বিনোদন ডেস্ক : হিরু ফকির। সময়ের অন্যতম জন্যপ্রিয় বাউল শিল্পী। চিন্তা-চেতনায় তার শুধুই গান। যতদিন বেঁচে আছেন, গান নিয়েই থাকতে চান তিনি। তার সুরেলা কণ্ঠ ইতোমধ্যে জয় করেছে মানুষের হৃদয়। দেশের গানের ভূবনে নিজেকে চিনিয়েছেন নিজের মতো করে। তার মনে, একজন শিল্পীর শেষ্ঠ গুণ গুরুভক্তি। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে এই বাউল শিল্পী বলেছেন তার জীবনের উত্থান-পতনের গল্প। সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ
প্রশ্ন : কেমন আছেন?
হিরু ফকির : আলহামদুলিল্লাহ। আপনাদের দুয়া এবং উপরওয়ালার দয়ায় বেশ আছি।
প্রশ্ন : গানের ভূবনে প্রবেশ কীভাবে?
হিরু ফকির : ছোটবেলা থেকেই গানপাগল ছিলাম। গানের প্রতি আলদা ভালোলাগা ছিল সবসময়। গানের জন্য অনেক কিছু ত্যাগ করেছি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হল গানের জন্য আমাকে দু’বার পরীক্ষা দিয়ে এইচএসসি পাশ করতে হয়েছে। ২০১২ সালে আমার জীবনের মোড় ঘুরে যায়। সাভার আশুলিয়ায় আমি একদিন পোশাকশ্রমিকের চাকরির সন্ধানে যায়। হঠাৎ দেখি কিছু মানুষ জড়ো হয়ে কিছু করছে। কাছে গিয়ে জানতে পারি, একটি বেসরকারি টেলিভিশনে গানভিত্তিক রিয়েলিটি শো’য়ে অংশ নেয়ার জন্য মানুষ নাম লিপিবদ্ধ করছে। ওই রিয়েলিটি শো ছিল শুধু পোশাকশ্রমিকদের জন্য। কিন্তু আমি তখনো বেকার। পরে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়ে নাম লিপিবদ্ধ করি। সেই রিয়েলিটি শো’য়ে আমি সেরা পাঁচে জায়গা করে নেই। মূলত, সেখান থেকে আমার জীবন বদলে গেছে।
প্রশ্ন : গান গেয়ে প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন কত বছর বয়সে?
হিরু ফকির : তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় স্কুলের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমি একইসঙ্গে গান ও নৃত্যে দ্বিতীয় পুরস্কার জিতেছিলাম। এটাই আমার জীবনের প্রথম পুরস্কার প্রাপ্তি।
প্রশ্ন : প্রথম গানের অ্যালবাম?
হিরু ফকির : ২০১৩ সালে জি-সিরিজ থেকে দহন-১ নামে আমার প্রথম একক অ্যালবাম বের হয়। একক ও যৌথ মিলিয়ে এ পর্যন্ত মোট চারটি অ্যালবামে গান করেছি। এছাড়া আমার নিজস্ব গান আছে ৬৫টি।
প্রশ্ন : মিউজিক ভিডিও সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন?
হিরু ফকির : সত্যি বলতে আমি মনে করি, অডিও গানের সূর্য অস্তমিত। তাই যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে সবাইকে। ভালো মানসম্মত গানের সঙ্গে ভিডিও থাকলে ক্ষতির কোনো কারণ আমি দেখি না। ইতোমধ্যে আমার বেশ কয়েকটি মিউজি ভিডিও বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলে বের হয়েছে। দর্শকদের কাছ থেকে বেশ ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি।
প্রশ্ন : আপনার গানের সবচেয়ে বড় ভক্ত কে?
হিরু ফকির : আমার একটি ছেলে সন্তান আছে। নাম মোহাম্মদ ইয়াসিন নুর। আমার দেখামতে, সে-ই আমার গানের সবচেয়ে বড় ভক্ত। আমি যখন বাসায় গানের চর্চা করি, আমার ছেলে মুগ্ধ হয়ে শোনে।
প্রশ্ন : গান নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা?
হিরু ফকির : যতদিন বেঁচে আছি, গানের সঙ্গেই বাঁচতে চাই। ভালো ভালো গান উপহার দিতে চাই। আমি না থাকলেও যেন মানুষের মুখে মুখে আমার গান বেঁচে থাকে হাজার বছর। বেশ কয়েকটি মিউজিক ভিডিওতে কাজ করার কথা চলছে।
প্রশ্ন : আপনার গানের আইডল কে?
হিরু ফকির : বাংলাদেশের প্রখ্যাত বংশিবাদক প্রয়াত বারী সিদ্দিকি স্যার আমার গানের আইডল। বাঁশির সুরের চেয়ে তার কণ্ঠের গানই আমাকে বেশি মুগ্ধ করে।
প্রশ্ন : আপনার কাছে একজন ভালো শিল্পীর শ্রেষ্ঠ গুণ কোনটি?
হিরু ফকির : অনেক গুণের সমন্বয়েই তো একজন মানুষ শিল্পী হয়ে ওঠেন। ভালো শিল্পীর অনেক গুণ রয়েছে। আমি মনে করি, একজন শিল্পীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ গুণটি হচ্ছে গুরুভক্তি। মুরব্বিদের সম্মান। কিন্তু দঃখজনক হলেও সত্যি, এখনকার অনেক শিল্পী, সিনিয়র শিল্পীদের সম্মান দিতে চান না। কোনো শিল্পীর গান গাওয়ার সময় সেই শিল্পীর নামটাও পর্যন্ত বলেন না। এটা আমাকে ভীষণভাবে পীড়া দেয়।
আপনার মতামত লিখুন :