খালিদ আহমেদ : ২২ দিন নিষেধাজ্ঞা শেষে বুধবার রাত ১২টা ১মিনিট থেকে পদ্মা-মেঘনা ও সাগরে মাছ ধরতে নেমেছে জেলেরা। প্রায় ৫১ হাজার ১’শ ৯০ জন জেলে পরিবারে ফিরে এসেছে স্বস্তি ও উৎসবের আমেজ। কর্তৃপক্ষের দাবি মা ইলিশ রক্ষা কর্মসূচি সফল হওয়ায় এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
মা ইলিশ সংরক্ষণে সরকার গত ২২ দিন চাঁদপুর, ভোলা, লক্ষীপুরসহ দেশের ৫টি স্থানকে ইলিশের অভায়াশ্রম ঘোষণা করে। এ সময় নদীতে যে কোন ধরনের মাছ আহরণ, পরিবহন, মওজুদ, ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ ছিলো।
চাঁদপুর প্রতিনিধি মিজান লিটন জানান, দীর্ঘদিন পর নদীতে নামতে যাচ্ছে জেলেরা এ কারণে তাদের মাঝে আনন্দ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চাঁদপুর জেলা মৎস্য অফিসারের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গত ২২ দিনে মা ইলিশ রক্ষায় গঠিত জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স ও নৌ-পুলিশের বিশেষ অভিযানে ১৯৩ জেলেকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে প্রাপ্ত বয়স্কদের ১ বছর করে কারাদণ্ড এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক জেলেদের জরিমানা করা হয় ৩ লাখ ৬ হাজার ১৫ টাকা।
মেঘনা উপকূলীয় এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয় ২৭০টি। মাছঘাট পরিদর্শন ১৭৩টি, আড়ৎ ১০৮৩টি ও বাজার পরিদর্শন করা হয় ৬৪৬টি। জব্দ করা হয়েছে সাড়ে ৬ মেট্টিক টন মা ইলিশ। নিষিদ্ধ কারেন্টজাল জব্দ করা হয়েছে ১ কোটি ৬লাখ ৮হাজার মিটার। যার আনুমানিক মূল্য ২ কোটি ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হয়েছে ১০২টি। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ২১১টি।
লক্ষ্মীপুর থেকে জহিরুল ইসলাম জানান, ইলিশ শিকারের আনন্দে মেঘনা নদীতে নেমেছে লক্ষ্মীপুরের প্রায় ৬০ হাজার জেলে। ইতোমধ্যে জেলেরা বেশ প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছেন। অবসর সময়ে ঠিকঠাক করে নিয়েছেন জাল-নৌকাসহ মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ। অবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বুধবার রাত ১২টা থেকে জেলেরা নদীতে মাছ শিকারে নামেছেন। নদীতে মাছ ধরা শুরু হওয়ায় জেলে পরিবার গুলোতে উৎসব বিরাজ করছে। মেঘনা নদীর গোটা উপকূলীয় এলাকার ঘাটগুলো আবারও সরব হয়ে উঠেছে। যেখানে নিষেধাজ্ঞার সময় শুণ্যতা বিরাজ করছিলো সেখানে এখন আবারও প্রাণ সঞ্চলতা ফিরে এসেছে।
বরগুনা প্রতিনিধি ইমরান হোসাইন জানান, ইলিশের প্রজনন মৌসুম শেষে আবারও নদী এবং সাগরে মাছ শিকারে নেমেছে উপকূলীয় এলাকা বরগুনার পাথরঘাটার জেলেরা। রাত ১২টা থেকে শত-শত ট্রলার নিয়ে সাগরে মাছ শিকারে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন তারা।
২২ দিন পরিবার পরিজন নিয়ে চলতে কষ্ট হলেও আবারও নিজ পেশায় ফিরতে পেরে খুশি জেলেরা। এবার সাগর ও নদীতে ইলিশের পরিমাণ বাড়বে, এমনই আশা তাদের। ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞার কারণে ক্ষতিপূরণ হিসেবে জেলেদের ২০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়ছে সরকারের পক্ষ থেকে। নিষেধাজ্ঞার সময়ে সরকারের বরাদ্দকৃত চাল জেলেরা পেয়েছেন।
মৎস্য অধিদফতর সূত্র জানায়, নিষেধাজ্ঞার এ সময়ে মা ইলিশ ডিম ছাড়তে পেরেছে। কয়েকদিন অপেক্ষা করলেই মিলবে কাঙ্খিত ইলিশ। গত ৯ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ছিলো।
কেএ/এমআই
আপনার মতামত লিখুন :