিক পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচকটিও শুরুর অবস্থানের নিচে চলে গেছে। প্রধান মূল্যসূচক এমন জায়গায় অবস্থান করছে এটিও যেকোনো সময় শুরুর অবস্থানের নিচে চলে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শেয়ারবাজারের এমন ভয়াবহ পতনের কবলে পড়ে প্রতিনিয়ত পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। দিন যত যাচ্ছে, তাদের বোবা কান্না ততই বেড়ে চলছে। পুঁজিহারা এসব বিনিয়োগকারী কোনো দিশা খুঁজে পাচ্ছেন না। অনেকে শেয়ারবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। আবার যারা এখনও শেয়ারবাজারে আছেন তাদের অনেকেই বাজার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজছেন। এভাবে ক্রমেই পুঁজিবাজার থেকে হারিয়ে যাচ্ছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। যেমন গত পাঁচ বছরে দেশের পুঁজিবাজার থেকে হারিয়ে গেছেন ৬ লাখ ৫০ হাজার বিনিয়োগকারী।

আবুল কালাম নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে এসে অনেকটাই নিঃস্ব হয়ে গেছি। বাজার থেকে বেরিয়ে যাব তারও কোনো পথ পাচ্ছি না। সবাই ২০১০ সালের ধসের কথা বলেন। কিন্তু এখন শেয়ারবাজারের যে অবস্থা তা ২০১০ সালের থেকেও খারাপ। এ বাজারে যত অপেক্ষা করা হচ্ছে লোকসান ততই বাড়ছে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, সোমবার ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। এ দিন ডিএসইতে মাত্র ২১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩১৩টির। আর দুটি প্রতিষ্ঠানের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৮৮ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ১২৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের দিন এ সূচকটি ১৫ পয়েন্ট বাড়ে। অবশ্য তার আগের পাঁচ কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমে ২৬১ পয়েন্ট হয়। এতে শেষ সাত কার্যদিবসে সূচকটি কমল ৩৩৪ পয়েন্ট।

এমন পতনের কবলে পড়ে ডিএসইএক্স ২০১৫ সালের ৭ মে’র পর সর্বনিম্ন অবস্থা নেমে গেছে। সেই সঙ্গে সূচকটি প্রায় শুরুর কাছাকাছি চলে এসেছে। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক হিসেবে ডিএসইএক্স ৪ হাজার ৫৫ পয়েন্ট নিয়ে যাত্রা শুরু করে ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি। এ হিসাবে শুরুর অবস্থান থেকে সূচকটি এখন মাত্র ৬৮ পয়েন্ট বেশি আছে।

প্রধান মূল্যসূচকের থেকেও করুণ দশা বিরাজ করছে ডিএসইর অন্য সূচকগুলোর। বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচক ডিএসই-৩০ ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি চালু হয়। সে সময় এ সূচকটি ছিল ১ হাজার ৪৬০ পয়েন্টে। ধারাবাহিক দরপতনের কারণে এ সূচকটি এখন ১ হাজার ৩৮৭ পয়েন্টে নেমে গেছে।

ডিএসইর আর একটি সূচক ‘ডিএসই শরিয়াহ’। ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে ২০১৪ সালের ২০ জানুয়ারি এ সূচকটি যাত্রা শুরু করে। শুরুতে এ সূচকটি ছিল ৯৪১ পয়েন্টে। সোমবার লেনদেন শেষে সূচকটি ২০ পয়েন্ট কমে ৯২৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে বৃহৎ বা বড় মূলধনের কোম্পানির জন্য চলতি বছরে ‘সিএনআই-ডিএসই সিলেক্ট ইনডেক্স (সিডিএসইটি)’ নামে নতুন সূচক চালু করেছে ডিএসই। বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি থেকে অফিসিয়ালি ডিএসইর ওয়েবসাইটে সূচকটি উন্মুক্ত করা হয়। ৪০টি কোম্পানি নিয়ে শুরু হওয়া সূচকটির ভিত্তি ভ্যালু ধরা হয় ১০০০ পয়েন্ট। তবে এখন সূচকটি ৮৩৩ পয়েন্টে নেমে এসেছে।
সূচকের করুণ দশার মধ্যে দেখা দিয়েছে তারল্য সঙ্কটও। গত বছরের ৫ ডিসেম্বরের পর ডিএসইর লেনদেন আর লেনদেন ৪শ কোটি টাকার ঘর স্পর্শ করতে পারেনি। বাজারটিতে লেনদেনের পরিমাণ ২০০-৩০০ কোটি টাকার ঘরে আটকে আছে। সোমবার লেনদেন হয়েছে ২৮৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২৬০ কোটি ৮২ লাখ টাকা।

দেশের অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দুরবস্থায় রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। বাজারটির সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৪৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৫৬৩ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ২৫২ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৩০টির, কমেছে ২০৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টির দাম।

শেয়ারবাজারের এই দুর্দশা কাটাতে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে অধ্যাপক আবু আহমেদ সময়ের আলোকে বলেন, সরকারই পারে এই করুণ অবস্থার উন্নতি ঘটাতে। সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সরকারি ব্যাংকগুলোকে এখন শেয়ার কিনতে হবে এ ছাড়া বাজার তোলার আর কোনো বিকল্প উপায় নেই। তা ছাড়া অর্থমন্ত্রীকে বাজারের দিকে সুনজর দিতে হবে। কিছু মন্দলোক বাজার নিয়ে নোংরা খেলা খেলছে, তাদের শাস্তি দিতে হবে। এটা না করলে ব্যাংক খাতের পর শেয়ারবাজারও একেবারে আস্থাহীন হয়ে পড়বে। তাহলে সরকার কীভাবে ৮ শতাংশ জিডিপি গ্রোথ অর্জন করবে তা আমার মাথায় আসে না। সুতরাং যা কিছু করার সরকারকেই করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়