সমীরণ রায়: অগ্নিযুগের বিপ্লবী, মাস্টারদা সূর্য সেনের সহযোগী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন ছিলেন অধ্যাপক পুলিন দে। প্রায় বছর খানেক শয্যাশায়ী থাকার পর ২০০০ সালের ১১ অক্টোবর তিনি মারা যান। মৃত্যুর পর বছর খানেক পর্যন্ত তাঁকে অত্যন্ত দায়সারাভাবে স্মরণ করা হলেও পরে তাও করা হয়নি। বলা যেতে পারে বিস্মৃত এক অধ্যায় তিনি। অর্থ, বিত্ত, বৈভব, উত্তরাধিকার কোনটি তাঁর ছিল না। এরপরেও পুলিন দে স্বমহিমায় ভাস্বর। তাই এবার চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ আগামী ১৪ অক্টোবর অধ্যাপক পুলিন দে’র ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক স্মরণ সভার আয়োজন করেছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির।
আ জ ম নাছির বলেন, অধ্যাপক পুলিন দে ছিলেন অগ্নিযুগের বিপ্লবী। উচ্চ মেধা ও মননের অধিকারীরা সমাজে সংঘবদ্ধ মানুষদের মধ্যে শীর্ষস্থান ও পদগুলো লাভ করেন তিনি। পুলিন দে আমৃত্যু আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। তিনি ব্যক্তি ইতিহাসের অংশ হলেও কালের বিবর্তনে বিস্মৃত অধ্যায়ে যুক্ত হয়। কিন্তু এবার চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ আগামী ১৪ অক্টোবর তার স্মরণ সভার করার উদ্যোগ নিয়েছে।
এদিকে গত শুক্রবার অধ্যাপক পুলিন দে’র মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল নিজ
ফেসবুক পেইজে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি লেখেন, অধ্যাপক পুলিন দে ছিলেন অগ্নিযুগের বিপ্লবী, মাস্টারদা সূর্য সেনের সহযোগী। এই খাদির ফতুয়া পাঞ্জাবি আর সাদা ধুতির মোটা চশমা, ছোটখাট গড়নের শান্তসৌম্য প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিত্ব, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত প্রিয়ভাজন ছিলেন। আজকের প্রজন্মের অনেকেই হয়তো তার সম্পর্কে পরিচিত নন। আমি তাকে পুলিন জেঠু বলে সম্বোধন করতাম। শৈশবে কখনও গ্রান্ড হোটেলে, কখনও দারুল ফজল মার্কেট বা গোল্ডেন ইন, বা কায়সার (আতাউর রহমান খান কায়সার) চাচার বাসায়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সান্নিধ্য পেয়েছি, এদের মধ্যে পুলিন জেঠু ছিলেন অন্যতম। এছাড়াও অধ্যাপক পুলিন দে’র সঙ্গে তার স্মৃতিময় কিছু বক্তব্যও তুলে ধরেন।
পুলিন দে’র জন্ম ১৯১৪ সালের ১ অক্টোবর পটিয়ার ধলঘাটে। বাবা সারদা কুমার দে, মায়ের নাম সাবিত্রী দেবী। তিন বোন, দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি জ্যেষ্ঠ। বাবা ছিলেন ডাক কর্মচারী। পুলিন দে পড়াশোনা করেছিলেন ধলঘাট হাইস্কুলে। ম্যাট্রিক পাস করেছিলেন প্রথম বিভাগে। তারপর সব পরীক্ষাই দিয়েছিলেন জেল থেকে।
কৈশোরে পুলিন দে যোগ দিয়েছিলেন মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে পরিচালিত ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মিতে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯৩৫ সালে হিজলী বন্দি নিবাস থেকে আইএ, রংপুর জেল থেকে ১৯৩৭ সালে বিএ এবং প্রেসিডেন্সী জেল থেকে পরীক্ষা দিয়ে ১৯৪৪ সালে তিনি এমএ পাস করেন।