মুসবা তিন্নি : বাংলাদেশ হিজড়াদের নিয়ে সরকারি কোনো কার্যক্রম নেই: আদমশুমারিতে তাদেরকে গণনা করা হয় পুরুষের কাতারে আবার কখনো নারীদের কাতারে।
পুরুষ হলেও আমরা বিড়ম্বনার মধ্যে পড়ি নারী হলেও পড়ি- এমনটি দাবি করে আসছে ‘বাধন হিজড়া সংঘ’ নামের হিজড়াদের একটি সংগঠন। এই সংগঠনটি আরো দাবি করে যে, সরকারের কাছে ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর হিসেব আছে, আছে প্রতিবন্ধীদেরও আলাদা হিসেব। আমাদের বেলায় এসবের কিছুই নেই। এমন দাবিদাওয়া চলতেই থাকে। অতঃপর গত ১১ নভেম্বর ২০১৩ইং সন সোমবার বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী পরিষদে উত্থাপিত হিজড়াদের নারী-পুরুষের পাশাপাশি আলাদা লিঙ্গ বা তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতির বিলটি পাশ হয়েছে। স্বীকৃতি পরবর্তী নির্দেশ জারি করা হয় যে সার্টিফিকেট, ভিসা, বীমা, ব্যাংক সর্ব ক্ষেত্রে লিঙ্গ নির্ণয়ে তৃতীয় লিঙ্গের অপশন রাখতে হবে এবং তাদের পরিচয়ে হিজড়া-ই লিখতে হবে; অন্য শব্দ নয় । এ স্বীকৃতি হিজড়াদের জন্য সুখের। - ইসলামের কথা
ইসলাম ধর্মে হিজড়া : -
শান্তি এবং মানবতার ধর্ম, সাম্য আর উদারতার ধর্ম ইসলাম। স্নেহ-মমতা, সহনশীলতা, সহমর্মীতা আর উত্তম চরিত্রের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ইসলাম। ব্যক্তি পরিসর থেকে শুরু করে পরিবার-পরিমণ্ডল সমাজ এবং রাষ্ট্র ক্ষমতা তথা সর্বক্ষেত্রে মানুষের প্রকৃত অধিকার নিশ্চিত করেছে ইসলাম। মানবতার মুক্তির একমাত্র পথ ও সঠিক দিশা শাশ্বত ধর্ম ইসলাম। আসুন খুঁজে দেখি তৃতীয় লিঙ্গ (Trans gender) সম্পর্কে ইসলাম ধর্ম কি বলে।
ইসলাম ধর্মে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে কোনো সাপোর্ট নেই। তবে হ্যাঁ, হিজড়াদের নিয়ে ইসলাম ধর্মে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে। রয়েছে তার সম্পৃর্কিত বিধিবিধান। আমরা আগেই জেনেছি হিজড়া তিন শ্রেণির। প্রথম শ্রেণি পুরুষ হিজড়া। তাদের শরিয়ত পালনের সকল হুকুম আহকাম একজন সুস্থ পুরুষের হুকুম আহকামের মতো। সাধারণ পুরুষগণ যেভাবে শরিয়ত পালন করেন ইবাদত আমল আখলাক গঠন করেন পুরুষ হিজড়াও সেইভাবে করবে। দ্বিতীয় প্রকার হিজড়া হলো নারী হিজড়া। তাদের শরিয়ত পালনের সকল হুকুম আহকাম একজন সুস্থ নারীর হুকুম আহকামের মতো। সাধারণ নারীগণ যেভাবে শরিয়ত পালন করেন ঈমান আমল ইবাদত পর্দাপুশিদা আখলাক গঠন করেন নারী হিজড়াও সেইভাবে করবে। তৃতীয় শ্রেণির হিজড়া যারা প্রকৃত অর্থে হিজড়া। এই তৃতীয় শ্রেণির হিজড়াকেই ইসলাম হিজড়া বলে। আর অন্য দুই প্রকারকে ইসলাম হিজড়া বলে স্বীকৃতি দেয় না। আলরাহরুর রায়েক ৯/৩৬ কিতাবের বর্ণনা মতে এই তৃতীয় শ্রেণির হিজড়াদের পর্দা করতে হবে এবং নারীদের মতোই তার পর্দার বিধান মেনে চলতে হবে। সাধারণ নারীদের মতো হবে তাদের চলাফেরা। তাদের হজ ও সফরে গাইরে মাহরাম থাকতে হবে। তার একাকি সফর করতে পারবে না। সাক্ষীর ক্ষেত্রের তার একজন পুরুষের অর্ধেক কাজে দেবে। তারা ইমামতি করতে পারবে না, তারা বিচারক হতে পারবে না।
আলমউসুআতুল ফিকহিয়্যা আলকুওয়াইতিয়্যাহ এর ২০খণ্ডে ২২পৃষ্ঠায় রয়েছে এমন হিজড়াদের জন্য পুরুষের বা তার মতো হিজড়াদের ইমামতি করা জায়েজ নেই। তবে শুধু নারীদের ইমাম হওয়ার সুযোগ আছে। তবে মাকরুহ হওয়ার কথা জানিয়েছেন ওলামায়েকেরাম। একারণে তার একেবারে ইমামতি না করা-ই উত্তম। জামাতে নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে তারা কোথায় দাঁড়াবে? তারা পুরুষের পেছনে দাঁড়াবে না। সামনে দাঁড়ালে উভয়ের নামাজ বাতিল বলে গন্য হবে। তবে বসার ক্ষেত্রে সাধারণ নারীদের মতো করে বসবে।
আলরাহরুর রায়েক ৯/৩৩৬ এর বর্ণনা মতে তাদের জন্য সবধরণের অলঙ্কার পরিধান করা মাকরুহ। কারণ পুরুষের জন্য অলঙ্কার পরিধান করা হারাম আর নারীদের বেলায় মুবাহ। আর যেহেতু তার মধ্যে পুরুষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাই অলঙ্কার পরিধান করা মাকরুহ। (বাদায়ে সানাইয়ে ৭/৩২৯) এই শ্রেণি হিজড়াদের খতনা করাতে হবে। (আলমউসুআতুল ফিকহিয়্যা আলকুওয়াইতিয়্যাহ ২০/৩০)
ইসলাম ধর্মেই হিজড়াকে সঠিক মূল্যায়ণ করা হয়েছে। ইয়াহুদি বৌদ্ধসহ অনেক ধর্মেই হিজড়াদেরকে দেয়া হয় না কোনো সামাজিক মর্যাদা, করা হয় না বাছবিচার। এর এসব কারণেই হিজড়া সমাজ নিজেদের ভিন গ্রহের প্রাণী ভাবতে থাকে। যার শেষ পরিণত হয় কোনো দুর্ঘটনা। সমাজ বহির্ভূত কাজে হিজড়াসমাজ জড়িয়ে যায়। তাই আমাদের ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ঠ্র সর্বমহলের কর্তব্য হলো- হিজড়াদেরকে সঠিক পরিচর্যা করা। তারাও আমাদের মতো মানুষ আমাদের মতো সাধারণ চলাফেরার অধিকার রাখে।
আপনার মতামত লিখুন :