তরিকুল ইসলাম : পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্বভার গ্রহণ করতে শুক্রবার ঢাকায় ফিরেছেন যুক্তরাষ্ট্রে বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন তিনি। বর্তমান পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন মাসুদ বিন মোমেন। তবে বর্তমান পররাষ্ট্র সচিবের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ ডিসেম্বরে শেষ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা।
পেষাদার কূটনীতিক মাসুদ বিন মোমেন পররাষ্ট্র ক্যাডারের ১৯৮৫ ব্যাচের কর্মকর্তা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএসএস করেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের টাফটস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক বিষয়ে এমএ করেন। ইতালি ও জাপানে তিনি বাংলাদেশের রাষ্টদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ হাইকমিশনে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। সার্ক সচিবালয়ের পরিচালকেরও দায়িত্ব পালন করেছেন মোমেন।
মাসুদ বিন মোমেন জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত থাকাকালে দু’দেশের সম্পর্ক খুবই জোরদার হয়। ওই সময়ে পশ্চিমারা শেখ হাসিনার সরকারের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও জাপান সমর্থন করে। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবেও রোহিঙ্গা ইস্যু সামাল দিতে বেশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি।
আমাদের নতুন সময়ের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঐ কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণী পর্যায় এরই মধ্যে মাসুদ বিন মোমেনকে পররাষ্ট্র সচিব নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে সবুজ সংকেত দিয়েছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব বুঝে পেতে মাসুদ বিন মোমেনকে হয়তো আরও এক মাস ১০ দিন অপেক্ষা করতে হবে। এমন কি তার আগেও অফিস শুরু করার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
হেডকোয়ার্টারে ফিরে আসায় এখন তার দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়টি স্পষ্ট, সেই আনুষ্ঠানিকতা এখন দেখবার পালা।
এম শহীদুল হক বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় প্রায় ৭ বছর পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি পররাষ্ট্র ক্যাডারের ১৯৮৪ ব্যাচের কর্মকর্তা।
ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পররাষ্ট্র সচিব পদে সাধারণত তিন বছরের বেশি সময় কাউকে নিয়োগ দেয়া হয় না। শহীদুল হক দীর্ঘদিন ধরে পররাষ্ট্র সচিব থাকায় পররাষ্ট্র ক্যাডারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা যারা এ পদের প্রত্যাশী ছিলেন, তাদের অনেকেই বঞ্চিত হয়েছেন। এ নিয়ে পররাষ্ট্র ক্যাডারে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষও রয়েছে। শহীদুল হক চাকরি জীবনের বেশির ভাগ সময় ২০০১ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত লিয়েনে আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থায় (আইওএম) কর্মত ছিলেন। আইওএমের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০১৫ সালে জাতিসংঘে যোগ দেওয়ার আগে মাসুদ বিন মোমেন জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। মাসুদ বিন মোমেনের আগে এ দায়িত্ব পালন করেছিলেন বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। এবারও জাপান থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমাকে জাতিসংঘে বাংলাদেশের ১৮তম স্থায়ী প্রতিনিধি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করার পর রাবাবই দ্বিতীয় কোনো নারী কূটনীতিক।
রাবাব ফাতিমা ১৯৮৬ সালে বিসিএসের মাধ্যমে পররাষ্ট্র ক্যাডারে যোগ দেন। বর্ণাঢ্য কূটনীতিক ক্যারিয়ারে তিনি নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশন ছাড়াও জেনেভা, কলকাতা এবং বেইজিংয়েও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থায়ও গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। রাষ্ট্রদূত রাবাব যুক্তরাষ্ট্রের টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের কূটনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। তার স্বামী কাজী ইমতিয়াজ হোসাইনও ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :