রাশিদ রিয়াজ : ভারতে গত অক্টোবর পর্যন্ত তিন রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণনকারী সংস্থা, ইন্ডিয়ান অয়েল, ভারত পেট্রোলিয়ম ও হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়মের সম্মিলিত এলপিজি গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ২৭ কোটি ৩৬ লক্ষ। এলপিজি ব্যবহার নিয়ে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের মুখ পুড়ল। আগে কেন্দ্র দাবি করেছিল, গত বছরের ডিসেম্বরে ভারতে ৯০ শতাংশ পরিবারের রান্নাঘরে এলপিজি পৌঁছে গিয়েছে। কিন্তু, সেই দাবি খারিজ হয়ে গিয়েছে ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিক্যাল অফিস (এনএসও)-এর করা এক সমীক্ষা রিপোর্টে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতে ৬১ শতাংশ পরিবার রান্নার জন্য এলপিজি ব্যবহার করেছে। এর মধ্যে শহরে বসবাসকারী ও গ্রামাঞ্চলে থাকা পরিবার যথাক্রমে ৮৬.৬ ও ৪৮.৩ শতাংশ। সবথেকে বড় কথা বিভিন্ন গ্রামে থাকা মোট পরিবারের মধ্যে ৪৪.৫ শতাংশ রান্নার জ্বালানি হিসাবে কাঠ, ডাল, গাছের গোড়া ব্যবহার করে।
‘পানীয় জল, স্যানিটেশন, হাইজিন ও হাউজিং কন্ডিশন’-এর উপর ৭৬-তম রাউন্ডের সমীক্ষা রিপোর্ট গত শনিবার প্রকাশিত হয়েছে। গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে এক লক্ষ পরিবারের উপর সমীক্ষাটি চালিয়েছে এনএসও। সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী, এলপিজি সংযোগের ক্ষেত্রে ১৩ শতাংশ পরিবার উপকৃত হয়েছে।
রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পরেই তড়িঘড়ি ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমেছে কেন্দ্র। সোমবার কেন্দ্রীয় স্ট্যাটিসটিক্স ও প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন মন্ত্রক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই সমীক্ষা রিপোর্ট ‘আন্ডার রিপোর্টেড’ হতে পারে, কারণ, অধিকাংশ সময়েই সরকারের কাছ থেকে সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে উপকৃত ব্যক্তিরা সমীক্ষা আধিকারিকদের করা প্রশ্নে ‘নেতিবাচক উত্তর’ দিয়ে থাকেন।
চলতি বছরের অক্টোবরে ভারতের মোট জনসংখ্যার ৯৬.৫ শতাংশ এলপিজি ব্যবহার করছে বলে কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করেছিল। সরকারের আরও দাবি, এর নেপথ্যে প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা (পিএমইউওয়াই)-এর অভূতপূর্ব সাফল্য।
কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়ম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রকের পেট্রোলিয়ম প্ল্যানিং ও অ্যানালিসিস সেল-এর তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ১ ডিসেম্বর ভারতের ৮৯.৫ শতাংশ পরিবার রান্নার জন্য জ্বালানি হিসাবে এলপিজি ব্যবহার করত। যদিও একই সময়ে করা এনএসও সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী, গ্রামের ৪৪.৫ শতাংশ পরিবারই রান্নার জন্য জ্বালানি হিসাবে কাঠ, ডাল, গাছের গোড়া ব্যবহার করে।
পশ্চিমবঙ্গ, ওডিশা, ঝাড়খণ্ড, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশে এলপিজি ব্যবহার অনেকটাই কম। পশ্চিমবঙ্গে ৪২.৮ শতাংশ পরিবার এলপিজি ব্যবহার করে। ওডিশা ও ঝাড়খণ্ডে আরও কম--- যথাক্রমে ৩২.৬ ও ৩২.৯ শতাংশ।
তিন বছর আগে ২০১৬-র মে মাসে পিএমইউওয়াই প্রকল্পের সূচনা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার পর থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১১ শতাংশ পরিবার ওই প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছে বলে এসএসও সমীক্ষা রিপোর্টে জানানো হয়েছে।
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিকাশ রাওয়ালের ব্যাখ্যা, ‘এনএসও তথ্য এলপিজি ব্যবহার ও এলপিজি সংযোগের ভিত্তিতে সরকারের উজ্জ্বলা প্রকল্পের সাফল্যের দাবি সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরেছে। কিন্তু, এমন বহু পরিবার রয়েছে যারা উজ্জ্বলা প্রকল্পে এলপিজি সংযোগ পাওয়ার পর অর্থাভাবে রিফিল কিনতে না পারায় রান্নার গ্যাস আর ব্যবহার করছে না।’
এদিকে পেট্রোলিয়ম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান জানিয়েছেন, পিএমইউওয়াই প্রকল্পে যাঁরা এলপিজি সংযোগ নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৮৭ শতাংশ রিফিল কিনেছেন। এমনকী, তাঁদের জন্য ১৪.২ কিলো সিলিন্ডারের বদলে কমদামের ৫ কিলো সিলিন্ডার নেওয়ারও সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
অক্টোবর পর্যন্ত তিন রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণনকারী সংস্থা, ইন্ডিয়ান অয়েল, ভারত পেট্রোলিয়ম ও হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়মের সম্মিলিত এলপিজি গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ২৭ কোটি ৩৬ লক্ষ।
আপনার মতামত লিখুন :