আমাদের সময় : বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলেও বিদিশা সিদ্দিক ইস্যুতে একাট্টা জাতীয় পার্টির (জাপা) দুই শীর্ষ নেতা জিএম কাদের ও রওশন এরশাদ। প্রয়াত এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশাকে জাপায় স্থান না দিতে দুই নেতাই একমত। আসন্ন জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে বিদিশাকে জাপায় স্থান দিতে একটি অংশ সক্রিয় বলে গুঞ্জন রয়েছে।
ছেলে শাহাতা জারাব এরশাদ এরিককে ট্রাম্পকার্ড হিসেবে ব্যবহার করে বিদিশা জাপার রাজনীতিতে প্রবেশ করতে চান বলে মনে করা হচ্ছে। পার্টিরই একটি অংশ এমন ছক কষছে বলে জানা গেছে। কিন্তু পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ এই ইস্যুতে এক থাকায় তা আপাতত সফল হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন দলটির একাধিক নেতা।
জাপার প্রেসিডিয়ামের দুজন নেতার সঙ্গে আলাপকালে বলেন, গত ১৭ নভেম্বর প্রয়াত এরশাদের বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসায় গিয়ে ওঠেন বিদিশা। ওই বাসায় ছেলে এরিকের খাওয়া-দাওয়া হচ্ছে না, তাকে মারধর করা হচ্ছেÑ গণমাধ্যমে এমন অভিযোগ জানান। এর পর জীবনের ঝুঁকি মনে করে চাচা জিএম কাদেরকে দায়ী করে বনানী থানায় জিডিও করেন এরিক। এটিকে ষড়যন্ত্র আখ্যায়িত করে জিএম কাদের তখন বলেন, কেউ হয়তো এরিককে
দিয়ে এসব করাচ্ছে। এসব ঘটনায় আলোচনায় উঠে আসেন বিদিশা।
বর্তমান ইস্যুতে জিএম কাদের ও রওশনের সরাসরি হস্তক্ষেপ না করার বিষয়ে জাপা নেতাদের ভাষ্য, এরশাদের সঙ্গে বিদিশার ১৪ বছর আগে বিচ্ছেদ হলেও মাতৃত্বের অধিকার শেষ হয়ে যায় না। ফলে ১৮ বছরোর্ধ্ব অটিস্টিক এরিক যদি তার মা বিদিশাকে কাছে পেতে চায়, তা হলে কারও বাধায় কিছু আসবে যাবে না। বিষয়টি পার্টির দুই শীর্ষ নেতা জানেন। জীবদ্দশায় এরশাদ এরিকের ভরণ-পোষণের জন্য তার সব সম্পত্তি ট্রাস্টের নামে দিয়ে গেছেন। ট্রাস্টে এরশাদের ভাতিজা মেজর (অব) খালেদ আখতার, চাচাতো ভাই মুকুল ও এরশাদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর রয়েছেন, যেখানে জিএম কাদের ও রওশনকে রাখা হয়নি। ফলে এ বিষয়ে তেমন আগ্রহও নেই তাদের। কিন্তু সম্পদের দিকে না তাকালেও এরিককে ট্রাম্পকার্ড হিসেবে ব্যবহার করে বিদিশাকে কোনো রাজনৈতিক সুবিধা নিতে দেবেন না তারা।
‘আমি আমার সন্তান এরিককে ছাড়া কিছুই চাই না’Ñ বিদিশার এমন মন্তব্যকে কথার কথা বলেছেন জাপার নেতারা। কারণ এরশাদের মৃত্যুর পর ফেসবুকে ও গণমাধ্যমে তিনি রাজনীতিতে আসার ব্যাপারে নানা বক্তব্য দিয়েছেন। এরশাদের স্ত্রী হিসেবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক সফর করে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন বলেও বক্তব্য দিয়েছেন তিনি।
এরিক ও বিদিশার ইস্যুতে জিএম কাদের ও রওশনের সরাসরি হস্তক্ষেপ না থাকলেও এ নিয়ে জাতীয় পার্টির একটি বড় অংশের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এরশাদের তৎকালীন একান্ত সচিব ও বর্তমান জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর (অব) খালেদ আখতার গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত এরিক ও বিদিশার বক্তব্যের জবাব দিচ্ছেন। ২৩ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট পার্কে অবৈধ প্রবেশের অভিযোগ এনে বিদিশার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় জিডিও করেন তিনি। এ ছাড়া জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে অভিযোগ তুলে ২৭ নভেম্বর বিদিশাকে আইনি নোটিশ পাঠান জাতীয় পার্টির যুগ্ম আইন ও মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আবু ওয়াহাব। নোটিশে বিদিশাকে ১৫ দিনের মধ্যে বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য বলা হয়।
জানা গেছে, জাপার একটি অংশ এরিক ও বিদিশার সঙ্গে নেপথ্যে থেকে কাজ করছে বলে কথা উঠেছে। পদ ও মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা বিদিশার সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিদিশাকে প্রেসিডেন্ট পার্কে উঠানোর ক্ষেত্রেও ওই নেতার সহযোগিতা করেছেন।
১ ডিসেম্বর জাপার প্রেসেডিয়ামের বৈঠকে বিদিশা-এরিক ইস্যু ও জাপা নেতাদের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আলোচনা হবে। ওই বৈঠকে জাপার সম্মেলনের তারিখও ঘোষণা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :