রাশিদ রিয়াজ : ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থা বিএসএনএল এবং এমটিএনএল-কে ঘুরিয়ে দাঁড় করাতে বিপুল ভাবে কর্মী সংখ্যা কমানোর উপর জোর দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তার জন্যই এই ভিআরএস প্রকল্প। গত সপ্তাহ থেকে স্বেচ্ছাবসর (ভিআরএস) প্রকল্পের আবেদন নেওয়া শুরু হয়েছে এই সংস্থা দু'টিতে। ভিআরএসে ইতিমধ্যেই ৭০ হাজার বিএসএনএল কর্মী আবেদন জমা দিয়েছেন বলে সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত এই টেলিকম সংস্থার চেয়ারম্যাম কাম এমডি পিকে পুরওয়ার। এখনও পর্যন্ত আশানুরূপ ভাবেই স্বেচ্ছাবসরের আবেদন জমা পড়েছে। গত সপ্তাহেই এই ভিআরএস প্রকল্পের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল।
বিএসএনএলের ১.৫ লক্ষ কর্মীর মধ্যে প্রায় ১ লক্ষ কর্মীই ভিআরএস নেওয়ার যোগ্য। তবে, বিএসএনএলের লক্ষ্য হল, ৭৭ হাজার কর্মীকে ভিআরএস দেওয়া। কেন্দ্রের এই ভিআরএস প্রকল্পে আদৌ সাড়া মিলবে কি না, তা নিয়ে প্রথম থেকেই সন্দেহ ছিল। কর্মী ইউনিয়নও দাবি করেছিলেন, এই প্যাকেজ আকর্ষণীয় নয়। কিন্তু, কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, নির্দিষ্ট লক্ষ্যেই এগোচ্ছে বিএসএনএল। বর্তমান এই স্কিমে স্বেচ্ছাবসর কার্যকর হবে ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে।
বেতন খাতে খরচ কমাতেই সংস্থার লক্ষ্য, ৭৭ হাজার কর্মী-আধিকারিককে স্বেচ্ছাবসর দেওয়া। ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদন জানাতে পারবেন তাঁরা। স্বেচ্ছাবসর প্রকল্প ঘোষণার পর শুরু দিকে কয়েক হাজার করে আবেদন পড়লেও তার পর থেকে তা বাড়তে থাকে। গত সপ্তাহের শেষ দিকে তা পৌঁছে যায় প্রায় ৬৩ হাজারে। এ দিন বিকেলে সিএমডি বলেন, 'আবেদনকারীর সংখ্যা ৭০ হাজারে পৌঁছেছে।' তবে সংস্থা সূত্রের খবর, রাত পর্যন্ত সেই সংখ্যা আরও কিছুটা বেড়েছে।
অন্য দিকে, বিভিন্ন রাজ্য সরকারের কাছে বিএসএনএল তাদের প্রাপ্য বকেয়া দ্রুত মেটানোর আর্জি জানিয়েছে। যেমন, ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্কলের সিজিএম রমাকান্ত শর্মা জানান, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে তাঁদের প্রাপ্য প্রায় ৪৬ কোটি টাকা। তবে তাঁদেরও রাজ্য বিদ্যুত্ বণ্টন সংস্থার কাছে বিল বাকি প্রায় ১৭ কোটি টাকা। আগামী মার্চ পর্যন্ত সেই বকেয়া না মেটানোর এবং তত দিন বিদ্যুত্ সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করার জন্য রাজ্যের কাছে আর্জি জানিয়েছেন টেলিকম সংস্থাটি। মার্চের পরে বিদ্যুতের বকেয়া বিল চারটি কিস্তিতে মেটাতে চায় তারা।
সূত্রের খবর, টেলিকমমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছেই বিদ্যুত্ বিল মেটানোর জন্য বাড়তি সময় চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন।
বিএসএনএলের যে সমস্ত কর্মীর বয়স ৫০ বছর বা তার বেশি তাঁরা স্বেচ্ছাবসরের জন্য ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন বলে জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি যে সমস্ত কর্মচারীর বয়স ৫০ বছর বা তার বেশি হবে, তাঁরাও স্বেচ্ছাবসরের জন্য আবেদন করতে পারবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। বিএসএনএলের পাশাপাশি এমটিএনএলের জন্যও একই প্রকল্পের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, স্বেচ্ছাবসর নিলেও কর্মীরা সংস্থার কর্মী আবাসনে বসবাস করতে পারবেন। বাড়িতে টেলিফোন সংযোগ, অবসরকালীন চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন না।
বিএসএনএলের কোনও কর্মী স্বেচ্ছাবসরের জন্য আবেদন করলে তিনি এককালীন (এক্স-গ্রাশিয়া) যে অর্থ পাবেন, তা তাঁর অবশিষ্ট চাকরিজীবনের মূল বেতন ও মহার্ঘ ভাতার থেকে বেশি হবে না বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এক্স-গ্রাশিয়া হিসাবে কর্মীরা প্রতি বছর ৩৫ দিন হিসাবে যত বছর চাকরি করেছেন, তার মাইনে এবং প্রতি বছর ২৫ দিন হিসাবে অবশিষ্ট চাকরিজীবনের মাইনে পাবেন। দেখা গিয়েছে, এই স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পটি ৫৫ বছর বা তার বেশি বয়সি কর্মীদের জন্য বেশি লাভজনক।
এককালীন অর্থ ছাড়াও গ্র্যাচুইটি এবং পেনশনের টাকাও পাবেন স্বেচ্ছাবসরের আবেদনকারী কর্মীরা। কর্মীর বয়স ৫৫ বছর বা তার কম হলে তিনি ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গ্র্যাচুইটির টাকা পাবেন। বয়স ৫৫ বছরের বেশি হলে তাঁর ৬০ বছর বয়স হওয়ার এক মাসের মধ্যে গ্র্যাচুইটির টাকা পাবেন বলে বিএসএনএল জানিয়েছে। স্বেচ্ছাবসরের জন্য আবেদন করা কর্মী, আধিকারিকের পেনশন ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারির পর থেকেই চালু হয়ে যাবে। কিন্তু, ওই পেনশনের পরিমাণ বর্তমান বেতনের ১২৫ শতাংশের বেশি হবে না।
বিএসএনএলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মনে করেন, টলিকমিউনিকেশন মন্ত্রকের নির্দেশে জারি করা স্বেচ্ছাবসরের এই প্রকল্পটি বর্তমান পরিস্থিতিতে কর্মীদের জন্য শ্রেষ্ঠ। কর্মীদের ইতিবাচক হিসেবে এটি দেখা উচিত। তবে, কর্মী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাবসরের এই প্রকল্পটি একেবারেই আকর্ষণীয় বলে মনে করছেন না। স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পে আদৌ সাড়া পড়বে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :