ইউসুফ আলী বাচ্চু : সরকারের গোয়েন্দা বাহিনী কাউকে গুম করলে তার সংবাদ প্রধানমন্ত্রী পান কিনা সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, 'আপনার গোয়েন্দা বাহিনী, ভারতীয় র' এবং ইসরায়েলি মোসাদ এরা সম্মিলিতভাবে কাউকে যখন গুম করে, তার সংবাদ আপনিও (প্রধানমন্ত্রী) পুরোপুরি জানেন কিনা তা আমার জানা নেই।'
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে গুম হওয়া পরিবারদের সংগঠন “মায়ের ডাক” আয়োজিত আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেছেন।
জাফরুল্লাহ বলেন, 'এখানে একটা গুমও আল্লাহ করে নাই। আল্লাহ যদি কাউকে গুম করে, তাহলে তার জানাযার পড়ার সুযোগ হয়। আপনি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করতে যাচ্ছেন। সবচেয়ে ভালো উপহার হবে জাতির প্রতি, যারা গুম হয়েছে তাদের সবাইকে জীবিত অথবা মৃত ফেরত দেয়া। তাহলে এরা আপনার জন্য দোয়া করবে।'
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, এখানে এতোগুলো মানুষ দাবি করছে গুম হয়েছে। এই দাবির কথা চিন্তা করে একটি নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করে দেখান। যারা এখানে ছবি হাতে বসে আছে, তারা কি মিথ্যা কথা বলছে? তদন্ত করেন একটা। তদন্ত করে সত্য প্রতিষ্ঠিত করবার চেষ্টা করেন।
অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিশ্বের বিবেককে নাড়া দিতে হবে, এমন মন্তব্য করে বলেন, 'আপনারা এমন বুদ্ধি বের করতে পারেন না, জাতিসংঘের বিবেককে নাড়া দেয়ার জন্য। এমন কোনো বুদ্ধি বের করতে পারেন না যেটার জন্য সমস্ত বিশ্বের বিবেককে নাড়া দিতে পারে এরকম অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে।'
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, 'আমরা এমন একটা রাষ্ট্র চেয়েছি যে রাষ্ট্র আমাদের জীবনের নিরাপত্তা বিধান করবে। কিন্তু খুবই দুর্ভাগ্যজনক, আমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়ার পরে বেঁচে থাকার যে অধিকার সেটাও রাষ্ট্র কেড়ে নিচ্ছে। রাষ্ট্র যখন সন্ত্রাসী হয়ে যায়, তখন মানুষের জন্য এ রাষ্ট্রের কোনো প্রয়োজন থাকে না।'
সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, জাতিসংঘের গুমের ব্যাপারে যে সনদ আছে, সেই সনদের বাংলাদেশ সরকারকে অনতিবিলম্বে স্বাক্ষর করতে হবে, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক গুম বিরোধী টিমকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সরোজমিনে দেখার জন্য অনতিবিলম্বে আমন্ত্রণ জানাতে হবে, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসহ যেসব সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, সব সময় সরকারের পক্ষ থেকে একটি কথা বলা হয়, গুম তো আমরা করিনি। তারা পারিবারিক বিরোধের কারণে আত্মগোপন করেছে। বন্ধুর সাথে ঝগড়া করে আত্মগোপন করেছে। এ ধরনের নির্মম রসিকতা দিনের পর দিন আমাদের সাথে করা হয়।
সরকারের প্রতি তিনটি প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, যদি আপনারা গুম না করে থাকেন, তাহলে গুম হওয়ার সময় অনেক ঘটনায় আপনাদের গাড়ি এবং আপনাদের বাহিনীর লোককে দেখা যায় কেন? যদি আপনারা গুম না করে থাকেন, তাহলে গুম হওয়া পরিবার যখন মামলা করতে যায় তখন মামলা গ্রহণ করেন না কেন? আপনারা যদি গুম না করে থাকেন, তাহলে দশ বছর ক্ষমতায় আছেন কারা গুম করছে সেটা কেন বের করতে পারছেন না?
আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক আকমল হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকিসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা। সম্পাদনা: বিভুরঞ্জন সরকার
আপনার মতামত লিখুন :