জনকণ্ঠ : সিনিয়র নেতা এম মোরশেদ খান ও লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান পদত্যাগের পর বিএনপির অধিকাংশ নেতা তারেক রহমানের প্রতি চরম ক্ষুব্ধ। কিন্তু কারাবন্দী খালেদা জিয়া নাখোশ হতে পারেন, এমন ভেবে তারা প্রকাশ্যে এ বিষয়ে মুখ খুলেননি। তবে এভাবে দল থেকে আর যেনো কেউ অপমানিত হয়ে বিদায় না হন, সে পরিস্থিতি কাটিয়ে তুলতে তারা অবিলম্বে জাতীয় কাউন্সিল করে নতুন নির্বাহী কমিটি গঠনের দাবি জোরদার করেন। বিভিন্ন মাধ্যমে তারা তারেককে অবিলম্বে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলেন। কিন্তু তারেক রহমান তাদের কথাকে আমলে না নিয়ে এখনও নিজের অবস্থানেই স্থির রয়েছেন। তাই এমনটি মনে করা হচ্ছে।
এদিকে, তারেকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এমন ক’জন বিএনপি নেতা সম্প্রতি দলের দুই সিনিয়র নেতার পদত্যাগের পর অন্য নেতাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে তারেকের কাছে রিপোর্ট করেছেন। তারা তারেককে জানিয়েছেন, এখন জাতীয় কাউন্সিল করলে দলের কিছু নেতা গোলমাল পাকিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে পারেন। এ পরিস্থিতিতে তারেক ক’জন সিনিয়র নেতাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন চেয়ারপার্সনকে কারাবন্দী রেখে কোন অবস্থাতেই দলের জাতীয় কাউন্সিল করা ঠিক হবে না। তাই আগে রাজপথে আন্দোলন করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে তারপর দলের জাতীয় কাউন্সিল করতে হবে। কাউন্সিল করার আগে সারাদেশে সকল স্তরে দল পুনর্গঠনের বিষয়টিও তিনি তুলে ধরেন। কিন্তু তারেকের এ অবস্থানের কথা জেনে বিএনপির অনেক নেতা চরম নাখোশ হয়েছেন এবং কেউ কেউ দল ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জানা যায়, আগের জাতীয় কাউন্সিলে বিএনপির বেশ ক’জন নেতা নির্বাহী কমিটিতে স্থান পাননি। এ ছাড়া দীর্ঘদিন দলের বাইরে থাকা সংস্কারপন্থী কিছু বিএনপি নেতা আবার দলে ফিরলেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পাননি। তাদের আশ্বাস দেয়া হয়েছিলো পরবর্তী জাতীয় কাউন্সিলে তাদের যোগ্যতা অনুসারে বিভিন্ন পদ দেয়া হবে। আর পদের আশায় তারাও দলের পেছনে লেগে থাকেন। কিন্তু লন্ডন প্রবাসী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চান না এখন দলের কাউন্সিল হোক। এ পরিস্থিতিতে অতীতে পদবঞ্চিত যেসব নেতা জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটিতে পদ পাওয়ার প্রত্যাশা করেছিলেন তারা এখন চরম হতাশ। জাতীয় কাউন্সিল হতে দেরি হলে এদের মধ্যে ক’জন অন্য দলে চলে যেতে পারেন।
জানা যায়, বিএনপির নির্বাহী কমিটির অধিকাংশ নেতাই এখন দলে নিষ্ক্রিয়। দলের বিভিন্ন কর্মকা-ে অংশ না নিয়ে তারা এখন নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে বেশি ব্যস্ত। এ কারণে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচীতে আগের মতো আর দলের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় না। যে কারণে কর্মসূচিগুলো সফল হয় না। এ জন্যই দলের জন্য নিবেদিত নেতাকর্মীরা চান যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নির্বাহী কমিটি করা হোক। কিন্তু তারেক তাদের এ চাওয়া-পাওয়াকে আমলে নিচ্ছেন না। তিনি তার অবস্থান ঠিক রেখেই দল পরিচালনা করতে চান। এ কারণেই দলের অনেক নেতা ক্ষুব্ধ
২০১৬ সালের ১৯ মার্চ জাঁকজমকপূর্ণ জাতীয় কাউন্সিল করেও এর সুফল পায়নি বিএনপি। বরং জাতীয় কাউন্সিলের পর নতুন নির্বাহী কমিটি গঠন নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রুপিং-কোন্দল বেড়ে যায়। এ নিয়ে দলের হাইকমান্ডও বিব্রত হয়। একপর্যায়ে যারা কমিটিতে স্থান পেতে আগ্রহী ছিলেন তাদের সবাইকে গণহারে স্থান দিয়ে ৫৯২ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। এর ফলে জেলা-উপজেলা কমিটিতে স্থান পাওয়ার যোগ্য নয় এমন নেতারাও কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পান। কিন্তু কমিটিতে পদ বাগিয়ে নেয়ার পর অনেকেই আর দলের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ রাখেননি। এ নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। আর এ কারণেই এখন বিএনপির কেন্দ্র থেকে কোন কর্মসূচী ঘোষণা করলে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তা পালনে অনীহা প্রকাশ করে।
এদিকে গতবছর ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে দলে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির সিনিয়র নেতারাও গ্রুপিং-কোন্দলে লিপ্ত। সিনিয়র নেতাদের মধ্যে একটি অংশ চান মির্জা ফখরুলকে মহাসচিব পদ থেকে সরিয়ে দিতে। আর মহাসচিব চান কিছু সিনিয়র নেতাকে উপেক্ষা করে কৌশলে দলের আধিপত্য ধরে রাখতে। আবার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক চান তার অনুসারীদের সহযোগিতা নিয়ে অন্য সবাইকে উপেক্ষা করে একক সিদ্ধান্তে দল চালাতে। এ কারণে দলের ভেতরের অবস্থা এখন চরম নাজুক। অনুলিখন : মাজহারুল ইসলাম
আপনার মতামত লিখুন :