শিরোনাম
◈ গোয়েন্দা নজরদারিতে যেসব গুরুত্বপূর্ণ আমলা, প্রশাসনে আতঙ্ক ◈ শেখ মুজিবের নামে লাখ ডলারের আন্তর্জাতিক শান্তি পদক বাতিল ◈ মধ্যরাতে গুলশানে এইচ টি ইমামের ছেলের বাসায় তল্লাশি (ভিডিও) ◈ দুঃখ প্রকাশ করে জেলেনস্কির টুইট, যা বললেন তিনি ◈ ক্ষমতায় আসা এত সহজ না: নাগরিক পার্টিকে মির্জা আব্বাস ◈ ঈদের আগে প্রণোদনার ৭ হাজার কোটি টাকা চায় বিকেএমইএ ◈ যুক্তরাষ্ট্রে ‘বিজনেস এলিট ফোরটি আন্ডার ফোরটি’ পেলেন বাংলাদেশি কাদের ◈ আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি : ডিবি প্রধান ◈ ট্রাম্পের বক্তব্যের পাল্টা বিবৃতি: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার কোনো কারণ দেখছে না সরকার ◈ পুলিশে ফের রদবদল, সিআইডি প্রধানসহ ১৮ কর্মকর্তা বদলি

প্রকাশিত : ০৮ নভেম্বর, ২০১৯, ০৮:০৭ সকাল
আপডেট : ০৮ নভেম্বর, ২০১৯, ০৮:০৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিদায় সংবর্ধনায় কেঁদে ফেললেন এসপি হারুন (ভিডিও)

ডেস্ক রিপোর্ট : দায়ী সংবর্ধনা দেওয়ার সময় অঝরে কাঁদলেন নারায়ণগঞ্জের আলোচিত পুলিশ সুপার (এসপি) হারুন অর রশীদ। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইনে তাঁকে বিদায় জানানো হয়। এনটিভি

বিদায়ের সময়ে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘এ স্টেশন থেকে আমাকে চলে যেতে হবে। এ পর্যন্ত হয়তো আমার সময় ছিল। আমার হয়তো নারায়ণগঞ্জে আর আসা হবে না। আমার ছেলের এ বাংলোতে (পুলিশ সুপারের সরকারি বাংলো) আর থাকা হবে না।’ এই বলেই এসপি হারুন অঝরে কান্না শুরু করেন। এ সময় পুলিশের অন্য সদস্যরা তাঁর চোখের পানি মুছতে টিস্যু পেপার এগিয়ে দেন।

হারুন অর রশীদ কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষের কাছে বিনীত প্রার্থনা, আমার মনের অজান্তে সাংবাদিক ভাইদের কাছে বা এলাকার গণ্যমাণ্য ব্যক্তিদের কাছে ভুল করে থাকলে আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেনো বাকি দিনগুলো যেভাবে আমার চাকরি জীবনে মানুষকে সেবা দিতে পেরেছি, সেভাবে পারি। আমি যেমনভাবে মাদকের বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আপস করি নাই এবং ভবিষ্যতে আমি যেনো সেসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আপস না করি। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি মনে করি আমি কোনো ভুল করি নাই। আমি মনে করি নারায়ণগঞ্জে যে কাজটি করেছি, সে কাজটি আবার করার চেষ্টা করব।’

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত পুলিশ সুপার (এসপি) হারুন অর রশীদকে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বিদায়ী বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি অঝরে কেঁদে ফেলেন। অনুষ্ঠান শেষে তিনি বিষন্ন মনে গাড়িতে করে নারায়ণগঞ্জ ত্যাগ করেন।
হারুন বলেন, ‘আগামী দিনগুলোতে আমার চাকরিটা যেমন ওই রকম হয়। আমার একটাই উদ্দেশ্যে, আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমার যখন বিএনপির আমলে চাকরি চলে গিয়েছিল, তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার চাকরি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। জামায়াত-শিবির আমার চাকরি খেয়েছিল। আমি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির জন্য বার বার যে ধরনের স্ট্যান্ড দরকার সে ধরনের স্ট্যান্ড নিয়েছি। এ নারায়ণগঞ্জকে ও গাজীপুরকে অশান্ত করার চেষ্টা করেছে, তাদের প্রত্যেককে কঠোর হস্তে দমন করেছি।’

অনুষ্ঠান শেষে এসপি হারুন নারায়ণগঞ্জ ত্যাগ করেন। বিদায়ের সময় পুলিশের নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে বহনকারী গাড়িটি ফুল দিয়ে সাজানো হয়। গাড়িটি রশি দিয়ে টেনে কিছুদূর নেওয়ার কথা থাকলেও এসপি হারুন তা করতে বারণ করেন।

বিদায়ী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, র‍্যাব-১২-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শমসের, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুম ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এ হাশেমের ছেলে আম্বার গ্রুপের চেয়ারম্যান শওকত আজিজ রাসেলের স্ত্রী ও ছেলেকে রাজধানীর গুলশানের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় নারায়ণগঞ্জের পুলিশ। পরে তাঁরা মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান।

ওই ঘটনার বিবরণ দিয়ে শওকত আজিজ সাংবাদিকদের বলেন, চাঁদা নিয়ে এসপি হারুন অর রশীদের সঙ্গে তাঁর পুরোনো বিরোধ ছিল। সম্প্রতি তিনি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে নতুন একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করেছেন। সেখানেও হারুন বাগড়া দিচ্ছিলেন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার তিনি তাঁর স্ত্রী-ছেলেকে একটি পার্টিতে নামিয়ে ঢাকা ক্লাবে আসেন। ক্লাব থেকে বেরিয়ে দেখেন তাঁর গাড়িটি নেই। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন গাড়ি আছে নারায়ণগঞ্জে। পরদিন রাতে তাঁর অনুপস্থিতিতে হারুন একদল পুলিশ নিয়ে তাঁর গুলশানের বাসায় ঢুকে ভাঙচুর করেন। এরপর তাঁর স্ত্রী-সন্তানকে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে যান। এ বিষয়ে নিকটস্থ গুলশান থানাকে কিছু জানায়নি নারায়ণগঞ্জের পুলিশ। পরদিন তাঁর খোয়া যাওয়া গাড়িতে ইয়াবা, মদ ও গুলি উদ্ধারের ঘটনা সাজিয়ে তাঁর ও তাঁর গাড়িচালকের নামে মামলা করেন। গুলশানের বাসা থেকে স্ত্রী-সন্তানকে তুলে নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও শওকত আজিজ রাসেল তাঁর ফেসবুকে শেয়ার করেন।

শওকত আজিজের স্ত্রী-ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর গত শনিবার নিজের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ভিন্ন একটি গল্প শোনান হারুন। তিনি দাবি করেন, শওকত আজিজের গাড়ি থেকে ২৮টি গুলি, এক হাজার ২০০ ইয়াবা বড়ি, ২৪ বোতল বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশি মদ, ৪৮ ক্যান বিয়ার উদ্ধার করা হয়েছে। ওই সময় গাড়িতে শওকতের স্ত্রী ফারাহ রাসেল ও সন্তান আনাব আজিজ ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের আটক করা হয়েছিল। পরে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে এম এ হাসেম সহযোগিতা করবেন বলে মুচলেকা দেওয়ায় তাঁর স্ত্রী-পুত্রকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এ ঘটনার দুই দিনের মাথায় গত ৩ নভেম্বর এসপি হারুনকে নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে ট্রেইনি রিজার্ভ (টিআর) পদে বদলি করা হয়। ওই বদলির পরও এসপি হারুন নারায়ণগঞ্জ ছাড়েননি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ উপলক্ষে গতকাল বুধবার নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জে গিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। এ সময় এসপি হারুন আর রশীদকে দেখে মুখভার করে নেন মন্ত্রী। এসপির উদ্দেশে মাথা নেড়ে কিছু কথা বলে মন্ত্রী চলে আসেন। এরপর থেকে সেই অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি এসপিকে। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় সংবর্ধনা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ ছাড়েন হারুন অর রশীদ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়