সুজন কৈরী : এর মধ্যে কয়েকটি গাড়ি বেশ পুরনো মডেলের। গাড়িগুলো দীর্ঘ সময় ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) কর্মকর্তারা জানান, পাশাপাশি দুটির ভবনের হোল্ডিং আলাদা। তবে একটি থেকে আরেকটিতে যাওয়া আসা করা যায়। কমকর্তারা সবগুলো কক্ষে তল্লাশি চালাতে পারেননি। অধিকাংশ কক্ষই ছিলো তালাবদ্ধ।
খোলা কক্ষগুলোতে ছিলো খুবই দামি আসবাবপত্র। বাড়িগুলোর সবকিছু চাকচিক্যময়। একটি ভবনের তিনতলায় দুটি কক্ষের একটি বন্ধ থাকলেও অন্যটি খোলা ছিলো। তাতে ছড়ানো-ছিটানো ছিলো বিভিন্ন চিত্রকর্ম। আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের পোর্ট্রটেও ছিলো সেখানে। বিশাল বসার ঘরে এলোমেলোভাবে পড়ে ছিলো বিভিন্ন কাপড় ও প্রসাধনী সামগ্রীর বাক্স।
কর্মকর্তারা জানান, একটি ভবনের তৃতীয় তলার ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট এবং বাড়ির ছাদ বিশেষ কারুকার্যে নির্মিত। ছাদের ঘরটি মিনি বারের মতো। সেখানে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের পরিচিতরাই বেশি আসা যাওয়া করতেন। বাইরের লোকজনের যাওয়া আসার সুযোগ নেই বললেই চলে। এছাড়া অপর ভবনের চার তলার একটি ফ্লাটে পাওয়া যায় বিপুল পরিমাণ মদের বোতল, সিসা ও ক্যাসিনো সামগ্রী।
ডিএনসির কর্মকর্তারা জানান, দুটি বাড়ির প্রত্যেক তলায়ই রয়েছে ফায়ার এক্সিট। যাকে গোপনীয় সিঁড়িও বলা যেতে পারে। রান্নাঘরের এক কোনে থাকা এ সিঁড়ি চলে গেছে আন্ডারগ্রাউন্ডে। কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান থেকে বাঁচতে সিঁড়িটি ব্যবহার করা হতো। অভিযানকালে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ভাতিজা ওমর মোহাম্মদ ভাই বাসায় থাকলেও তিনি ওই সিঁড়ি ব্যবহার করে পালিয়ে যান বলে ধারণা করছেন অভিযান চালানো কর্মকর্তারা। ১১/এ নম্বর ভবনটি আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও তার ভাই প্রয়াত রাজা মোহাম্মদ ভাইয়ের। রাজা মারা যাওয়ার পর সেখানে তার দুই ছেলে ওমর মোহাম্মদ ভাই ও ফাহাদ মোহাম্মদ ভাই থাকেন। আর ১১/বি নম্বর ভবনটি তার দুই বোন নুরজাহান ও সকিনার। এই নুরজাহানের ছেলেই হচ্ছেন ইয়াবা সম্রাট হিসেবে খ্যাত আমিন হুদা। যাকে ২০০৭ সালের ২৫ অক্টোবর র্যাব গ্রেপ্তার করে।
ওই বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক নবীন মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, দুটি বাড়িতে ২০ জনের মতো মানুষ থাকেন। তারা সবাই আত্মীয়-স্বজন। তার আট-নয় বছরের চাকরি জীবনে কখনও আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে দেখেননি। তবে তার স্ত্রী নওরীন মাঝে মাঝে আসেন এবং থাকেন। তিনি আরো জানান, ওমর মোহাম্মদ ভাই বাড়িতে থাকেন না। সেখানে তার ভাই ফাহাদ থাকেন। তবে শনিবার ওমর বাড়িতে এসেছিলেন। রোববারের অভিযানে ওমর বাড়িতে ছিলেন। অভিযানের আগে বা চলাকালে তিনি চলে যান।
আজিজ মোহাম্মদের বোন সখিনা মীর আলী সাংবাদিকদের নিজের পরিচয় দিতে চাননি। একটি বাড়ির পাঁচ তলায় থাকেন উল্লেখ করে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ফ্ল্যাটে কী আছে, না আছে, তা আমাদের জানা নেই।
ডিএনসির ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক ফজলুর রহমান বলেন, আবাসিক ভবনে মদের এমন বিশাল সম্ভার থাকা সন্দেহজনক। এর সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করা হবে।
এসকে/এমআই/এসবি
আপনার মতামত লিখুন :