শিরোনাম
◈ আওয়ামী লীগের দোসররা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে: মধ্যরাতে সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (ভিডিও) ◈ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে মধ্যরাতে ঢাবিতে বিক্ষোভ (ভিডিও) ◈ মধ্যরাতে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আসছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ◈ 'আ. লীগের বিচার না করলে জনগণ আবার আন্দোলনে নামবে' (ভিডিও) ◈ বনশ্রীতে ব্যবসায়ীকে গুলি, ২০০ ভরি স্বর্ণ লুট (ভিডিও) ◈ দেশের সব মেডিকেল কলেজে সোমবার ‘একাডেমিক শাটডাউন’ ◈ এবার জামায়াতের আমীরের বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে শিবির ◈ জুনে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করবে নেপাল ◈ চলন্ত বাসে ডাকাতি-শ্লীলতাহানি; ভুক্তভোগী নারীর লোমহর্ষক বর্ণনা! ভিডিও ◈ মধুর ক্যান্টিনে শিবিরের উপস্থিতি মুক্তিযুদ্ধকে কলঙ্কিত করে: ছাত্রদল

প্রকাশিত : ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ০৬:০০ সকাল
আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ০৬:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অধ্যাপক সায়ীদের শাড়ি ও সুশীলের নয়া কামসূত্র

শারমিন শামস্ : ২০১৯ সালে এই ভ-ামী প্রতিষ্ঠিত মডারেট মুসলিম সুশীল সমাজের বুদ্ধিজীবীদের নেতায়ে পড়া বৃদ্ধ যৌনাঙ্গকে ফের দ-ায়মান করতে ঠিক যে ফরমেটে একখানা কামসূত্র লিখে এক জাতীয় দৈনিকের সাহিত্য পাতায় ছাপাইলে সেই নেতানো বস্তু দুই-তিন মিনিট কর্মক্ষম রাখা যাবে, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের শাড়ি নামের বস্তুটি ঠিক সেই ফরমেটেই লেখা! এই কামসূত্রটি পড়তে পড়তে মনে হইলো, এই একবিংশ শতাব্দীতে এতো পথ পাড়ি দেয়ার পরও মানুষ জাতির অন্তর্গত হইতে নারীর যে লড়াই, তা এখনো এই দেশে অতি দূর অস্ত। কারণ শুধুমাত্র অশিক্ষিত মূর্খ অসংস্কৃত লোকেদের ঘরে ঘরে গিয়া চক্ষু খুলবার যে লড়াই আমাদের করতে হবে বলে আমরা ভাবী, আসলে তা একটা ফাপা ভাবনা ও হুদাই প্রচেষ্টামাত্র। সুশীল ও সংস্কৃতবানের মুখোশ এঁটে যে পুরুষতান্ত্রিক পুরষেরা এই সমাজের ভেতরে বসে এখনো কলকাঠি নেড়ে চলেছে, আমরা এখনো তাদের আসল চেহারাটা বুঝেই উঠতে পারি নাই, প্রকাশ করবো কোন উপায়ে? লেখাটা পড়তে গিয়া আমার তীব্র মানসিক ও শারীরিক কষ্ট দুই-ই হইসে। লেখার শুরুর বাক্যই প্রতিষ্ঠা করে, এখনো আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের মনের ভেতরের আরাধ্য সমাজের নারী তার গোলগাল স্তন, কোমরের বাঁক, পাছার খাদ, বাহুর কোমলতাসহ তাবৎ পুরুষের মনোরঞ্জন ও চাহিদা মেটানোর একমাত্র লক্ষ্য নিয়া ধরাধামে আবির্ভূত হইসেন। তাই নারীর পোশাক এখনো নারীর শরীর ঢাকা, তাপমাত্রা ও আবহাওয়া থেকে নারীকে রক্ষা করার কাজে যতোটা না দরকার, তা চেয়ে বেশি তার পোশাক পরতে হয়... পুরুষের চোখে তার নারী শরীরকে বাজারে তুইলা বেচার উপযোগী ও আবেদনময়ী করে তোলার প্রয়োজনে। তাই আমার গায়ের বা আমার আম্মার গায়ের শাড়ি এখন আমার বুক, পেট, পাছা ঢাকতে ও গ্রীষ্ম, বর্ষায়, শীতে আমাকে আরাম দিতে যতোটা না দরকার, তার চেয়ে বেশি জরুরি এইটা যে, এই শাড়ি পইরা আমি সায়ীদ স্যারসহ তাবৎ পুরুষকুলের শইলে কতোটা আগুন জ্বালাইতে পারলাম... সেইটা।

নারী জন্মের মুখ্য কর্ম যেহেতু পুরুষের শইলে আগুন জ্বালানো ও নিভানো এবং আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের মতে সেই কাজটা শাড়ির চায়া ভালো কোনো পোশাক করতে পারে না, তাই বাঙালির সমাজের নপুংসক পুরুষের ন্যাতানো অঙ্গের চিকিৎসার্থে শাড়ি অবশ্যই খুব ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থা, এই কথা সায়ীদ ভুল বলেন নাই। রবীন্দ্রনাথ বৈদেশ গিয়া মিনিটে দশটা কইরা সুন্দর নারী দেইখা চক্ষু জুড়াইতেন। সায়ীদের মনে তীব্র আফসোস, এই দেশে ঘণ্টায় মাত্র এক আধজন কইরা সুন্দরী রমণীর দেখা তিনি পান, যাদের দেইখা তার মনে ও শরীরে আগুন জ্বলে। সংখ্যাটি অত্যন্ত কম, এটি নিঃসন্দেহে আফসোসেরই ব্যাপার। নারীর একমাত্র কাজ যদি পুরুষের শরীর সেবা ও ক্ষুধা নিবারণই হয়া থাকে, তবে আমাদের দেশের খারাপ চেহারার নারীদের উচিত সেই কাজটা মন দিয়া করা। কী করলে শইলের ভাঁজ আরও গাঢ়মতো ফুইটা উঠবে, পাছার খাদ স্পষ্ট হবে, বুকের দুধের উচ্চা-নিচা টকটকায়া সকল আলোকিত পুরুষের ঢেউ তুলবে, এটি নিয়া আমাদের আরও আগে ভাবা উচিত ছিলো। আমরা বেহায়া বেশরম দেখতে খারাপ বুদ্ধিহীন নারীরা সেটি না করে, শাড়ি পরা কমায়ে দিসি। এর বদলে আমরা এমন পোশাক পরতেসি যেটি পইরা ঘরে বাইরে কাজ কাম চাকরি বাকরি পড়াশোনা করতে সুবিধা হয়, সময় নষ্ট কম হয়, দৌঁড়ঝাপ করা যায়! কতো বড় বুদ্ধিহীন আমরা দেখেন। অথচ ‘শাড়ি একখান সর্বশ্রেষ্ঠ যৌনাবেদনময় পোশাক।’ এটি পইরা কি সুন্দর শইল সামান্য বাইর সামান্য ভেতরে থাকে। রহস্য খেলা করে। সেই রহস্য পুরুষ শইলে দোলা দেয়। এই দোলাটা তাদের দরকার। কেননা তারা জগতে বিজ্ঞান প্রযুক্তি রাজনীতি সমাজনীতি সাহিত্যসহ বড় বড় কাম কইরা দুনিয়া চালান। এই দুনিয়া চালাইতে চালাইতে তাদের যখন সেক্সের দরকার হয় তখন তারা নারীর শইল দেখেন, চাটেন, সেক্স করেন এবং রিচার্জ হইয়া ফের কামে যান। তো এখন নারী যদি দেখতে খারাপ হয়, নারীর যদি উচ্চতা কম হয়, নারীর যদি বুক ছোট হয়, পাছা কম মোটা হয়, কোমর ভারি না হয়, যা কিনা বাঙালি নারীর জাতিগত বৈশিষ্ট্য, তো বাঙাল পুরুষের শইল তাইলে জাগবে কেমনে! কীভাবে তারা জগত সংসারের তাবৎ কাম করবে যদি তার দ- শীতল না হয়?

বাঙালি নারী এই তাবৎ পুরুষকুলের কথা চিন্তা করে না। তারা ইদানীং বড় বাড় বাড়ছে। তাদের শইলে আর শাড়ি দেখা যায় না। তাদের খুঁত ঢাকার কথা তাদের মনে থাকে না। পুরুষের চোখে আবেদনময় হয়ে ওঠার চিন্তা আর তারা ইদানীং করে না সেইভাবে। তারা এখন খালি নিজেদের কথা ভাবতেসে। পুরুষের শইল গরম করার কথা তাদের মাথায় নাই। শাড়ি পইরা নিজেদের উচ্চতা, পেটের চর্বি, বুকের অপুরুষ্ঠতা, পাছার ভারিত্ব ঢাইকা তারা দিব্যি নিজেদের কামময়ী দেবী হইয়া পুরুষের দরবারে মক্ষীর আসনে বইসা থাকতে পারতো। ডাক আসামাত্র পা জোড়া মেলাইয়া দিয়া দেহদানে প্রবৃত্ত হইতে পারতো। তা নয়। মেয়েগুলোর বড় বাড় বাড়ছে। এরা জিন্স পরে। টি পরে। মিনি পরে। পইরা ভাবে এইভাবে তারা নিজেদের যা ইচ্ছা তাই পরবে। যা ইচ্ছা তাই করবে। পোশাকের মধ্য দিয়া তাদের প্রতিবাদ শুরু হইসে। এখন তারা আস্তে আস্তে সকল দিকে নিজেদের ইচ্ছার বাস্তবায়ন করবে। এমনকি যৌনতার ব্যাপারেও তারা নিজেদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, রুচি, চাহিদা প্রকাশ করতে শুরু করছে। এখন এই ধ্বজভঙ্গের দেশে এ বড় আশঙ্কার কথা। চিন্তার ব্যাপার। যে যৌনতা একদিন পুরুষরে রাজাধিরাজ করে রাখছিলো আর নারীকে করে রাখছিলো আলমিরাতে সাজায়ে রাখা যৌন পুতুল, আজ সেই আলমিরা ভেঙে বের হয়ে আসা নারী কইতেসে, ‘আমাদের শইল ক্যামনে জাগবে তা আমরা জানি। আমাদের কী চাই, কারে চাই তাও আমরা জানি। অতএব আমাদের যৌনতাকে আমরাই পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করবো।’ নারীর পোশাকের উপর পুরুষের নিয়ন্ত্রণ পুরুষতন্ত্রের সবচেয়ে আদিম ও কুৎসিততম অস্ত্র। অশিক্ষিত বুদ্ধিহীন পুরুষতন্ত্র পোশাকের উপর নিয়ন্ত্রণ আনে সরাসরি। আর সায়ীদের মতো সংস্কৃতি বেচা মেধাবী বলে পরিচিত পুরুষের নিয়ন্ত্রণের কৌশল আলাদা। এরা জন্মের পর থেকে নারীকে পুরুষের চেয়ে কম, নিচু ও দলিত স্থানে জেনে মেনে ও প্রচার করে এসেছে। নিজেদের শক্তিময় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে নারীকে ব্যবহার করেছে। আজ নারীর জেগে ওঠা ও উত্থান তাদের মনে আতঙ্ক জাগায়। তাদের পায়ের নিচের মাটি কেঁপে ওঠে। তারা তাই সবলে ঐক্যবদ্ধ হতে চায় নারীর বিরুদ্ধে। পুরুষের যৌনতা ও ভোগের জন্য নারীর সেই আদিম একমাত্র জায়গাটিতে তারা নারীকে ফেরত পাঠাতে চায়। আজ তাই এ রকম একটি কুৎসিত আপত্তিকর সেক্সিষ্ট লেখা লিখে সেটা প্রকাশিত হয় জাতীয় দৈনিকে। সেটির ব্যাপক বিজ্ঞাপন হয়। লোকে সেই লেখা পড়ে, মাথা নাড়ে আর কয়, ‘ঠিক ঠিক। কই গেলো সেই স্বর্ণালী দিন যখন মাইয়া মানুষ ছিলো আসলেই মাইয়া মানুষ।’ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের লেখাটি শুধু মডারেট মুসলিম সুশীলের কামসূত্র নয়। এটা পইড়া মনে হইসে, জেগে ওঠা, এগিয়ে যাওয়া, পুরুষতন্ত্রকে নির্মূলের পথে হাঁটা তেজী নারী সমাজের প্রতি তীব্র দ্বেষ, ঘৃণা ও ঈর্ষা জমিয়ে রাখছেন তিনি। সেইসঙ্গে অবদমিত রিপুর অত্যাচারে তিনি ক্লান্ত ও ব্যথিত। যা এই সমাজের অধিকাংশ পুরুষের প্রকৃত অবস্থা। শরীরে মনে ও আত্মায়। আমি আবদুল্লাহ আবু আয়ীদসহ সব বাঙালি সুশীল পুরুষের আত্মার শান্তি কামনা করি। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়