মোজাম্মেল হোসেন তোহা : প্রতি বছর বাংলাদেশিরা দলে দলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যায়। শুধু বৈধভাবে নয়, অবৈধভাবেও যায়। হয়তো অবৈধভাবেই বেশি যায়। লিবিয়াতে যুদ্ধ চলছে। সরকারিভাবে লিবিয়াতে আসার উপর নিষেধাজ্ঞা আছে। তারপরও প্রতিদিন বিশ-ত্রিশজন করে অবৈধভাবে লিবিয়াতে প্রবেশ করছে। এদের অনেকেরই লক্ষ্য ওপারে যাওয়া। এখন আর যেতে পারে না, কিন্তু ২০১৭ সালের প্রথম ভাগেও লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়া নাগরিকদের মধ্যে বাংলাদেশিদের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। এসব অবৈধ বাংলাদেশিরা কিন্তু সবাই সাধু নয়। বিভিন্ন দেশে এরা বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। লিবিয়াতে বাংলাদেশিরা কিডন্যাপিংয়ের সঙ্গে জড়িত। ফ্রন্টে থাকে লিবিয়ান মিলিশিয়ারা, পেছনে কেনাবেচা হয় বাংলাদেশিদের হাতে। অ্যাটলিস্ট যতো বাংলাদেশি কিডন্যাপ হয়, অধিকাংশই হয় বাংলাদেশি কিডন্যাপারদের কারণে।
ইতালিতে যে অবৈধভাবে হাজার হাজার মানুষ পাঠানো হয়, এর সঙ্গেও বাংলাদেশি দালালরা জড়িত। দেশ থেকে যেসব বাংলাদেশি দালালরা অবৈধভাবে লিবিয়াতে আনে, তারা অনেক সময়ই বাড়তি টাকার জন্য গোডাউনে দিনের পর দিনে আটকে রাখে। অকথ্য নির্যাতন করে ইমোতে সেই ভিডিও দেশে পাঠিয়ে টাকা আদায় করে। এর বাইরেও বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশিরা। মসজিদ বানানোর কথা বলে জুমার নামাজের শেষে টাকা তুলে সেটা মেরে দিতেও দেখেছি বাংলাদেশিদের। যদিও আফ্রিকানদের তুলনায় লিবিয়ার বাংলাদেশিরা কম অপরাধী, কিন্তু অবৈধ মানুষের সংখ্যা যতো বাড়বে, কাজকর্মের সুযোগ যতো কমবে, অপরাধ ততো বাড়বে... এটাই স্বাভাবিক। ধারণা করি শুধু লিবিয়া নয়, বিশ্বের সব দেশেই বাংলাদেশিরা এ রকম অপরাধের সঙ্গে জড়িত। এখন কোনো দেশ যদি এ রকম কিছু ঘটনার কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে সব বাংলাদেশিদের গণহারে দেশে ফেরত পাঠায় ভালো হবে না? এই যে আপনি রোহিঙ্গাদের অপরাধগুলোকে ইনডিভিজুয়াল কেস হিসেবে না দেখে পুরো রোহিঙ্গা জাতির বিরুদ্ধেই জেনোফোবিক স্লোগান দিচ্ছেন, আপনার স্বজাতি বাংলাদেশিরা কি খুব সাধু? রোহিঙ্গা সমস্যা একটা সিরিয়াস সমস্যা। এটা সমাধানের জন্য সুপরিকল্পিত, সিরিয়াস উদ্যোগ প্রয়োজন। মিডিয়ার উসকানিতে জাতিগত বিদ্বেষী স্লোগান দিয়ে আপনি নিজেই রেসিস্ট, ফ্যাসিস্ট, সুপ্রিমেসিস্ট হয়ে উঠবেন, তাতে দেশের কোনো লাভ হবে না।
ঘৃণা ছড়িয়ে আপনি একদল কয়েক হাজার লোক নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে আগুন লাগিয়ে দিয়ে আসতে পারবেন, রুয়ান্ডার হুতু-তুতসিদের মতো দা-বটি নিয়ে কুপিয়ে গণহত্যাও ঘটিয়ে আসতে পারবেন। উসকানি দিয়ে মানুষকে খেপিয়ে তোলা খুবই সহজ। কিন্তু তাতেও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি ছাড়া লাভ কিছু হবে না। মিডিয়ার এবং ফেসবুকের অতি জাতীয়তাবাদী কিংবা বামপন্থীবেশী ইসলামবিদ্বেষীদের উসকানিতে প্রভাবিত না হয়ে লজিকালি চিন্তা করেন। সরকারকেই উপযুক্ত পলিসি নির্ধারণ করতে দেন। নিজেরা পাল্টা উসকানি দেবেন না। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :