যায়যায়দিন: বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হিসাব দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৭২ হাজারে। বর্তমানে তাদের এসব হিসাবে মোট সঞ্চয় এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা জানান, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমের অন্যতম একটি পদক্ষেপ হলো স্কুল ব্যাংকিং। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১৮ বছরের কম বয়সের শিক্ষার্থীদের ব্যাংকিং সেবা ও আধুনিক ব্যাংকিং প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত করার পাশাপাশি সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলার উদ্দেশে এ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। ফলে স্কুল ব্যাংকিংয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ায় হিসাব খোলার পাশাপাশি বাড়ছে আমানতের পরিমাণও। অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের দেশের আর্থিক সেবার আওতায় নিয়ে আসা হলো স্কুল ব্যাংকিংয়ের লক্ষ্য।
এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যেমন উপকৃত হচ্ছে, তেমনি বাণিজ্যিক ব্যাংকেরও আমানতের পাল্লাও ভারী হচ্ছে। এছাড়া ব্যাংকের মাধ্যমে তাদের সঞ্চিত টাকা বিনিয়োগ হয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ৫৫টি বাণিজ্যিক ব্যাংকে স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় ২০ লাখ ৭২ হাজার ৫৯৭টি হিসাবে সঞ্চয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮০৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে শহরের স্কুলের শিক্ষার্থীদের খোলা হিসাবের সংখ্যা ১৩ লাখ ২২ হাজার ৮৮৭টি। আর গ্রামের শিক্ষার্থীদের রয়েছে ৭ লাখ ৪৯ হাজার ৭১০টি।
গত এক বছরে স্কুল ব্যাংকিং হিসাব সংখ্যা বেড়েছে ৪ লাখ ৬২ হাজার ৬৩৬টি এবং এসব হিসাবে স্থিতির পরিমাণ বেড়েছে ৩৭৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ বিগত এক বছরে হিসাব সংখ্যার প্রবৃদ্ধি ২৮.৭৪ শতাংশ এবং স্থিতির প্রবৃদ্ধি ২৬.৫৬ শতাংশ। মোট হিসাবের ৩৬.১৮ শতাংশ গ্রামাঞ্চলে এবং ৬৩.৮২ শতাংশ শহরাঞ্চলে খোলা হয়েছে। গ্রামাঞ্চল ও শহরাঞ্চলে স্থিতির পরিমাণ মোট স্থিতির যথাক্রমে ২৯.৯৩ শতাংশ এবং ৭০.০৭ শতাংশ।
স্কুল ব্যাংকিংয়ে হিসাব খোলার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে ছাত্ররা। মোট হিসাবের মধ্যে ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৭৬৮ বা ৫৯ দশমিক ৬২ শতাংশ ছাত্র ও আট লাখ ৩৬ হাজার ৮২৯টি বা ৪০ দশমিক ৩৮ শতাংশ হিসাব ছাত্রীদের।
হিসাবের সংখ্যা ও স্থিতির দিক থেকে বেসরকারি ব্যাংকের অবদান বেশি। বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে মোট ১৪ লাখ ৪৬ হাজার ৮৭টি ব্যাংক হিসাব খুলেছে শিক্ষার্থীরা, যা মোট স্কুল ব্যাংকিং হিসাবের ৬৯.৭৮ শতাংশ। এসব হিসাবের বিপরীতে ৫৩৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা আমানত সংগ্রহ করেছে। যা স্কুল ব্যাংকিং হিসাবের মোট স্থিতির ৮৫.০২ শতাংশ। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ২৩.৫৫ শতাংশ স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খুললেও মোট স্থিতির মাত্র ১১.৫৪ শতাংশ তারা সংগ্রহ করেছে।
একক ব্যাংক হিসাবে সর্বোচ্চসংখ্যক হিসাব খুলেছে বেসরকারি ইসলামী ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটিতে স্কুল ব্যাংকিংয়ের হিসাব সংখ্যা ৪ লাখ ৩ হাজার ৩১৭টি। যা মোট হিসাবের ১৯.৪৬ শতাংশ।
অপরদিকে ডাচ্বাংলা ব্যাংক স্থিতির ভিত্তিতে শীর্ষে অবস্থান করছে। তাদের সংগৃহীত আমানত প্রায় ৪৭৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, যা মোট স্থিতির ২৬.৪২ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্টের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের ব্যাংকমুখী করে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম ছড়িয়ে দিতে বিভিন্ন সময় প্রচারণামূলক কর্মকান্ড চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সঞ্চয়ের মনোভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০১০ সালের ২ নভেম্বর সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে 'স্কুল ব্যাংকিং' কার্যক্রম শুরু হলেও শিক্ষার্থীরা টাকা জমা রাখার সুযোগ পায় ২০১১ সালে। স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের মধ্যে আর্থিক সেবা পৌঁছে দেয়ার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৫ সালে চাইল্ড অ্যান্ড ইয়ুথ ফাইন্যান্স ইন্টারন্যাশনালের (সিওয়াইএফআই) 'কান্ট্রি অ্যাওয়ার্ড' পুরস্কারে ভূষিত হয় বাংলাদেশ। অনুলিখন: ইয়াসিন আরাফাত, সম্পাদনা : মাজহারুল ইসলাম
আপনার মতামত লিখুন :