শিরোনাম
◈ ‘জাতির পিতা’ বিধান বিলুপ্তির সুপারিশ: সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ◈ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত জাতিসংঘ মহাসচিবের ◈ বেনজীরের বিতর্কিত বক্তব্যে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবাদ (ভিডিও) ◈ হঠাৎ ট্রাম্পকে যে কারণে ‘টোপ’ দিলেন জেলেনস্কি ◈ ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরু, মোজাম্মেল হকের বাড়িতে র‌্যাব ◈ আপিল ট্রাইব্যুনালে জয়ী পুলিশ সদস্যদের চাকুরীতে পুনর্বহালের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে ◈ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার গায়েবানা জানাজা পড়লেন বৈষম্যবিরোধীর নেতাকর্মীরা ◈ সেদিন গাজীপুরে কি ঘটেছিল? আহতদের মুখে ঘটনার বর্ণনা ◈ টিউলিপের নামে গাজীপুরে বাংলো, যা বলছে লেবার পার্টি ◈ ফরিদপুরের সালথায় চার কৃষকের ১০ ঘরে আগুন, সব পুড়ে ছাই

প্রকাশিত : ২২ নভেম্বর, ২০১৯, ০৭:১৭ সকাল
আপডেট : ২২ নভেম্বর, ২০১৯, ০৭:১৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

১৪ পরিবারের ২৬ জনই করেন ভিক্ষা!

দৈনিক আমাদের সময় : বরগুনার বামনা উপজেলায় একটি বাড়ির সন্ধান মিলেছে যেখানে বসবাস করেন ২৬ জন ভিক্ষুক। উপজেলার রামনা ইউনিয়নের খোলপটুয়া গ্রামের ১৪টি পরিবারের সদস্য তারা। যেখানে তারা বসবাস করেন তার নাম ‘লওয়াই বাড়ি’।

লোকমুখে এ তথ্য পেয়ে সরেজমিনে লওয়াই বাড়ি গিয়ে দেখা মেলে ২৬ ভিক্ষুকের। জানা গেছে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় সিডর পরর্বতী সময়ে এই ১৪ পরিবারকে গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছিল একটি বেসরকারি সংস্থা। যদিও পরবর্তীতে কেউ আর তাদের খবর রাখেনি।

লওয়াই বাড়িতে যে কয়টি ঘর আছে, তার সবগুলোই প্রায় জরাজীর্ণ। ভিক্ষার টাকায় কিছু ঘর মেরামত করা হয়েছে। তবে, সামান্য ঝড়ে উড়ে যেতে পারে ঘরগুলো।

মরহুম আ. লতিফ ওরফে লওয়াইয়ের নামানুসারে স্থানীয়রা ভিক্ষাজীবীদের থাকায় স্থানটিকে নাম দিয়েছে লওয়াই বাড়ি। বর্তমানে বাড়িটি ‘ভিক্ষুক বাড়ি’ নামেই পরিচিত। বাড়ির পুরুষ সদস্যের চেয়ে নারী সদস্যরাই ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নিয়েছেন।

লাওয়াই বাড়ির শিশুগুলো মাতৃস্নেহ ছাড়াই বেড়ে উঠছে। বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার সুযোগ থেকে। বাড়ির সদস্যরা জানিয়েছেন, বাড়িটি ভিক্ষুক বাড়ি হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় একটা প্রভাব তাদের উপার্জনে। যে কারণে, উপার্জন অনেক কমে গেছে। এ কারণে জীবন যাপন করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

বাড়ির বেশির ভাগ পুরুষ শারীরিকভাবে পরিশ্রমে অক্ষম এবং নারীদেরও নেই কোনো কর্মক্ষেত্র। লওয়াই বাড়ির ভিক্ষাবৃত্তি পেশায় থাকা আবদুল গনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘মোর বাপে হেই কোলে থাহা অবস্থায় মরছে। মায় তিন ভাই বোনরে কি খাওয়াইয়া মানু হরবে। হের লইগ্যা মায় ছোট থেকেই মোরে কোলে কোলে লইয়া ভিক্ষা হরছে। হ্যার পর মায়ও মরছে। এহন মুই কি খামু। হের লইগ্যা মুইও ছোডকাল থেইক্যা ভিক্ষা হরি। মোর একটা পা দিয়া হাটতেও পারি না। মোগো বাড়ির ভিক্ষুদের কেউ ভালো চোহে দ্যাহে না। বয়স্ক ভাতা ছারা মোরা কিছুই পাই না।’

শুধু গনিই লওয়াই নয় মোর্শেদা, তাজেনুর, কুলসুম, ফাতেমা, হনুফা, ছকিনা, মালেকা, রিজিয়া, খোদেজা, ময়না, হালিমা, খোকন, রাবেয়া, রেখাসহ এ বাড়ির সকলের একটাই অভিযোগ কেউ তাদের খোঁজ রাখে না। কোনো সাহায্য-সহযোগিতা দূরে থাক তারা যাতে আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে এই ভিক্ষাবৃত্তি পেশা ছাড়তে পারে এই পরামর্শটুকুও কেউ কোনোদিন তাদের দেয়নি। তারাও চায় সমাজের অন্য সবার মতো কাজ করতে। ভিক্ষাবৃত্তির অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে।

বিভিন্ন সময় বামনার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বামনাকে ভিক্ষুকমুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেও তাদের ছোঁয়া এসে পৌঁছায়নি এই বাড়িতে। সক্ষম নারী ভিক্ষুকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা শুধু মাত্র কর্মসংস্থানের অভাবেই ভিক্ষাবৃত্তিকে বেছে নিয়েছে। তারাও চায় সম্মানজনক পেশায় যুক্ত হতে। মুছে ফেলতে চায় তাদের ভিক্ষুকের পরিচয় আর স্বপ্ন দেখে তাদের সন্তানেরা বেড়ে উঠবে অন্য সব সাধারণ শিশুদের মত, ভিক্ষুক হয়ে নয়।

অবশ্য রামনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আ. খালেক জমাদ্দার বললেন ভিন্ন কথা। একই বাড়িতে ২৬ জন ভিক্ষুকের প্রসঙ্গে বললেন ‘এদের পেশাই ভিক্ষাবৃত্তি। এদের কোনো কাজ দিলেও এরা করে না। আমি বহুবার তাদের কর্মমূখী করার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু এরা কাজ করতে অনাগ্রহী।’

এ বিষয়ে বামনা উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মিজান সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘সারাদেশে ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ সরকার হাতে নিয়েছে। আমরা এ সংক্রান্ত চিঠি পেয়েছি। সে অনুসারে আমাদের তালিকাও করা হয়ে গেছে। সরকার অর্থবরাদ্দ দিলে আমরা এ উপজেলার ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবো।’

সমাজ সেবা অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলার চারটি ইউনিয়নে মোট ২৪১ জন ভিক্ষুক রয়েছে। এর মধ্যে বুকাবুনিয়া ইউনিয়নে ৬৮ জন, বামনা সদর ইউনিয়নে ৪৮ জন, রামনা ইউনিয়নে ৫৭ জন ও ডৌয়াতলা ইউনিয়নে রয়েছে ৬৮ জন ভিক্ষুক বসবাস করে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়