আসিফুজ্জামান পৃথিল : গতকাল সরিয়ে নেয়া হয়েছে আসামের পুলিশ প্রধানকে। কারফিউ ভেঙে গুয়াহাটির রাস্তার দখল নিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। রাজ্যের ১০ জেলায় ইন্টারনেট বন্ধের মেয়াদ আরও ৪৮ ঘন্টা বাড়িয়েছে কর্তৃপক্ষ। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘাত হয়েছে এমন ৪ স্থানে গতকাল অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এনডিটিভি, আনন্দবাজার, দ্য হিন্দু
গতকাল এক টুইট বার্তায় আসামের জনগনকে অভয় প্রদান করেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু এতে কোনও কাজ হয়নি। এদিন পুলিশের গুলিতে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ২জন। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গিয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম স‚ত্রে জানা গিয়েছে, গুয়াহাটির লালুঙ গাঁওতে এ দিন বিক্ষোভ সামাল দিতে গিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে খন্ড যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে পুলিশ। উত্তেজিত জনতাকে থামাতে গিয়ে গুলি চালায় তারা। তাতেই পাঁচ জন জখম হন। তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে মৃত্যু হয় ওই ৩ জনের।
নিরাপত্তাবাহিনীর উপস্থিতিতেই জায়গায় জায়গায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। জ্বলন্ত কাঠ ফেলে রাস্তা অবরোধের অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। ডিব্রæগড়ে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের একটি দপ্তরে হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বিজেপি নেতাদের। দপ্তরের বাইরে বেশ কয়েকটি গাড়িও জ্বালিয়ে দেয়া হয় বলে দাবি তাদের। এ দিন আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছে অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আসু) এবং কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি (কেএমএসএস)। সাধারণ মানুষকে ঘর ছেড়ে রাস্তায় নামার আর্জি জানিয়েছে তারা। এ দিন আসুর পক্ষে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয়, ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে। বেলা ১১টায় গুয়াহাটির লতাশীল ময়দানে সমাবেশ রয়েছে। সেজন্য সকলকে ঘর ছেড়ে রাস্তায় নামার আর্জি জানাচ্ছি আমরা।’ এমন পরিস্থিতিতে গুয়াহাটির পুলিশ কমিশনার দীপক কুমারকে সরানো হয়েছে। তার জায়গায় আনা হয়েছে মুন্নাপ্রসাদ গুপ্তকে।
এয়ার ইন্ডিয়া, ইন্ডিগো, স্পাইসজেট, ভিস্তারা, গো এয়ার-সহ বেশ কিছু সংস্থা আসাম বিমান বন্দর থেকে তাদের একাধিক বিমানের উড্ডয়ন বাতিল করেছে। বাতিল করা হয়েছে বেশ কিছু বিমানের অবতরণ। এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার উত্তর-প‚র্ব শাখার এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর সঞ্জীব জিন্দল বলেন, ‘ডিব্রুগড়ে নয়টি বিমানের উড্ডয়ন বাতিল করা হয়েছে। বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় কোনও ট্যাক্সি পাওয়া যাচ্ছে না, যার ফলে গতকাল যারা বিমানবন্দরে পৌঁছেছিলেন, তারা এখনও যেতে পারেননি।’ গতকাল বিক্ষোভ চলাকালীন ডিব্রæগড়ের ছাবুয়ার একটি রেল স্টেশন চত্বরে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। তিনসুকিয়ার পানিতোলা স্টেশন চত্বরেও আগুন ধরানো হয়, যার পর এ দিন অসমে সমস্ত লোকাল ট্রেন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ। আপাতত ডিব্রæগড় থেকে সমস্ত দ‚রপাল্লার ট্রেনও বন্ধ রাখা হয়েছে। এ দিন গুয়াহাটিতে রণজি ট্রফিতে সার্ভিসেস বনাম আসামের ম্যাচ ছিল। সেটিও সাসপেন্ড করা হয়েছে।
শুধু আসাম নয়, উত্তর পূর্ব ভারতের অন্য রাজ্যগুলোতেও এই বিল বিরোধী আন্দোলন চলছে। ত্রিপুরাতেও বন্ধ রয়েছে রেল সেবা। আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালের আর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামেশ^র তেলির বাড়িতেও হামলা চালিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। পিটিআইয়ের খবর বলছে, বেসামরিক ও পুলিশ কর্মকর্তাদের অনুমতি ছাড়া বাইরের কারও সঙ্গে যোগাযোগ না করতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন সূত্র বলছে, গুয়াহাটি, দিবরাগড় ও জরহাট থেকে শতাধিক বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে। গুয়াহাটির সচিবালয় চত্বরে বিপুল শিক্ষার্থী জি এস সড়ক অবরোধ করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সিনজো আবের আগামী রোববারের প্রস্তাবিত বৈঠক সামনে রেখে রাস্তায় তৈরি করা মঞ্চ ভেঙে দেয় বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভকারী এক শিক্ষার্থী পিটিআইকে বলেন, সর্বানন্দ সনোয়ালের নেতৃত্বে সরকার বর্বরোচিত আচরণ করছে। সম্পাদনা : খালিদ আহমেদ
আপনার মতামত লিখুন :