মো. তৌহিদ এলাহী : দুর্নীতি দমন কমিশন প্রভাবশালী ৭১ দুর্নীতিবাজের তালিকা হাতে নিয়েছে । তাদের বিরুদ্ধে দুনীর্তির তথ্য প্রমান সংগ্রহ করার জন্য ইতিমধ্যে নেমেছে অভিযানে। এই দুর্নীতিবাজরা ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত। তাদের অবৈধ সম্পদের হিসাব নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়ে তাদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে। যুগান্তর
তালিকাভুক্তদের পাশাপাশি তাদের স্ত্রী-সন্তান, নিজস্ব কোম্পানির ব্যাংক হিসাবের তথ্যও চাওয়া হয়েছে। এর আওতায় চলতি মেয়াদি হিসাবের স্থিতি, লেনদেন বিবরণী ও ভল্ট যদি থাকে সেই তথ্য দুদককে সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।
দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধানের কাছে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন। রবি ও সোমবার ২ দিন আলাদা চিঠিতে ৭১ জনের নাম পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত বলেন, অনুসন্ধানের প্রয়োজনে অনেকের তথ্য চাওয়া হয়েছে। তদন্ত টিম এ নিয়ে কাজ করছে। তিনি বলেন, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর অনেকেই গ্রেফতার হয়েছেন। তারাসহ অনেকের ব্যাংক হিসাবে লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে। সে বিষয়েও তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে।
তালিকায় সরকারি দলের চার এমপির নাম আছে। তারা হলেন- বরিশাল-৪ আসনের এমপি ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ নাথ, ভোলার এমপি নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন ও তার স্ত্রী ফারজানা চৌধুরী, চট্টগ্রামের এমপি ও চট্টগ্রাম আবাহনী ক্লাবের মহাসচিব শামসুল হক চৌধুরী, সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। তালিকায় আছেন- সাতক্ষীরার সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার মজিবুর রহমান, সাবেক এমপি শামসুল হক ভূঁইয়া, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদ্য বিদায়ী সভাপতি মোল্লা আবু কাওসার, তার স্ত্রী পারভিন সুলতানা, যুবলীগের সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাবেক সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, যুবলীগ দক্ষিণের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও বরখাস্ত ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোমিনুল হক সাঈদ, ৩৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারিকুজ্জামান রাজিব, ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান ওরফে পাগলা মিজান, কৃষক লীগ নেতা ও কলাবাগান ক্লাবের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ, যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি নেতা গাজী সারোয়ার বাবু, ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি এসএম রবিউল ইসলাম সোহেল, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহাগ, এফ রহমান হলের ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, যুবলীগের জি কে শামীম, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, জি কে শামীমের ক্যাশিয়ার জিয়া, সোহেল ও নাঈম, যুবলীগ দক্ষিণের সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমান, যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হোসেন স্বপন, সরোয়ার হোসেন মনা, নির্বাহী সদস্য জাকির হোসেন, ৪১নং ওয়ার্ডের সহ-সভাপতি তাবিবুল হক তামিম, যুবলীগের বহিষ্কৃত দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান আনিস, ওয়ান্ডার্স ক্লাবের আবুল কালাম, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, আবুল কালাম আজাদ, সিলভার ওয়াই রিসোর্টের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন মন্টু, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল করিম চৌধুরী স্বপন, পরিচালক জাওয়াদ উদ্দিন, এসএইচ মহসীন, জিয়া উদ্দিন আবীর, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক জামিল উদ্দিন শুভ, পরিচালক উম্মে হাবিবা নাসিমা আক্তার, গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি এনামুল হক এনু, যুগ্ম সম্পাদক রুপন চৌধুরী, ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি রাশেদুল হক ভূঁইয়া, ৪১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক বাতেনুল হক ভূঁইয়া, হারুনুর রশিদ, অনলাইন ক্যাসিনো সম্রাট সেলিম প্রধান, পদ্মা অ্যাসোসিয়েটস নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার মিনারুল চাকলাদার, ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার রেজোয়ান মোস্তাফিজ, মেসার্স জামাল অ্যান্ড কোংয়ের জামাল হোসেন, বনানী গোল্ড ক্লাবের আবদুল আউয়াল, ব্যবসায়ী আবুল কাশেম।
এ ছাড়া গণপূর্ত অধিদফতরের ১৬ কর্মকর্তা আছেন এ তালিকায়। এরা হলেন- গণপূর্ত অধিদফতরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান মুন্সী, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুল হাই, শিক্ষা অধিদফতরের ঠিকাদার শফিকুল ইসলাম, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাজ্জাদ, মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখার সিনিয়র সহকারী প্রধান মুমিতুর রহমান, গণপূর্ত অধিদফতরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন, নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল কাদের, আফসার উদ্দিন, ইলিয়াস আহমেদ, স্বপন চাকমা, প্রধান প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে, নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল হক মধু, শওকত উল্লাহ, গণপূর্ত সার্কেল-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল হক।
১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হয়েছে। মূলত এর মাধ্যমে শুরু হয় দুর্নীতিবিরোধী অভিযান। এতে অনেকের সংশ্লিষ্টতা বেরিয়ে আসছে। তালিকাভুক্ত অনেকেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে কমিশন বাণিজ্য, অনিয়ম-দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও দখলবাজিসহ নানা ধরনের অপরাধে জড়িত। দুর্নীতি করে অনেকে শত শত কোটি টাকা কামিয়ে দেশের বাইরে পাচার করেছেন। দেশে তাদের কী পরিমাণ সম্পদ আছে তা প্রথম দফায় খুঁজে বের করার কার্যক্রম চলছে।
বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতেও নানাভাবে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। দুদক কর্মকর্তারা এরই মধ্যে বিএফআইউর প্রধান ও অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে বা দলের পদ-পদবি ব্যবহার করে যারা দুর্নীতি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনভাবে তদন্ত করতে সামনে কোনো বাধা নেই বলে মনে করছে দুদক। দুর্নীতিতে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দুটি তালিকা প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন নাম। তালিকায় রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ের অনেকের নামও থাকতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
আপনার মতামত লিখুন :