মাসুদ আলম : বাংলাদেশের রহস্যময় ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের তালিকা করলে প্রথম দিকেই থাকবে যাদের নাম তাদের একজন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। যাকে নিয়ে আছে নানা গল্প, নানা রহস্য। আর এসব গল্পের বেশিরভাগই চলচ্চিত্র জগতের নারী, হত্যাকাণ্ড, মাদক, অস্ত্র ও স্বর্ণ চোরাচালান কেন্দ্রিক। চোরাচালানের মাধ্যমে রাতারাতি হয়ে যান কোটিপতি। দেশ-বিদেশে রয়েছে তার অঢেল সম্পদ। তার দুই স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের মধ্যে ছোট স্ত্রী নওরিনের ভাই ও তার চার সন্তান নিয়ে থাইল্যান্ডে বসবাস করছেন আজিজ। আর বড় স্ত্রী লন্ডনে থাকেন। নওরিনই দেশের ব্যবসা দেখাশুনা করেন। তার নেশা ছিলো নারী ও স্বর্ণ চোরাচালান। রোববার তার গুলশানের বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মদ, সিসা, গাঁজা ও বিয়ার উদ্ধার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, নামের সাথে ‘ভাই’ শব্দটি থাকার কারণে অনেকেই মনে করেন গডফাদার বলেই তাকে ভাই বলা হয়। সাধারণত মাফিয়া ডন বা গডফাদারদেরকে ভাই ডাকে তাদের অনুগতরা। কিন্তু আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের নামে ‘ভাই’ শব্দটি মূলত তাদের বংশপদবী। তাদের পরিবারের সকলেরই নামের শেষে ভাই পদবী আছে। এমনকি নারীদের নামের সাথেও ভাই দেখতে পাবেন। তার পিতার নাম মোহাম্মদ ভাই। মায়ের নাম খাদিজা মোহাম্মদ ভাই। ১৯৪৭ এ ভারত ভাগের পর তাদের পরিবার ভারতের গুজরাট থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশে আসে। তাদের পরিবার মূলত পারস্য বংশোদ্ভুত। তারা ‘বাহাইয়ান’ সম্প্রদায়ের লোক। বাহাইয়ান’কে সংক্ষেপে ‘বাহাই’ বলা হয়। উপমহাদেশের উচ্চারণে এই ‘বাহাই’ পরবর্তীতে ‘ভাই’ হয়ে যায়। ধনাঢ্য এই পরিবার পুরান ঢাকায় বসবাস শুরু করে। ১৯৬২ সালে আজিজ মোহম্মদ ভাইয়ের জন্ম হয় ঢাকার আরমানিটোলায়।
পারবারিক সূত্রে আজিজ মোহাম্মদ ভাই নিজেও শুরু করে ব্যবসা। দিনে দিনে বাড়তে থাকে তার অর্থ সম্পদ। অলিম্পিক ব্যাটারি, অলিম্পিক বলপেন, অলিম্পিক ব্রেড ও বিস্কুট, এমবি ফার্মাসিটিউক্যাল, এমবি ফিল্ম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি। এছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, দুবাই, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, হংকং, সিঙ্গাপুরে রয়েছে তার হোটেল ও রিসোর্ট ব্যাবসা। ভারতের পলাতক ডন দাউদ ইব্রাহিমের সাথে রয়েছে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।
সূত্র আরো জানান, ব্যবসার পাশাপাশি ৯০ এর দশকে আজিজ মোহাম্মদ ভাই এমবি ফিল্মসের ব্যানারে চলচ্চিত্র প্রযোজনায় আসেন। নায়িকাদের রূপের মোহে কালো টাকা সাদা করতে মিডিয়ার মনযোগ কাড়তে প্রযোজনায় আসলেন। চলচ্চিত্র জগতে ছিলো তার একক আধিপত্য। অর্ধশতাধিকের বেশি মতো চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন তিনি। এরশাদের আমলে একবার গ্রেপ্তার হন তিনি। প্রচলিত আছে এক নারী নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণেই তাকে গ্রেপ্তার হতে হয়েছিলো। পরে লন্ডনের প্রিন্স করিম আগাখানের সুপারিশে মুক্তি পান তিনি। চিত্রনায়ক সালমান শাহ ও সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। ঢাকা ক্লাবের কোনো একটি পার্টিতে সালমানের স্ত্রী সামিরাকে চুমু দেয় আজিজ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সকলের সামনে আজিজকে চড় মারে সালমান। ওয়ান ইলেভেনের সময় বিদেশে পালিয়ে যান তিনি। তার ভাগিনা ইয়াবা সম্রাট আমিন হুদা কারাগারে রয়েছে।
আজিজের সাবেক এক কর্মচারী জানান, বিদেশে থাকলেও দেশের অপরাধ জগতে ছিলো তার আধিপত্য। গুলশানের ওই বাসায় প্রতিরাতে বসতো মাদের আসর ও ডিজি পার্টি। এটি মিনি বার হিসেবে পরিচিত ছিলো ধনির দোলাল ও দোলালীদের কাছে। সম্পাদনা : এইচ
আপনার মতামত লিখুন :