ডয়েচে ভেলে : বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের দুই নারী কেবিন ক্রু এক পাইলটের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনেছেন৷ অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে৷ বিমান এটাকে প্রথম লিখিত অভিযোগ দাবি করলেও জানা গেছে চাকরি হারানোর ভয়ে অনেকেই অভিযোগ করেন না৷
অভিযোগকারী দু'জন কেবিন ক্রু'র একজন বলেন, ‘‘ওই পাইলট দীর্ঘদিন ধরেই যৌন নিপীড়ন করে আসছিলেন৷ সর্বশেষ ২৬ অক্টোবর ককপিটে ডেকে তাদের যৌন নিপীড়ন করা হয়৷ তাদের দু'জনকে আলাদাভাবে ককপিটে ডেকে যৌন হয়রানি করেন ওই পাইলট৷ তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘আমাকে ককপিটে ডেকে যৌন নিপীড়ন করেই তিনি ক্ষান্ত হননি, মোবাইলে নগ্ন ছবি দেখান এবং এরপর হোটেলে গিয়ে সময় কাটানোরও প্রস্তাব দেন৷ একই আচরণ করেন আমার সহকর্মীর সঙ্গে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘আমি ছয় বছর ধরে কাজ করছি৷ পুরোটা সময়ই তিনি আমিসহ আরো অনেকের সঙ্গে যৌন নিপীড়নমূলক আচরণ করেছেন কিন্তু এবার আমাদের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়৷ তাই আমরা ই-মেলে দুবাই থেকে বিমানে লিখিত অভিযোগ জানাই৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘এটা ছিলো টানা ১২ দিনের জেড ক্যাটাগরির ফ্লাইট৷ পুরোটা সময়ই তিনি যৌন হয়রানি করেন কিন্তু ২৬ অক্টোবর ঢাকা থেকে আবুধাবি যাওয়ার সময় তিনি ভয়াবহ আচরণ করেন আমাদের দু'জনের সঙ্গে৷ আমরা দু'জন লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরও ঢাকা ফেরার আগ পর্যন্ত তার যৌন নিপীড়ন থেকে রেহাই পাইনি৷’’
এদিকে অভিযুক্ত পাইলট ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে কি অভিযোগ দেয়া হয়েছে তা আমাকে এখনো বিমান কর্তৃপক্ষ জানায়নি বা আমার বক্তব্য শোনার জন্য আমাকে ডাকেওনি৷ তবে সংবাদ মাধ্যমে যে খবর আমি দেখেছি তা সত্য হয়ে থাকলে আমি বলব আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে৷ আমার বয়স ৬০ বছর এবং আমার পেশাগত জীবন ৩০ বছরের৷ অতীতে কখনো এ ধরনের অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে ওঠেনি৷ আমি মনে করি এটা আমার বিরুদ্ধে পেশাগত ষড়যন্ত্র৷ আর ককপিট একটা সংরক্ষিত জায়গা, সেখানে যৌন হয়ারানির প্রশ্নই ওঠে না৷’’
এই ধরণের অভিযোগ আমার সময় এটাই প্রথম: বিমান এমডি
যৌন নিপীড়নের শিকার ওই নারী বলেন, ‘‘ইনফ্লাইট একজন পাইলটের অনেক ক্ষমতা৷ তিনি তখন সর্বেসর্বা৷ তাই যৌন হয়রানির শিকার হলেও চাকরি বাঁচাতে অনেকে অভিযোগ করেন না৷ আমরা শেষ পর্যন্ত সহ্য করতে না পেরে অভিযোগ করেছি৷ ওই পাইলটের বিরুদ্ধে আরো অনেকেরই অভিযোগ আছে৷ আমরা অভিযোগ করার পর তারা মুখ খুলতে শুরু করেছেন৷’’
বিমান এরই মধ্যে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে৷ অভিযোগকারী দুই নারী কেবিন ক্রু'র বক্তব্য নিয়েছে তদন্ত কমিটি৷ বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মোকাব্বির হোসেন বলেন, ‘‘আমরা অভিযোগকারীদের বক্তব্য নিয়েছি৷ সব পক্ষের বক্তব্য নেবো৷ অভিযোগ প্রমাণ হলে বিমান রুলে যা আছে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো৷’’
নিপীড়ণের শিকার নারী বলেন, ‘‘আমাদের পর এখন অরো অনেকে অভিযোগ দিচ্ছেন বিমানে৷ আরো অনেক যৌন নিপীড়নের ঘটনা প্রকাশ পাবে৷ আমাদের পূর্ণ নিরাপত্তা দেয়ার কথা বলা হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত কোনো দিক থেকে কোনো চাপ নেই৷ তবে ভবিষ্যতে কী হবে বলতে পারছি না৷’’
জানা গেছে, বিমানে কেবিন ক্রু'র সংখ্যা ছয়শ'র মতো৷ এরমধ্যে অর্ধেকই নারী৷ তাই এই ঘটনায় বিমানে ইনফ্লাইট নারী কেবিন ক্রুদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ কিন্তু বিমানের এমডি দাবি করেন, ‘‘এই ধরনের অভিযোগ আমার সময় এটাই প্রথম৷ আরা কোনো অভিযোগ এর আগে পাইনি৷ আর নারী কেবিন ক্রুদের নিরপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কোনো কারণ নাই৷ নিরপত্তার অভাব থাকলে ওই দুই নারী কি অভিযোগ করতে পারতেন?’’
আপনার মতামত লিখুন :