শিরোনাম
◈ প্রধান উপদেষ্টা নিজেই সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ করলেন? ◈ সান্তোসে নেইমারের রাজসিক প্রত্যাবর্তন ◈ আখেরি মোনাজাত চলাকালে ‘ড্রোন আতঙ্ক, আহত অন্তত ৪০ ◈ গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের বিক্ষোভ, মিরপুর রোডে যান চলাচল বন্ধ ◈ সংক্ষিপ্ত মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব  ◈ বাংলাদেশের জন্য আবারও ১২০ কোটি রুপির সহায়তা বরাদ্দ রাখলো ভারত ◈ গোপনে বাংলাদেশে এসে টিউলিপের তথ্য নিয়ে গেছে যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দারা ◈ ছেলের বিয়ে থেকে আওয়ামী লীগ নেতা ফখরুল আটক ◈ ভাঙা ঘরে চাঁদের আলো ছড়ালেন নন্দিনী, উপহার পাঠালেন তারেক রহমান ◈ টাকা জমা রাখলে কোন ব্যাংকে কত মুনাফা পাবেন জেনে নিন

প্রকাশিত : ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ০৯:৫৩ সকাল
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ০৯:৫৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আংশিক কমিটি নিয়ে ক্ষুব্ধ ঢাবি ছাত্রদলে এক অংশ, তাদের প্রশ্ন এ কমিটির রাজনৈতিক লক্ষ্য কী?

শিমুল মাহমুদ : বিতর্ক-বিদ্রোহ পিছু ছাড়ছে না জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের। ২৭ বছর পর কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি করতে গিয়ে বড় বিদ্রোহের মুখে পড়ে বিএনপির ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনটি। আর কাউন্সিলের পর অসন্তোষের শুরু হয় মূলত ৬০ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ‘বিবাহিতদের বাদ পড়া’ নিয়ে। পরে সদ্য ঘোষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯১ সদস্যের কমিটিতে সংগঠনটির অনেক কর্মীবান্ধব, ত্যাগী, পরিশ্রমী ও নির্যাতিত নেতাকর্মী বাদ পড়ায় ঢাবি ছাত্রদলে অসন্তোয় দেখা দেয়। আবার অনেকের ক্ষেত্রে যথাযথ মূল্যায়ন না পাওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।

বর্তমান আংশিক কমিটির বিষয়ে তারা মনে করেন, নিজেরা যেমন উপযুক্ত পদ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, তেমনি মূল সংগঠন বিএনপিও অন্তত ডজনখানেক ত্যাগী নেতা হারিয়েছে।

বর্তমান কমিটির একজন নেতা বলেন, ২৮ বছর পর সরাসরি নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের হাতে এমন অনির্বাচিত, স্ববিরোধী’ কমিটি এসেছে। এ কমিটির রাজনৈতিক লক্ষ্য কী’ এমন প্রশ্ন এখন ছাত্রদলের উদ্বিগ্ন।

হতাশার কারণ হিসেবে নেতারা বলছেন, সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, ভাই-গ্রুপ, এলাকাভিত্তিক ইজম। তারা এই নির্বাচন পদ্ধতিরও সমালোচনা করেছেন। প্রধানত, ছাত্রদলে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ বিধি ছিলো, যে প্রার্থী অন্তত ১০ শতাংশ ভোট পেতে ব্যর্থ হবেন, তাকে পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখা হবে না। আর এই নিয়মটি তৈরিতে ভূমিকা রেখেছেন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। তা অনুমোদন দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আর এই ৬০ জনের বিতর্কিত তালিকাটিও এসেছে লন্ডন থেকেই।

বিষয়টিতে নিয়ে ক্ষুব্ধ সংগঠনটির একটি বৃহৎ অংশ। এর জেরে রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও ঢাবি শাখার নতুন নেতৃত্ব ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর কর্মসূচিতে কয়েকদফা ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এছাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন ও রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনেও ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। এ অবস্থায় বাদ পড়াদের মধ্যে যারা যোগ্য তাদের পরবর্তীতে কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তবে তা সময়স্বাপেক্ষ বলে জানিয়েছেন তারা।

ঢাবি শাখায় যারা বাদ পড়লেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সাবেক হওয়া কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম ফকরুল হাসানের স্থান হয়নি নতুন কমিটিতে। হলো ইউনিটের সদস্য সচিবদের মধ্যে বাদ পড়েছেন- মনজুরুল আলম রিয়াদ (অমর একুশে হল), মোস্তাফিজুর রহমান রুবেল (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল)। বিভিন্ন হলের যুগ্ম আহবায়কদের মধ্যে বাদ পড়েছেন- সাফি ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, মোহাম্মদ শামিম আকতার শুভ, ইউনুস পিটু ও কামরুজ্জামান নাহিন (সুর্যসেন হল), নাদির শাহ পাটোয়ারী ও রিয়াদ রহমান (জহুরুল হক হল), শিপন বিশ্বাস, কাউসার সরকার ও আফসার উদ্দিন (এস এম হল), শ্রী মিঠুন কুমার দাশ (যুগ্ম আহবায়ক জগ্ননাথ হল), নাজমুল হাসান, মওদুদ হোসেন ও হাসান-আল আরিফ (জসিমুদ্দিন হল), ফারহান আরিফ, নাকিব চৌধুরী, ওবায়েদুর রহমান, ছফী সামিত, সালেহ মো. আদনান, বায়েজিদ হোসেন ও ইউসুফ হোসেন খান (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল), রাশেদ আল আমিন শুভ (অমর একুশে হল), দ্বীন ইসলাম, মুহসিন ভুইয়া, জিহাদুল ইসলাম রঞ্জু ও সাইফুল ইসলাম শিমুল (মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল), মোহাব্বত আলী জয় (এফ আর হল), মাহফুজ আহমেদ ও মো হাসান (মুহসিন হল)। জাহাঙ্গীর আলম (জাহাঙ্গীর খান রাসেল) (আহবায়ক, জিয়া হল)।

এর মধ্যে শিপন বিশ্বাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে ছাত্রলীগের নির্মম হামলার শিকার হন। তবে সেসময় বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। আর হল সংসদের নির্বাচনের দিন সূর্যসেন হলে ভোট দিতে গিয়ে হামলার শিকার হন মোহাম্মদ শামিম আকতার শুভ। এছাড়াও বাদ পড়াদের তালিকায় রয়েছেন আরও অনেক ছাত্রনেতা।

এক দশক পর ডাকসু নির্বাচনের মধ্যদিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও ছাত্রদল সক্রিয় হওয়ার সুযোগ পায়। তবে ডাকসু ও হল সংসদে যারা প্রতিদ্বনদ্বিতা করেছেন, তারাও আছেন ঢাবি শাখার কমিটিতে বাদ পড়াদের সারিতে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- মো. শাহিনুর ইসলাম শাহিন (ছাত্রদল মনোনীত সাহিত্য সম্পাদক প্রার্থী ডাকসু), সাইদুর রহমান রাফসান (ভিপি প্রার্থী শহীদুল্লাহ হল ছাত্র সংসদ), মোহাম্মদ ইমন (জিএস প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ছাত্র সংসদ), সাচ্চু শাহনেওয়াজ (জিএস প্রার্থী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল), জারিফ রহমান (এজিএস প্রার্থী এ এফ রহমান হল সংসদ), নুরুল আমিন নূর (এজিএস প্রার্থী শহীদুল্লাহ হল), জুবায়ের আহমেদ (এজিএস প্রার্থী এস এম হল), মোঃ মিনহাজুল হক নয়ন (সাহিত্য সম্পাদক প্রার্থী মুহসিন হল ছাত্র সংসদ), মেহেদী হাসান (সাহিত্য সম্পাদক প্রার্থী জহুরুল হক হল ছাত্র সংসদ)।

এছাড়া অবমূল্যায়নের শিকার হয়েছেন ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেল থেকে জিএস প্রার্থী আলোচিত ছাত্রনেতা আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক। ডাকসুতে ছাত্রদলের ভিপি ও এজিএস প্রার্থী যুগ্ম আহ্বায়ক হলেও জিএস প্রার্থী হয়েছেন আহবায়ক কমিটির দুই নম্বর সদস্য। অথচ তার সেশন থেকে যুগ্ম আহ্বায়ক পদ এসেছে নতুন কমিটিতে। একইভাবে অবমূল্যায়নের শিকার বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার ঢাবির শহীদুল্লাহ হলের সদস্য সচিব গোলাম কিবরিয়াও। তিনি তার সেশনেরও নিচে স্থান পেয়েছেন।

কমিটিতে স্থান না পাওয়া ও অবমূূল্যায়নের অভিযোগে ঢাবি ছাত্রদলের চলমান অসস্তোষ নিয়ে কথা হয় ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে। বিষয়টির দ্রুত কোনো সমাধান না হলেও পরবর্তীতে বাদ পড়া যোগ্য ও ত্যাগীদের কমিটিতে স্থান দেবেন বলে তারা জানিয়েছেন। ছাত্রদল সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলসমূহে এখন আহবায়ক কমিটি আছে। এক মাসের মধ্যে সেগুলো পূর্ণাঙ্গ করার বিষয়ে ঢাবি শাখার নতুন নেতৃত্বকে নির্দেশে দেওয়া হয়েছে। এরপর সম্মেলনের মাধ্যমে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে। তখন ঢাবি ও কেন্দ্রীয় সংসদের কমিটিতে বাদ পড়াদের অনেকেই অন্তর্ভুক্ত হবে বলে তিনি জানান। কেন্দ্রীয় সংসদ ১৭১ সদস্যবিশিষ্ট হতে পারে বলে জানান ছাত্রদল সভাপতি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়