বণিক বার্তা : সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ২০১৯ এন্ড ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাফিকিং রিপোর্ট, শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বন্যপ্রাণী পাচারের ট্রানজিট ও প্রধান উৎস হিসেবে ২৮টি ফোকাস দেশের কথা বলা হয়েছে, যার মধ্যে বাংলাদেশের নামও আছে।
বন্যপ্রাণীর পণ্য পাচারে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ফোকাস তালিকায় থাকা অন্য দেশগুলো হচ্ছে ব্রাজিল, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ক্যামেরুন, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, গ্যাবন, হংকং, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, লাওস, মাদাগাস্কার, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, মোজাম্বিক, নাইজেরিয়া, চীন, ফিলিপাইন, রিপাবলিক অব কঙ্গো, সাউথ আফ্রিকা, তানজানিয়া, থাইল্যান্ড, টোগো, উগান্ডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভিয়েতনাম ও জিম্বাবুয়ে। এর মধ্যে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, লাওস ও মাদাগাস্কারের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর দেশটির স্বরাষ্ট্র ও বাণিজ্য দপ্তর এবং ইউএসএআইডির সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে ফোকাস দেশের এ তালিকা তৈরি করেছে। তালিকায় থাকা প্রতিটি দেশই বন্যপ্রাণী সংশ্লিষ্ট পণ্য পাচারের বড় উৎস, ট্রানজিট পয়েন্ট অথবা ভোক্তা দেশ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশও বন্যপ্রাণী পাচার চক্রের কাছে অন্যতম প্রধান উৎস ও ট্রানজিট দেশ। বাংলাদেশ থেকে তারা মূলত বেলজিয়াম, জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসে বন্যপ্রাণীজাত পণ্য পাচার করে থাকে। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরেও একটি ক্রেতাশ্রেণি গড়ে উঠেছে তাদের।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্যুরো অব ওশানস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সায়েন্টিফিক অ্যাফেয়ার্সে জনসংযোগ কর্মকর্তা জেমস ডিউই উই বলেন, বন্যপ্রাণী পাচার রোধে মার্কিন সরকারের একটি আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স রয়েছে। এ টাস্কফোর্স ফোকাস দেশগুলো ও উদ্বেগজনক দেশগুলো নিয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। টাস্কফোর্স দেশগুলোতে বন্যপ্রাণীর জব্দ তালিকা, আমদানি-রপ্তানি তথ্য, ইন্টারপোলের তথ্য, জাতিসংঘ এবং এনজিওগুলো থেকে সংগ্রহ করা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে দেশগুলোকে ফোকাস ও উদ্বেগজনক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। পাচারকালে ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বে কতো সংখ্যক অবৈধ বন্যপ্রাণী উদ্ধার করা হয়েছে এবং এর সঙ্গে জড়িত কতো জন চোরাকারবারি ধৃত বা শাস্তির মুখোমুখি হয়েছে। সেসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওই প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৫বছরে বাংলাদেশে বন্যপ্রাণী শিকার ও পাচারের ৩৭৪টি ঘটনায় ৫৬৬ জন অপরাধী ধরা পড়েছে। এর মধ্যে ১০১ জনকে শাস্তি দেয়া হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে মোট ৩৭ হাজার ৫৭৫টি বন্যপ্রাণী, যার মধ্যে ২৬৮টি স্তন্যপায়ী, ১৭ হাজার ৫০১টি পাখি, ১৯ হাজার ৩৫৯টি সরীসৃপ ও ৪৪৭টি বড় জন্তু।
তালিকায় থাকা কিছু দেশ এরই মধ্যে বন্যপ্রাণী পাচার রোধে যতœশীল হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। এসব দেশকে মূল্যায়নের মাধ্যমে মার্কিন দূতাবাসগুলো পরিকল্পনা কৌশল প্রণয়ন করেছে। গত বছর মার্কিন দূতাবাসগুলো ২৬টি ফোকাস দেশকে চিহ্নিত ও পর্যালোচনা করে পরিকল্পনা কৌশল প্রণয়ন করেছে। নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ইস্যুগুলো বিবেচনায় নিয়ে মার্কিন পর্যালোচনা ও কৌশল কিছু দেশের সরকারের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী পাচারের কেন্দ্র হয়ে ওঠার বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বলেন, ২ হাজারের ওপর খাল রয়েছে সুন্দরবনে। এ খাল পাহারায় লোকবল কম। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি। অপ্রতুল লোকবল দিয়ে যতটুকু সম্ভব আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে। অনুলিখন : ম. সিদ্দিকা, সম্পাদনা : মাজহারুল ইসলাম
আপনার মতামত লিখুন :