খালেদ মুহিউদ্দিন : পড়ে পড়ে মার খাচ্ছেন নুরুল হক নূর, এটি মনে হয় আমাদের সবচেয়ে প্রিয় দৃশ্য। তিনি মার খেলে আমরা কেউ প্রকাশ্যে হাসি, কেউ মুখ লুকিয়ে। কারণ? কারণ তিনি যেন আমাদের মনের মতো নন, ফিনফিনে পাঞ্জাবি পরেন না, সানগ্লাস জিনস আর কেডসেও খুব মানায় না তাকে। তিনি শেখ হাসিনাকে মায়ের মতো বলেন আবার ড. কামাল হোসেনের পাশে গিয়ে বসে থাকেন। কোটা সংস্কারের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে মার খেতে খেতেই দাবি আদায় করে ছাড়েন, তিন দশক পর অমিত শক্তিশালী ছাত্রলীগকে হারিয়ে জিতে নেন ডাকসু ভিপির চেয়ার। আমরা যারা তাকে মারিনি, তারাও বলি মার খেতে খেতে ভিপি হয়ে গেলো নূর। যেন মার খাওয়াই তার একমাত্র যোগ্যতা এবং অনেকদিন ধরে ছাত্রলীগ এবং ইদানীং মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ যেন দয়া করে কষ্ট করে তাকে মেরেছে। মেরে ভিপি বানিয়ে দিয়েছে।
এই মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চটি কারা একটু জানতে ইচ্ছে করে। সত্যানুরাগী হলে এর নাম হতে পারতো ‘নূরপ্রহার মঞ্চ’। কারণ তাকে মারা আর অপবাদ ছড়ানো ছাড়া তাদের আর কোনো কাজ আছে বলে তো মনে হয় না। শোনেন, ধর্মের মতো মুক্তিযুদ্ধের নাম ব্যবহার করে অতীতেও অপকর্ম হয়েছে, এখনো আপনারা করছেন। কিন্তু ভ- ধর্মব্যবসায়ীদের মতো আপনারা যারা মুক্তিযুদ্ধজীবী, অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধ বেচে খান, তারা ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার মতো শক্তিশালী হলেও আয়ু খুব সীমিত। তবে এ ধরনের মঞ্চকে জানতে হলে তার অধিকারীকে চিনতে হয়, ক্ষুদ্র আমার কী আর তাকে চেনা সম্ভব হবে? ছাত্রলীগের আলাপে ফিরে আসি। বুয়েট ছাত্র আবরারকে পিটিয়ে মেরেছেন বেশিদিন হয়নি। সেটি একটি দুর্ঘটনা বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা, এ রকম বলার সুযোগ আপনারা নিশ্চয়ই আর দিতে চান না? আপনারা নিশ্চয়ই বলতে চান, আবরারকে মারা হয়েছে, লাইনে না এলে তোমাদেরও তাই করা হবে। তারপর সবার পিঠ দিয়ে নেমে যাবে ভয়ের স্রোত এবং মাঠে থাকবেন শুধু আপনারা। তারপরও নিশ্চয়ই আপনারা থামবেন না। পার্থক্য, শুধু আপনারা তখন মারবেন নিজেদের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনাকে কেউ যদি বুঝিয়ে থাকে যে, ম্যাকিয়াভেলির প্রিন্সের আদলে একটা ভয়ের সংস্কৃতিতে দেশ শাসন করা সহজ, তবে তারা সফল, সন্দেহ নেই। তবে ইতিহাস আপনাকে সফল বলবে কিনা সে সংশয় কিন্তু রয়েই যায়। আমার নিবেদন, নূর নয়, যারা নূরকে মারছে তারাই আপনার শত্রু। সময় থাকতে তাদের চিনে রাখুন, ব্যবস্থা নিন। লেখক : প্রধান, ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগ। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :